নারদীয় ভক্তিসূত্র
১. এখন আমরা ভক্তি বা ঈশ্বরীয় প্রেমের ব্যাখ্যা করিব ।
২. একমাত্র ঈশ্বরের প্রতি পরম প্রেমকে ভক্তি বলে ।
৩. এই স্বর্গীয় প্রেম - তাহার অন্তর্নিহিত প্রকৃতিতে অবিনশ্বর স্বর্গীয় আনন্দ ।
৪. যাহা লাভ করিলে মানব চিরকালের জন্য সিদ্ধ হয়, অমর হয় এবং পরম তৃপ্তি লাভ করে।
৫. যাহা পাইবার পর মানুষ অন্য কিছু পাইবার বাঞ্ছা করেন না, তিনি আর কখনও শোক করেন না, তিনি ঘৃণা ও হিংসা হইতে মুক্ত হন, তিনি জীবনের অসার বস্তুতে আনন্দ লাভ করেন না এবং তিনি কোন বস্তু পাইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন না ।
৬. যে প্রেম লাভ করিলে ভক্ত প্রথমে আনন্দে পাগলের ন্যায় হন, পরে ঈশ্বরের উপলব্ধি হইলে জড়বৎ হন এবং আত্মার আনন্দে বিভোর হন ।
৭. ভক্তি সকল প্রকার বাসনার প্রতিবন্ধকস্বরূপ, তাই বাসনাপূরণের জন্য ভক্তিকে ব্যবহার করা চলে না ।
৮. নিরোধ বা ত্যাগ কথার অর্থ, লৌকিক ও বৈদিক সকল প্রকার কর্ম ঈশ্বরে উংসর্গীকরণ ।
৯. ভক্তের ত্যাগের অর্থ, ভক্তের সর্বান্তঃকরণ ঈশ্বরাভিমুখী করা এবং ভগবৎ-প্রেমের প্রতিবন্ধক বিষয় ও বস্তু পরিহার করা ।
১০. ঐকান্তিক ভক্তির অর্থ - অন্য সকল আশ্রয় ত্যাগ করিয়া ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করা।
১১. ভগবৎ-প্রেমের প্রতিবন্ধক কর্মসমূহ পরিহার করা, অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তির অনুকূল সাংসারিক ও পবিত্র কর্মসমূহের অনুষ্ঠান ।
১২. আধ্যাত্মিক জীবন ঈশ্বরে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত শাস্ত্রবাক্য মানিয়া চলিতে হইবে ।
১৩. অন্যথা করিলে পতিত হইবার আশঙ্কা আছে ।
১৪. লৌকিক কর্ম করা ততদিন প্রয়োজন, যতদিন না ভক্তি পাকা হয়। কিন্তু দেহরক্ষার জন্য সকল কর্ম - যথা পান - ভোজনাদি করিতে হয় ।
১৫. বিভিন্ন মতানুসারে মুনিগণকর্তৃক বিভিন্নভাবে ভক্তির লক্ষণসমূহ বর্ণিত হইয়াছে ।
১৬. পরাশর-পুত্র ব্যাস ভক্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন - পূজাদি ও তদনুরূপ কর্মের প্রতি অনুরাগ ।
১৭. মহর্ষি গর্গের মতে ভক্তির সংজ্ঞা - ঈশ্বরের নাম শ্রবণ ও কীর্তনের প্রতি অনুরাগ ।
১৮. মহর্ষি শান্ডিল্য চিত্তবিক্ষেপকারী চিন্তা ত্যাগ এবং আত্মাতে প্রীতিলাভ করাকে 'ভক্তি' সংজ্ঞা দিয়েছেন ।
১৯. নারদের মতে ভক্তির লক্ষণ - যখন সকল চিন্তা, সকল কথা ও সকল কর্ম ইষ্টপদে সমর্পণ করা হয়, যখন ক্ষণেকের জন্য ইষ্টকে ভুলিলে অবস্থা শোচনীয় হয়, তখন ভক্তির সঞ্চার হয় ।
২০. ভক্তির পরিপূর্ণ প্রকাশের দৃষ্টান্ত আছে ।
২১. যেমন ব্রজগোপীগণের হইয়াছিল ।
২২. ব্রজগোপীগণ কৃষ্ণকে প্রেমিকরূপে পূজা করিলেও তিনি যে স্বয়ং ভগবান্ - এ কথা ভুলিয়া যান নাই ।
২৩. যদি 'কৃষ্ণ যে স্বয়ং ভগবান্' এই জ্ঞান তাঁহাদের না থাকিত, তাহা হইলে তাঁহাদের প্রেম ভ্রষ্টা নারীদের উপপতির প্রতি আসক্তির সমান বলিয়া গন্য হইতো ।
