Thursday 19 July 2018

108 Names of Sri Sharadama

ত্বং মে ব্রহ্মসনাতনী মা।১।।
ব্রহ্মশক্তিময়-রুপিনী মা।২।।
সচ্চিৎ সুখযুত রূপিণী মা।।৩।।
সহস্রার-শিবসঙ্গিনী মা।।৪।।
অগাধলীলা-রূপিনী মা।।৫।।
চিন্ময়রূপ-বিলাসিনী মা।।৬।।
১। মা! (স্বরূপত) তুমি নিত্যা(শুদ্ধা) ব্রহ্মরূপিনী।
২। মা! ব্রহ্ম ও তদ্ভিন্ন শক্তিও তোমারি রূপ।
৩। মা! তুমি সচ্চিদানন্দরূপিনী।
৪। মা! তুমি সহস্রারে পরমশিব সহ বিরাজিতা!
৫। মা! তোমার নানা লীলাবিগ্রহ বুদ্ধির অগম্য!
৬। মা! তুমি চিন্ময়ীরূপে বিবিধ বিলাসকারিণী!
আদ্যাশক্তি-লীলাময়ী মা। ৭।।
চিতসুখদায়িনি-তারিণি মা।।৮।।
দুর্গতি- দুর্মতি-নাশিনি মা।।৯।।
মহাকালহৃদি- নতিনি মা।।১০।।
জয়রামবাটি- ধৃতজনি মা।।১১।।
ধর্মগ্লানিবিনাশিনি মা।।১২।।
৭। মা তুমি আদ্যাশক্তিরূপে লীলাচঞ্চলা!
৮। মা তুমি আশ্রিতের জ্ঞান ও সুখপ্রদায়িনী ও পরিত্রাণকারিণি।
৯। মা তুমি শরণাগতের অধোগতি ও অশুভবুদ্ধিদূরকারিণি!
১০। মা তুমি মহাকালের হৃদয়ে নৃত্যশীলা!
১১। মা তুমি পুণ্য জয়রামবাটী গ্রামে আবির্ভূত হয়েছিলে।
১২। মা তুমি ধর্মের গ্লানি বিনাশকারিনী!
আশ্রিতা-শ্যামাসুন্দরি মা।।১৩।।
রামচন্দ্র-দ্বিজ- দুহিতা মা।।১৪।।
মার্গশীর্ষতিথি-পাবনি মা।।১৫।।
অসিত-সপ্তমী-জননী মা।।১৬।।
ক্ষেমঙ্করী-পদভূষিতা মা।।১৭।।
বিশ্বমঙ্গলাগমনা মা।।১৮।।
১৩। মা তুমি জননী শ্যামাসুন্দরীর গর্ভে আবির্ভূতা হয়েছিলে!
১৪।মা তুমি দ্বিজবর পিতা রামচন্দ্রের কন্যারূপে লীলা-বিগ্রহ ধারণ করেছিলে।
১৫। মা! তুমি শুভ অগ্রহায়ণ মাসকে ( নিজ আবির্ভাবের দ্বারা) পবিত্র করেছ!
১৬। মা! তুমি কৃষ্ণাসপ্তমী তিথিতে প্রকটিত হয়েছিলে।
১৭। মা তুমি ক্ষেমঙ্করী ( সর্বশুভদায়িনী) নামে অলংকৃত হয়েছিলে।
১৮। মা! জগতের কল্যাণের জন্যেই তোমার আগমন!
রামকৃষ্ণসহধর্মিণী মা।১৯।।
পঞ্চবর্ষ পরিণীতা মা।।২০।।
ধর্মস্থাপনকারিণী মা।।২১।।
রম্যসরল-পথদরশিনি মা।।২২।।
মাতৃভাব-পরিশোধিনি মা।।২৩।।
ভক্তহৃদয়-অধিবাসিনী মা।।২৪।।
১৯।মা তুমি শ্রীরামকৃষ্ণের সহধর্মিণী।
২০।মা তুমি পাঁচ বছর বয়সকালে পরিনীতা হয়েছিলে।
২১।মা তুমি ধর্মস্থাপনকারিণী।
২২।মা তুমি সকলকে মনোরম ভাব ও সরল সাধন পথ প্রদর্শন করেছ!
২৩।মা তুমি শুদ্ধ মাতৃভাব জগতে প্রকাশ করেছো!
২৪। মা তুমি (সদা শুদ্ধ) ভক্তহৃদয়ে নিবাস করে থাকো!
জনক-জননী-সুখবরধিনি মা।।২৫।।
দুঃখ-দলিত- জননন্দিনি মা।২৬।।
জগদ্ধাত্রী-নিজরূপিনি মা।।২৭।।
সিংহবাহিনী-পুজিনি মা।।২৮।।
শ্রুতপতি-সাধন-নিরতা মা।।২৯।।
তৎসন্দর্শন-কৃত-মতি মা।।৩০।।
২৫।মা তুমি স্বীয় জনক-জননীর সুখবর্ধন করেছ!