২৪. প্রেমাস্পদের সুখে সুখী হওয়া নয়, কামে শুধু আত্মসুখের বাসনা থাকে ।
২৫. কর্ম, জ্ঞান ও যোগ(রাজযোগ) অপেক্ষা ভক্তি মহত্তর ।
২৬. কেন না, ভক্তি আধ্যাত্মিক জীবনের শেষ পরিণতি ও লক্ষ্য, অন্য পথগুলি মানুষকে এই উপলব্ধির দিকে চালিত করে ।
২৭. অহমিকার প্রতি ঈশ্বরের দ্বেষ এবং দীনতার প্রতি তাঁর প্রীতি থাকার জন্য ভক্তি সর্বোত্তম বলিয়া বিবেচিত হয় ।
২৮. কেহ কেহ মনে করেন, ভক্তিলাভের উপায় জ্ঞান ।
২৯. আবার কাহারও মতে জ্ঞান ও ভক্তি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ।
৩০. নারদের মতে ভক্তি নিজেই নিজের ফলস্বরূপ ।
৩১. ৩২. কেবলমাত্র রাজার বিষয় জানিয়া ও রাজগৃহ দেখিয়া কেহ রাজাকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না । খাদ্যদ্রব্যের গুণাগুণ জানিলে ও খাদ্যদ্রব্য দেখিলেই কাহারও ক্ষুধার শান্তি হয় না। সেইরূপ ভক্তি না আসা পর্যন্ত শুধু ঈশ্বরের জ্ঞান ও ধারণাদ্বারা কেহ সন্তোষলাভ করিতে পারে না ।
৩৩. অতএব, (জন্ম, মৃত্যু, পুনর্জন্ম এই আপেক্ষিক জগতের বিপরীতমুখী অন্যান্য যুগ্মবস্তু সকলের) সীমাবদ্ধ অবস্থার ও বন্ধনের হাত হইতে যাঁহারা মুক্তি চান, তাঁহারা শ্রেষ্ঠ লক্ষ্যরূপে পরাভক্তির আশ্রয় গ্রহণ করিবেন ।
৩৪. আচার্যগণ স্তোত্র ও সঙ্গীতদ্বারা নিম্নলিখিতভাবে প্রেমাভক্তি লাভের উপায়সমূহ বর্ণনা করিয়াছেন ।
৩৫. পরাভক্তি লাভ করিতে হইলে ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয় ত্যাগ করিতে হয় ও তাহার প্রতি আসক্তিও ত্যাগ করিতে হয় ।
৩৬. নিরবচ্ছিন্নভাবে সতত ভগবানের ভজনাদ্বারা পরাভক্তি লাভ হয় ।
৩৭. জীবনের সকল কর্মে নিযুক্ত থেকেও ভগবানের গুণ শ্রবণ ও কীর্তনদ্বারা ভক্তি লাভ হয় ।
৩৮. প্রধানতঃ মহাপুরুষের কৃপায় ভক্তি লাভ হয় ।
৩৯. কিন্তু সাধুসঙ্গ দুর্লভ, কারণ সাধু চিনিতে পারা খুব কঠিন; কিন্তু সাধুসঙ্গ লাভ হইলে তাহার ফল অব্যর্থ ।
৪০. একমাত্র ভগবৎ-কৃপাতেই মহাপুরুষ-সঙ্গ লাভ করা যায় ।
৪১. ভক্ত ও ভগবানে ভেদ নাই ।
৪২. অতএব মহাপুরুষের কৃপালাভের জন্য প্রার্থনা কর ।
৪৩. সর্বপ্রকারে দুঃসঙ্গ ত্যাগ কর ।
৪৪. অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা উচিত, কারণ ইহা কাম, ক্রোধ, মোহ, স্মৃতিভ্রংশ, বুদ্ধিনাশ ও সর্বনাশের কারণ ।
৪৫. কামক্রোধাদি রিপু প্রথম অবস্থায় ক্ষুদ্র তরঙ্গের ন্যায় থাকে, কিন্তু অসৎসঙ্গের ফলে ফলে ইহারা বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের ন্যায় বিশাল আকার ধারণ করে ।
৪৬. মায়াকে কে অতিক্রম করতে পারেন? যিনি সর্বপ্রকার আসক্তি ত্যাগ করেন, যিনি মহাপুরুষগণের সেবা করেন, যিনি 'আমি' ও 'আমার' বোধ হইতে মুক্ত ।
৪৭. যিনি নির্জনে বাস করেন, সংসারের সকল বন্ধন ছিন্ন করেন, যিনি তিনগুণের অতীত হন এবং নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেন ।