২৬। মা তুমি দুঃখ-নিপীড়িত জনগনকে আনন্দ দিয়ে থাক!
২৭। মা তুমি নিজরূপে সর্বজগতের পালনকর্ত্রী !
২৮। মা তুমি সিংহবাহিনী দেবীকে পূজা করেছিলে।
২৯। মা পতির অলৌকিক দিব্য সাধনের কথা শুনে তুমিও তাঁর চিন্তায় মগ্ন হয়েছিলে।
৩০। মা তুমি পতি সন্দর্শনের জন্যে দৃঢ়নিশ্চয় করেছিলে।
রামকৃষ্ণকৃত-স্বাগতি মা।।৩১।।
পতি-অবলোকন-পুলকিনি মা।।৩২।।
রামকৃষ্ণ-শরণাগতি মা।।৩৩।।
সাধক-পতি-সেবারতি মা।।৩৪।।
‘সরস্বতী’-ইতি লক্ষীণি মা।।৩৫।।
জ্ঞান-দান-শুভ-আগতি মা।।৩৬।।
৩১। মা! তুমি যখন (পিতৃগৃহ থেকে দক্ষিণেশ্বর)এসেছিলে, তোমাকে শ্রীরামকৃষ্ণদেব সাদরে অভ্যর্থনা করেছিলেন।
৩২।মা! পতি সন্দর্শনে তুমি পুলকিতা হয়েছিলে।
৩৩। মা! তুমি শ্রীরামকৃষ্ণের শরণাগত হয়েছিলে।
৩৪। মা! সাধনরত পতির সেবায় তুমি মনোনিবেশ করেছিলে।
৩৫।মা! (শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন) জ্ঞানদাত্রী সরস্বতীরূপে তুমি জগতে অবতীর্ণ হয়েছ!
৩৬। মা! (সকলকে) জ্ঞানদান করবার জন্যেই তোমার শুভ আগমন!
নারায়ণলক্ষী-জনি মা।৩৭।।
শিবপার্বতীসম-উপমিত মা।।৩৮।।
রামচন্দ্রপ্রিয়-জানকী মা।।৩৯।।
কৃষ্ণচন্দ্র-রাধা-সম মা।।৪০।।
নিশীথ সময়- ধ্যায়িনি মা।।৪১।।
লক্ষজপজ্জল-সেবিনি মা।।৪২।।
৩৭।মা! তুমি নারায়ণের সহচরী লক্ষীরূপিনী।
৩৮।মা! তুমি শিবের সঙ্গিনী পার্বতীতুল্যা!
৩৯।মা! তুমি শ্রীরামচন্দ্রের প্রিয় জানকী-সদৃশা!
৪০। মা তুমি শ্রীকৃষ্ণবল্লভা রাধারাণী।
৪১।মা! তুমি গভীর রাতে ধ্যানমগ্ন থাকতে।
৪২। মা! তুমি নিত্য লক্ষ সংখ্যক জপ সমাপনান্তে জলগ্রহণ করতে।
পতিসেবোত্তম-রতিনী মা।।৪৩।।
পতিমনুভোজনমনুভোজিনি মা।।৪৪।।
কঠিনতপাবৃত-মানস মা।।৪৫।।
পূজিল- ষোড়শীরূপিনী মা।।৪৬।।
চরণার্পিত-পতি-জপতপ মা।।৪৭।।
দিব্যভাবভূত-তন্ময় মা।।৪৮।।
৪৩।মা তুমি পতিসেবারূপ উত্তম ব্রত গ্রহণ ও পালন করেছিলে।
৪৪।মা! তুমি পতির ভোজনান্তর ভোজ্য গ্রহণ করতে।
৪৫। মা তুমি দুশ্চর সাধনায় মনোনিবেশ করেছিলে।
৪৬।মা! (শ্রীরামকৃষ্ণ কর্তৃক) তুমি ষোড়শীরূপে পূজিতা হয়েছিলে।
৪৭। মা! পতি পতি শ্রীরামকৃষ্ণ স্বীয় সর্ব জপতপের ফল তোমার শ্রীচরণে অর্পণ করেছিলেন।
৪৮। মা! তুমি (ষোড়শী পূজাকালে) দিব্যভাবাবেশে তন্ময় হয়েছিলে।
ত্যাগে গৌরব-বর্ধিনি মা।।৪৯।।
লজ্জাপটাবৃতেসারদে মা।।৫০।।
রামকৃষ্ণজন-সেবিনি মা।।৫১।।
নরেন্দ্র-দর্শন হরষিনি মা।।৫২।।
আশ্রিত-সন্ততি-তোষিণি মা।।৫৩।।
সেবাতপ-সম্মেলনি মা।।৫৪।।
৪৯। মা! তুমি সর্বদা ত্যাগের গৌরব বর্ধন করেছ!