৪৮. যিনি কর্মফল ত্যাগ করেন, স্বার্থদুষ্ট সকল কর্ম ত্যাগ করেন এবং দ্বন্দ্বাতীত হন, ( তিনি মায়া অতিক্রম করেন ) ।
৪৯. যিনি শাস্ত্রীয় কর্ম ও অনুষ্ঠানাদিও ত্যাগ করেন এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিচ্ছিন্ন অনুরাগ লাভ করেন, তিনি মায়া অতিক্রম করেন ।
৫০. এইরূপ ভক্ত নিশ্চয়ই মায়ামুক্ত হন এবং অপরকেও মায়ামুক্ত হইতে সাহায্য করেন ।
৫১. প্রেমের স্বরূপ বাক্যদ্বারা প্রকাশ করা যায় না ।
৫২. ইহা বোবা ব্যক্তির রসাস্বাদনের অনুভব প্রকাশ করিবার চেষ্টার মতো ।
৫৩. ( অনির্বচনীয় হইলেও ) এই প্রেম লাভ করিয়াছেন - এইরূপ মহাপুরুষে এই প্রেম প্রকাশ পায় ।
৫৪. এই প্রেম গুনরহিত, ইহা সকল প্রকার স্বার্থপর বাসনামুক্ত। ইহা অনুক্ষন বর্ধনশীল, ইহা অবিচ্ছিন্ন, সূক্ষ্মতম অপেক্ষা সূক্ষ্মতর উপলব্ধি ।
৫৫. ভক্ত যখন এই প্রেম লাভ করেন, তখন তিনি তাঁহার প্রেমাস্পদকে সর্বত্র দর্শন করেন, সর্বত্র তাঁহার বিষয় শ্রবণ করেন, কেবল তাঁহার কথাই বলেন ও তাঁহাকে চিন্তা করেন ।
৫৬. সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ - এই তিনটির যে কোন একটি গুণের মনের উপর প্রাধান্য ভেদে এবং সংসারে বীতরাগ, জ্ঞানান্বেষক ভক্ত ও ঐহিক কামণা পূরণে অভিলাষী ভক্তের ঈশ্বরানুরাগের কারণ ভেদে প্রাথমিক ভক্তি তিন প্রকার ।
৫৭. এই তিন শ্রেণীর ভক্তের মধ্যে প্রথম শ্রেণী শ্রেষ্ঠ, তার পরের শ্রেণী মধ্যম ও তারও পরের শ্রেণী অধম ।
৫৮. অন্য সব পথ অপেক্ষা ভক্তিপথ সহজ ।
৫৯. প্রেম নিজেই প্রমাণস্বরূপ বলিয়া তাহার আর অন্য প্রমাণের প্রয়োজন নাই ।
৬০. ইহার প্রকৃতি শান্তি-স্বরূপ ও পরমানন্দ-স্বরূপ ।
৬১. নিজেকে, নিজের বলিতে সব কিছু বস্তুকে, এমন কি শাস্ত্রীয় আচারাদিকেও ভক্ত ঈশ্বরে সমর্পণ করিয়াছেন, তাই তিনি ব্যক্তিগত ক্ষতিরজন্য শোক করেন না ।
৬২. ঈশ্বরে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা সত্ত্বেও ভক্তের লৌকিক কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়; কিন্তু ঈশ্বরে কর্মফল সমর্পণপূর্বক তিনি কর্ম করিবেন ।
৬৩. কাম, কাঞ্চন ও নাস্তিকতার বিষয়ে আলোচনা শ্রবণ করা উচিত নয় ।
৬৪. অভিমান, দম্ভ ও অনুরূপ দোষ ত্যাগ করিতে হইবে ।
৬৫. তোমার সকল কর্ম ঈশ্বরে সমর্পণ কর এবং কাম, ক্রোধ, অভিমান প্রভৃতি তোমার সকল রিপুকে ঈশ্বরাভিমুখী কর ।
৬৬. তিন প্রকার ভক্তি পার হইয়া নিজেকে ইষ্টের নিত্যদাস বা নিত্যকান্তা ভাবিয়া তাঁহার উপাসনা কর ।
৬৭. তাঁহারাই শ্রেষ্ঠ ভক্ত, যাঁহারা ভগবানকে ঐকান্তিকভাবে ভালবাসেন এবং তাঁহাদের ভালবাসা হয় একমাত্র ভালবাসার জন্যই ভালবাসা ।
৬৮. ভক্ত যখন ঈশ্বরের কথা বলেন, তখন তাঁহার কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়, অশ্রুপাত হয়, উল্লাসে রোমাঞ্চ হয় । এইরূপ ভক্ত শুধু যে তাঁহার বংশকে পবিত্র করেন, তাহা নহে, তাঁহার জন্মভূমিকে,পৃথিবীকেও পবিত্র করেন ।
৬৯. ভগবদ্ভক্ত এইসব ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ তীর্থসমূহকে পবিত্র করেন, তাঁহাদের কৃতকর্ম ই সুকর্মের নিদর্শন, তাঁহারা শাস্ত্রকে সৎ-শাস্ত্রে পরিণত করেন ( নব সমর্থন দেন ) ।
৭০. ভক্তগণের প্রত্যেকেই ঈশ্বরে তন্ময় হন ।
৭১. এইরূপ ভক্ত পৃথিবীতে বাস করিলে তাঁহাদের পিতৃপুরুষগণ আনন্দিত হন, দেবগণ আনন্দে নৃত্য করেন, পৃথিবী পবিত্র হয় ।
৭২. ভক্তগণের মধ্যে জাতি, বিদ্যা, রূপ, কুল, ধন, কর্ম প্রভৃতির জন্য কোন ভেদ নাই ।
৭৩. যেহেতু ভক্তগণ ঈশ্বরের আপন জন ।
৭৪. তর্ক-বিতর্ক অবলম্বন করিবে না ।
৭৫. তর্কের শেষ নাই, সন্তোষজনক কোন ফল তর্কদ্বারা পাওয়া যায় না ।
৭৬. ভক্তিমূলক শাস্ত্রপাঠের সময় শাস্ত্রীয় উপদেশের উপর ধ্যান কর ও উহা অনুসরন কর; ইহার ফলে তোমার হৃদয়ে ভগবদ্ভক্তি বর্ধিত হইবে ।
৭৭. সুখ, দুঃখ, বাসনা, লোভ প্রভৃতি হইতে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভক্তের একমুহূর্তকালও বৃথা যাইতে দেওয়া বা ঈশ্বর উপাসনার জন্য বিলম্ব করা উচিত নয় ।
৭৮. ভক্তের অহিংসা, সত্যবাদিতা, পবিত্রতা, দয়া, বিশ্বাস প্রভৃতি ধর্ম অনুশীলন করা উচিত ।
৭৯. সকল প্রকারে চিত্তবিক্ষেপকর চিন্তারহিত হইয়া দিবারাত্র একমাত্র ভগবানের ভজনা করা কর্তব্য ।
৮০. যেখানে এইভাবে ভগবানের উপাসনা করা হয় সেখানে অতি শীঘ্র ভক্তগণের মানসপটে তিনি প্রকাশিত হন ।
৮১. শাশ্বতসত্যের প্রতি ভক্তি অবশ্যই শ্রেষ্ঠভক্তি ।
৮২. এই দিব্যপ্রেম একাদশটি বিভিন্নরূপে প্রকাশ পায়:
(১) ভক্ত ভগবানের নামগুণগান ও কীর্তন করিতে ভালবাসেন ।
(২) তিনি তাঁহার অতি মনোরম সৌন্দর্য ভালবাসেন ।
(৩) তিনি তাঁহাকে তাঁহার হৃদয়ের পূজা নিবেদন করিতে ভালবাসেন ।
(৪) তিনি তাঁহার উপস্থিতি অবিরাম ধ্যান করিতে ভালবাসেন ।
(৫) তিনি ভগবানের দাস - এই চিন্তা করিতে ভালবাসেন ।
(৬) তিনি তাঁহাকে সখারূপে ভালবাসেন ।
(৭) তিনি তাঁহাকে সন্তানরূপে ভালবাসেন ।
(৮) তিনি তাঁহাকে দয়িত বা প্রিয়তম কান্তরূপে ভালবাসেন ।
(৯) তিনি তাঁহার সম্পূর্ণ শরণাগত হইতে ভালবাসেন ।
(১০) তিনি তাঁহার ভিতর সম্পূর্ণ অভিনিবিষ্ট হইতে ভালবাসেন ।
(১১) তিনি তাঁহার বিরহযন্ত্রণা ভোগ করিতে ভালবাসেন ।
৮৩. ভক্তি-সাধনার আচার্যগণ একমত হইয়া লোকমত গ্রাহ্য না করিয়া এই প্রকার উপদেশ দিয়াছেন । সেইসকল মহান্ আচার্যের নাম: কুমার, ব্যাস, শুক, শাণ্ডিল্য,গর্গ, বিষ্ণু, কৌণ্ডিন্য, শেষ, উদ্ধব, আরুণি, বলি, হনুমান, বিভীষণ এবং আরও অনেক ।
৮৪. যিনি নারদ-বর্ণিত মঙ্গলদায়ক দিব্যপ্রেম বিশ্বাস করেন এবং শ্রদ্ধাসহকারে এই সকল উপদেশে বিশ্বাস স্থাপন করেন, তিনি ভগবৎপ্রেমিক হন, পরমসুখ লাভ করেন এবং জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে উপনীত হন ।