৫০। মা! সারদা! তুমি সদাই লজ্জারূপ পটে আবৃত হয়ে থাকতে।
৫১। মা! তুমি শ্রীরামকৃষ্ণের ভক্তজনের সেবায় সদা ততপর!
৫২।মা!নরেন্দ্রকে দেখে তুমি আনন্দিতা হতে।
৫৩।মা! শরণাগত সন্তানগণের তুমি সদা সন্তোষ বিধান করো ।
৫৪। মা! তোমার জীবনে সেবা ও তপস্যার মধুর মিলন ঘটেছিলো!
আচন্ডাল-সকরুণা মা।।৫৫।।
করামলমুক্তিকারি মা।।৫৬।।
ধৃত নিজকালীরূপিনী মা।।৫৭।।
দস্যুপরি-অনুকম্পিনি মা।।৫৮।।
পতিবিয়োগ-সন্তপ্তা মা।।৫৯।।
তদ-দর্শনক্রিত-সান্ত্বনি মা।।৬০।।
৫৫। মা! আচন্ডাল সকলের অপরেই তোমার করুণা বর্ষিত হয়েছে।
৫৬।মা! তুমি করস্থিত আমলকী ফলের ন্যায় প্রত্যক্ষ মুক্তিদায়িনী।
৫৭। মা! তুমি নিজের কালীরূপ ধারণ করেছিলে!
৫৮। মা! দস্যুর উপরেও তোমার অনুকম্পা বর্ষিত হয়েছিল।
৫৯।মা! তুমি পতিবিয়োগে নিরতিশয় সন্তপ্তা হয়েছিলে।
৬০।মা! তুমি তাঁর অলৌকিক দিব্য দর্শন লাভ করে সান্ত্বনা পেয়েছি্লে।
বৃন্দাবন-তপশ্চরণা মা।।৬১।।
কৃষ্ণভাব-পরিমগ্না মা।।৬২।।
পঞ্চতপঃ-কৃতসাধনি মা।।৬৩।।
নীলাচল-তপবাসিনি মা।।৬৪।।
রামেশ্বর-শিবপূজনি মা।।৬৫।।
বিশ্বনাথ-ভাবস্থিতা মা।।৬৬।।
৬১।মা! তুমি বৃন্দাবনে কঠোর তপশ্চর্যা করেছিলে।
৬২। মা! তুমি (বৃন্দাবনে) কৃষ্ণচিন্তায় নিমগ্ন হয়েছিলে।
৬৩। মা! তুমি কঠোর পঞ্চতপা-সাধন অনুষ্ঠান করেছিলে।
৬৪। মা! নীলাচলেও তুমি কত তপস্যা করেছিলে!
৬৫।মা! রামেশ্বরে তুমি দেবাদিদেব মহাদেবের সযত্নে পূজা করেছিলে।
৬৬। মা! কাশীতে শ্রীবিশ্বনাথের চিন্তায় তুমি বিভোর হয়েছিলে,।।
অবিমুক্ত কাশী মত মা।।৬৭।।
কীটোহ্যপি মুক্তো মতি মা।।৬৮।।
গঙ্গা-প্রীতিকারিণি মা।।৬৯।।
তদ্বিলীন-পতি-দরশিনি মা।।৭০।।
সকলদেব-সম-দরশিনি মা।।৭১।।
আশ্রিত-করুণা-কারিণি মা।।৭২।।
৬৭। মা! কাশী “অবিমুক্ত ক্ষেত্র” (মোক্ষক্ষেত্র)- একথা তুমি ঘোষণা করেছিলে।
৬৮। মা! (কাশীতে মরণান্তর সামান্য) কীটও মুক্ত হয়- তুমি বলেছিলে।
৬৯। মা! দেবনদী গঙ্গার প্রতি তোমার অতিশয় প্রীতি ছিল।
৭০। মা! পতি শ্রীরামকৃষ্ণ গঙ্গার সাথে মিলিত হয়ে গেলেন- তুমি এই দিব্যদর্শন করেছ।
৭১। মা! তুমি সকলদেবগণকেই তুল্য রূপে দেখতে।
৭২। মা! শরণাগতজনের প্রতি তোমার করুণা সদা বর্ষিত হত!