১. এখন আমরা ভক্তি বা ঈশ্বরীয় প্রেমের ব্যাখ্যা করিব ।
২. একমাত্র ঈশ্বরের প্রতি পরম প্রেমকে ভক্তি বলে ।
৩. এই স্বর্গীয় প্রেম - তাহার অন্তর্নিহিত প্রকৃতিতে অবিনশ্বর স্বর্গীয় আনন্দ ।
৪. যাহা লাভ করিলে মানব চিরকালের জন্য সিদ্ধ হয়, অমর হয় এবং পরম তৃপ্তি লাভ করে।
৫. যাহা পাইবার পর মানুষ অন্য কিছু পাইবার বাঞ্ছা করেন না, তিনি আর কখনও শোক করেন না, তিনি ঘৃণা ও হিংসা হইতে মুক্ত হন, তিনি জীবনের অসার বস্তুতে আনন্দ লাভ করেন না এবং তিনি কোন বস্তু পাইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন না ।
৬. যে প্রেম লাভ করিলে ভক্ত প্রথমে আনন্দে পাগলের ন্যায় হন, পরে ঈশ্বরের উপলব্ধি হইলে জড়বৎ হন এবং আত্মার আনন্দে বিভোর হন ।
৭. ভক্তি সকল প্রকার বাসনার প্রতিবন্ধকস্বরূপ, তাই বাসনাপূরণের জন্য ভক্তিকে ব্যবহার করা চলে না ।
৮. নিরোধ বা ত্যাগ কথার অর্থ, লৌকিক ও বৈদিক সকল প্রকার কর্ম ঈশ্বরে উংসর্গীকরণ ।
৯. ভক্তের ত্যাগের অর্থ, ভক্তের সর্বান্তঃকরণ ঈশ্বরাভিমুখী করা এবং ভগবৎ-প্রেমের প্রতিবন্ধক বিষয় ও বস্তু পরিহার করা ।
১০. ঐকান্তিক ভক্তির অর্থ - অন্য সকল আশ্রয় ত্যাগ করিয়া ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করা।
১১. ভগবৎ-প্রেমের প্রতিবন্ধক কর্মসমূহ পরিহার করা, অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তির অনুকূল সাংসারিক ও পবিত্র কর্মসমূহের অনুষ্ঠান ।
১২. আধ্যাত্মিক জীবন ঈশ্বরে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত শাস্ত্রবাক্য মানিয়া চলিতে হইবে ।
১৩. অন্যথা করিলে পতিত হইবার আশঙ্কা আছে ।
১৪. লৌকিক কর্ম করা ততদিন প্রয়োজন, যতদিন না ভক্তি পাকা হয়। কিন্তু দেহরক্ষার জন্য সকল কর্ম - যথা পান - ভোজনাদি করিতে হয় ।
১৫. বিভিন্ন মতানুসারে মুনিগণকর্তৃক বিভিন্নভাবে ভক্তির লক্ষণসমূহ বর্ণিত হইয়াছে ।
১৬. পরাশর-পুত্র ব্যাস ভক্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন - পূজাদি ও তদনুরূপ কর্মের প্রতি অনুরাগ ।
১৭. মহর্ষি গর্গের মতে ভক্তির সংজ্ঞা - ঈশ্বরের নাম শ্রবণ ও কীর্তনের প্রতি অনুরাগ ।
১৮. মহর্ষি শান্ডিল্য চিত্তবিক্ষেপকারী চিন্তা ত্যাগ এবং আত্মাতে প্রীতিলাভ করাকে 'ভক্তি' সংজ্ঞা দিয়েছেন ।
১৯. নারদের মতে ভক্তির লক্ষণ - যখন সকল চিন্তা, সকল কথা ও সকল কর্ম ইষ্টপদে সমর্পণ করা হয়, যখন ক্ষণেকের জন্য ইষ্টকে ভুলিলে অবস্থা শোচনীয় হয়, তখন ভক্তির সঞ্চার হয় ।
২০. ভক্তির পরিপূর্ণ প্রকাশের দৃষ্টান্ত আছে ।
২১. যেমন ব্রজগোপীগণের হইয়াছিল ।
২২. ব্রজগোপীগণ কৃষ্ণকে প্রেমিকরূপে পূজা করিলেও তিনি যে স্বয়ং ভগবান্ - এ কথা ভুলিয়া যান নাই ।
২৩. যদি 'কৃষ্ণ যে স্বয়ং ভগবান্' এই জ্ঞান তাঁহাদের না থাকিত, তাহা হইলে তাঁহাদের প্রেম ভ্রষ্টা নারীদের উপপতির প্রতি আসক্তির সমান বলিয়া গন্য হইতো ।
২৪. প্রেমাস্পদের সুখে সুখী হওয়া নয়, কামে শুধু আত্মসুখের বাসনা থাকে ।
২৫. কর্ম, জ্ঞান ও যোগ(রাজযোগ) অপেক্ষা ভক্তি মহত্তর ।
২৬. কেন না, ভক্তি আধ্যাত্মিক জীবনের শেষ পরিণতি ও লক্ষ্য, অন্য পথগুলি মানুষকে এই উপলব্ধির দিকে চালিত করে ।
২৭. অহমিকার প্রতি ঈশ্বরের দ্বেষ এবং দীনতার প্রতি তাঁর প্রীতি থাকার জন্য ভক্তি সর্বোত্তম বলিয়া বিবেচিত হয় ।
২৮. কেহ কেহ মনে করেন, ভক্তিলাভের উপায় জ্ঞান ।
২৯. আবার কাহারও মতে জ্ঞান ও ভক্তি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ।
৩০. নারদের মতে ভক্তি নিজেই নিজের ফলস্বরূপ ।
৩১. ৩২. কেবলমাত্র রাজার বিষয় জানিয়া ও রাজগৃহ দেখিয়া কেহ রাজাকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না । খাদ্যদ্রব্যের গুণাগুণ জানিলে ও খাদ্যদ্রব্য দেখিলেই কাহারও ক্ষুধার শান্তি হয় না। সেইরূপ ভক্তি না আসা পর্যন্ত শুধু ঈশ্বরের জ্ঞান ও ধারণাদ্বারা কেহ সন্তোষলাভ করিতে পারে না ।
৩৩. অতএব, (জন্ম, মৃত্যু, পুনর্জন্ম এই আপেক্ষিক জগতের বিপরীতমুখী অন্যান্য যুগ্মবস্তু সকলের) সীমাবদ্ধ অবস্থার ও বন্ধনের হাত হইতে যাঁহারা মুক্তি চান, তাঁহারা শ্রেষ্ঠ লক্ষ্যরূপে পরাভক্তির আশ্রয় গ্রহণ করিবেন ।
৩৪. আচার্যগণ স্তোত্র ও সঙ্গীতদ্বারা নিম্নলিখিতভাবে প্রেমাভক্তি লাভের উপায়সমূহ বর্ণনা করিয়াছেন ।
৩৫. পরাভক্তি লাভ করিতে হইলে ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয় ত্যাগ করিতে হয় ও তাহার প্রতি আসক্তিও ত্যাগ করিতে হয় ।
৩৬. নিরবচ্ছিন্নভাবে সতত ভগবানের ভজনাদ্বারা পরাভক্তি লাভ হয় ।
৩৭. জীবনের সকল কর্মে নিযুক্ত থেকেও ভগবানের গুণ শ্রবণ ও কীর্তনদ্বারা ভক্তি লাভ হয় ।
৩৮. প্রধানতঃ মহাপুরুষের কৃপায় ভক্তি লাভ হয় ।
৩৯. কিন্তু সাধুসঙ্গ দুর্লভ, কারণ সাধু চিনিতে পারা খুব কঠিন; কিন্তু সাধুসঙ্গ লাভ হইলে তাহার ফল অব্যর্থ ।
৪০. একমাত্র ভগবৎ-কৃপাতেই মহাপুরুষ-সঙ্গ লাভ করা যায় ।
৪১. ভক্ত ও ভগবানে ভেদ নাই ।
৪২. অতএব মহাপুরুষের কৃপালাভের জন্য প্রার্থনা কর ।
৪৩. সর্বপ্রকারে দুঃসঙ্গ ত্যাগ কর ।
৪৪. অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা উচিত, কারণ ইহা কাম, ক্রোধ, মোহ, স্মৃতিভ্রংশ, বুদ্ধিনাশ ও সর্বনাশের কারণ ।
৪৫. কামক্রোধাদি রিপু প্রথম অবস্থায় ক্ষুদ্র তরঙ্গের ন্যায় থাকে, কিন্তু অসৎসঙ্গের ফলে ফলে ইহারা বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের ন্যায় বিশাল আকার ধারণ করে ।
৪৬. মায়াকে কে অতিক্রম করতে পারেন? যিনি সর্বপ্রকার আসক্তি ত্যাগ করেন, যিনি মহাপুরুষগণের সেবা করেন, যিনি 'আমি' ও 'আমার' বোধ হইতে মুক্ত ।
৪৭. যিনি নির্জনে বাস করেন, সংসারের সকল বন্ধন ছিন্ন করেন, যিনি তিনগুণের অতীত হন এবং নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেন ।
৪৮. যিনি কর্মফল ত্যাগ করেন, স্বার্থদুষ্ট সকল কর্ম ত্যাগ করেন এবং দ্বন্দ্বাতীত হন, ( তিনি মায়া অতিক্রম করেন ) ।
৪৯. যিনি শাস্ত্রীয় কর্ম ও অনুষ্ঠানাদিও ত্যাগ করেন এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিচ্ছিন্ন অনুরাগ লাভ করেন, তিনি মায়া অতিক্রম করেন ।
৫০. এইরূপ ভক্ত নিশ্চয়ই মায়ামুক্ত হন এবং অপরকেও মায়ামুক্ত হইতে সাহায্য করেন ।
৫১. প্রেমের স্বরূপ বাক্যদ্বারা প্রকাশ করা যায় না ।
৫২. ইহা বোবা ব্যক্তির রসাস্বাদনের অনুভব প্রকাশ করিবার চেষ্টার মতো ।
৫৩. ( অনির্বচনীয় হইলেও ) এই প্রেম লাভ করিয়াছেন - এইরূপ মহাপুরুষে এই প্রেম প্রকাশ পায় ।
৫৪. এই প্রেম গুনরহিত, ইহা সকল প্রকার স্বার্থপর বাসনামুক্ত। ইহা অনুক্ষন বর্ধনশীল, ইহা অবিচ্ছিন্ন, সূক্ষ্মতম অপেক্ষা সূক্ষ্মতর উপলব্ধি ।
৫৫. ভক্ত যখন এই প্রেম লাভ করেন, তখন তিনি তাঁহার প্রেমাস্পদকে সর্বত্র দর্শন করেন, সর্বত্র তাঁহার বিষয় শ্রবণ করেন, কেবল তাঁহার কথাই বলেন ও তাঁহাকে চিন্তা করেন ।
৫৬. সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ - এই তিনটির যে কোন একটি গুণের মনের উপর প্রাধান্য ভেদে এবং সংসারে বীতরাগ, জ্ঞানান্বেষক ভক্ত ও ঐহিক কামণা পূরণে অভিলাষী ভক্তের ঈশ্বরানুরাগের কারণ ভেদে প্রাথমিক ভক্তি তিন প্রকার ।
৫৭. এই তিন শ্রেণীর ভক্তের মধ্যে প্রথম শ্রেণী শ্রেষ্ঠ, তার পরের শ্রেণী মধ্যম ও তারও পরের শ্রেণী অধম ।
৫৮. অন্য সব পথ অপেক্ষা ভক্তিপথ সহজ ।
৫৯. প্রেম নিজেই প্রমাণস্বরূপ বলিয়া তাহার আর অন্য প্রমাণের প্রয়োজন নাই ।
৬০. ইহার প্রকৃতি শান্তি-স্বরূপ ও পরমানন্দ-স্বরূপ ।
৬১. নিজেকে, নিজের বলিতে সব কিছু বস্তুকে, এমন কি শাস্ত্রীয় আচারাদিকেও ভক্ত ঈশ্বরে সমর্পণ করিয়াছেন, তাই তিনি ব্যক্তিগত ক্ষতিরজন্য শোক করেন না ।
৬২. ঈশ্বরে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা সত্ত্বেও ভক্তের লৌকিক কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়; কিন্তু ঈশ্বরে কর্মফল সমর্পণপূর্বক তিনি কর্ম করিবেন ।
৬৩. কাম, কাঞ্চন ও নাস্তিকতার বিষয়ে আলোচনা শ্রবণ করা উচিত নয় ।
৬৪. অভিমান, দম্ভ ও অনুরূপ দোষ ত্যাগ করিতে হইবে ।
৬৫. তোমার সকল কর্ম ঈশ্বরে সমর্পণ কর এবং কাম, ক্রোধ, অভিমান প্রভৃতি তোমার সকল রিপুকে ঈশ্বরাভিমুখী কর ।
৬৬. তিন প্রকার ভক্তি পার হইয়া নিজেকে ইষ্টের নিত্যদাস বা নিত্যকান্তা ভাবিয়া তাঁহার উপাসনা কর ।
৬৭. তাঁহারাই শ্রেষ্ঠ ভক্ত, যাঁহারা ভগবানকে ঐকান্তিকভাবে ভালবাসেন এবং তাঁহাদের ভালবাসা হয় একমাত্র ভালবাসার জন্যই ভালবাসা ।
৬৮. ভক্ত যখন ঈশ্বরের কথা বলেন, তখন তাঁহার কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়, অশ্রুপাত হয়, উল্লাসে রোমাঞ্চ হয় । এইরূপ ভক্ত শুধু যে তাঁহার বংশকে পবিত্র করেন, তাহা নহে, তাঁহার জন্মভূমিকে,পৃথিবীকেও পবিত্র করেন ।
৬৯. ভগবদ্ভক্ত এইসব ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ তীর্থসমূহকে পবিত্র করেন, তাঁহাদের কৃতকর্ম ই সুকর্মের নিদর্শন, তাঁহারা শাস্ত্রকে সৎ-শাস্ত্রে পরিণত করেন ( নব সমর্থন দেন ) ।
৭০. ভক্তগণের প্রত্যেকেই ঈশ্বরে তন্ময় হন ।
৭১. এইরূপ ভক্ত পৃথিবীতে বাস করিলে তাঁহাদের পিতৃপুরুষগণ আনন্দিত হন, দেবগণ আনন্দে নৃত্য করেন, পৃথিবী পবিত্র হয় ।
৭২. ভক্তগণের মধ্যে জাতি, বিদ্যা, রূপ, কুল, ধন, কর্ম প্রভৃতির জন্য কোন ভেদ নাই ।
৭৩. যেহেতু ভক্তগণ ঈশ্বরের আপন জন ।
৭৪. তর্ক-বিতর্ক অবলম্বন করিবে না ।
৭৫. তর্কের শেষ নাই, সন্তোষজনক কোন ফল তর্কদ্বারা পাওয়া যায় না ।
৭৬. ভক্তিমূলক শাস্ত্রপাঠের সময় শাস্ত্রীয় উপদেশের উপর ধ্যান কর ও উহা অনুসরন কর; ইহার ফলে তোমার হৃদয়ে ভগবদ্ভক্তি বর্ধিত হইবে ।
৭৭. সুখ, দুঃখ, বাসনা, লোভ প্রভৃতি হইতে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভক্তের একমুহূর্তকালও বৃথা যাইতে দেওয়া বা ঈশ্বর উপাসনার জন্য বিলম্ব করা উচিত নয় ।
৭৮. ভক্তের অহিংসা, সত্যবাদিতা, পবিত্রতা, দয়া, বিশ্বাস প্রভৃতি ধর্ম অনুশীলন করা উচিত ।
৭৯. সকল প্রকারে চিত্তবিক্ষেপকর চিন্তারহিত হইয়া দিবারাত্র একমাত্র ভগবানের ভজনা করা কর্তব্য ।
৮০. যেখানে এইভাবে ভগবানের উপাসনা করা হয় সেখানে অতি শীঘ্র ভক্তগণের মানসপটে তিনি প্রকাশিত হন ।
৮১. শাশ্বতসত্যের প্রতি ভক্তি অবশ্যই শ্রেষ্ঠভক্তি ।
৮২. এই দিব্যপ্রেম একাদশটি বিভিন্নরূপে প্রকাশ পায়:
(১) ভক্ত ভগবানের নামগুণগান ও কীর্তন করিতে ভালবাসেন ।
(২) তিনি তাঁহার অতি মনোরম সৌন্দর্য ভালবাসেন ।
(৩) তিনি তাঁহাকে তাঁহার হৃদয়ের পূজা নিবেদন করিতে ভালবাসেন ।
(৪) তিনি তাঁহার উপস্থিতি অবিরাম ধ্যান করিতে ভালবাসেন ।
(৫) তিনি ভগবানের দাস - এই চিন্তা করিতে ভালবাসেন ।
(৬) তিনি তাঁহাকে সখারূপে ভালবাসেন ।
(৭) তিনি তাঁহাকে সন্তানরূপে ভালবাসেন ।
(৮) তিনি তাঁহাকে দয়িত বা প্রিয়তম কান্তরূপে ভালবাসেন ।
(৯) তিনি তাঁহার সম্পূর্ণ শরণাগত হইতে ভালবাসেন ।
(১০) তিনি তাঁহার ভিতর সম্পূর্ণ অভিনিবিষ্ট হইতে ভালবাসেন ।
(১১) তিনি তাঁহার বিরহযন্ত্রণা ভোগ করিতে ভালবাসেন ।
৮৩. ভক্তি-সাধনার আচার্যগণ একমত হইয়া লোকমত গ্রাহ্য না করিয়া এই প্রকার উপদেশ দিয়াছেন । সেইসকল মহান্ আচার্যের নাম: কুমার, ব্যাস, শুক, শাণ্ডিল্য,গর্গ, বিষ্ণু, কৌণ্ডিন্য, শেষ, উদ্ধব, আরুণি, বলি, হনুমান, বিভীষণ এবং আরও অনেক ।
৮৪. যিনি নারদ-বর্ণিত মঙ্গলদায়ক দিব্যপ্রেম বিশ্বাস করেন এবং শ্রদ্ধাসহকারে এই সকল উপদেশে বিশ্বাস স্থাপন করেন, তিনি ভগবৎপ্রেমিক হন, পরমসুখ লাভ করেন এবং জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে উপনীত হন ।
No comments:
Post a Comment