ভক্তিজ্ঞানবিধায়িনি মা।।৭৩।।
সর্বজ্ঞানাশ্রয়দায়িনি মা।।৭৪।।
জনতাপত্রয়বারিণি মা।।৭৫।।
রামকৃষ্ণ সঙ্ঘেশ্বরী মা।।৭৬।।
বিরিঞ্চিশঙ্কর-বন্দিনি মা।।৭৭।।
জগজ্জননি জয়দায়িনি মা।।৭৮।।
৭৩। মা! তুমি ভক্তি ও জ্ঞানপ্রদায়িনি।
৭৪। মা! তুমি সকল প্রাণীকেই আশ্রয় দান করেছ।
৭৫।মা! তুমি সর্বজীবের তাপত্রয় নিবারণ করেছ!
৭৬। মা! তুমি শ্রীরামকৃষ্ণ সঙ্ঘের চালয়িত্রী।
৭৭। মা! ব্রহ্মা-শঙ্করও তোমার বন্দনায় সদা তৎপর !
৭৮। মা! তুমি জগজ্জননী, তুমিই সকলকে বিজয় প্রদান করে থাক।!
হৃদগত-রামকৃষ্ণ-মতি মা।।৭৯।।
সাক্ষাৎ-বাণী-রুপিণি মা।।৮০।।
রামকৃষ্ণ-পর-প্রাণা মা।।৮১।।
শুদ্ধজ্ঞান-প্রদায়িনি মা।।৮২।।
মাতৃভাব-পরিচারিণি মা।।৮৩।।
প্রাণি-মাতৃপদধারিণি মা।।৮৪।।
৭৯। মা! তুমি হৃদয়ে সদা শ্রীরামকৃষ্ণের চিন্তায় মগ্ন।
৮০। মা! তুমি সাক্ষাৎ সরস্বতী-রুপিণী।
৮১। মা! শ্রীরামকৃষ্ণই তোমার প্রাণের প্রাণ ছিলেন।
৮২। মা! তুমি বিমল জ্ঞান প্রদান করে থাকো।
৮৩। মা! মাতৃভাবে তুমি সকলের পরিচর্যা করেছ।
৮৪। মা! তুমি প্রাণী মাত্রেরই “মা” ছিলে।
জন-সংসৃতি-পদধারিণি মা।।৮৫।।
ক্ষান্তি-মহাগুণ-ব্যাপিনি মা।।৮৬।।
কান্তিবরাভয়-দায়িনি মা।।৮৭।।
দশ-মহাবিদ্যা-রুপিনি মা।।৮৮।।
প্রেমানন্দ-সুবর্ষিণী মা।।৮৯।।
সদ্গতি-সম্মতি-কারিণি মা।।৯০।।
৮৫। মা! তুমি সকলের সংসার-ভয় হরণ করেছ।
৮৬। মা! তুমি ক্ষমা প্রভৃতি আদি মহৎ গুণের আধার ছিলে।
৮৭। মা!তুমি কান্তি,বর ও অভয় প্রদান করে থাক।
৮৮। মা! তুমি দশমহাবিদ্যারূপিনী।
৮৯। মা! তুমি সর্বত্র প্রেম ও আনন্দ বর্ষণ করে থাক।
৯০। মা! তুমি সকলের শুভ মতি প্রদান করে থাকো।
দুর্বলজন-বলদায়িনি মা।।৯১।।
দুখ-দৈন্যভয়-নাশিনি মা।।৯২।।
বিদ্যাভক্তি-বিধারিণি মা।।৯৩।।
শাঙ্করি-মুক্তি-প্রদায়িনি মা।।৯৪।।
সারদে পতিত পাবনী মা।।৯৫।।
শোকতাপ-পরিহারিণি মা।।৯৬।।
৯১। মা! তুমি দুর্বল চিত্তে বল প্রদান করে থাকো।
৯২। মা! তুমি সর্বদুঃখ ও দৈন্যভয় নাশ করে থাকো।
৯৩। মা! তুমি সর্ববিদ্যা ও ভক্তির আধার!
৯৪। মা! তুমি কৈবল্যমুক্তি প্রদান করে থাকো।
৯৫। মা সারদে! তুমি পতিত পাবনী।
৯৬। মা! তুমি সকলের শোক ও তাপ হরণ করে থাকো!
খ্রিষ্টনিবেদিতা-তারিণি মা।।৯৭।।
আমজাদমহম্মদ-পাবনি মা।।৯৮।।
ক্রোড়-অভাজন-দায়িনি মা।।৯৯।।
ভক্তিপ্রেম-প্রদায়িনি মা।।১০০।।
সর্বদেবদেবঋষি-পূজিতা মা।।১০১।।
শুভদে মোক্ষদে সারদে মা।।১০২।।
৯৭। মা! খৃষ্টানবংশজাত নিবেদিতাকে তুমি গ্রহণ করেছিলে।
৯৮। মা! ইসলাম বংশীয় (দস্যু) আমজাদকেও তুমি শুদ্ধ ও পবিত্র করেছিলে।
৯৯। মা! ভাগ্যহীন সকলকেই তুমি সাদরে ক্রোড়ে গ্রহণ করেছো!
১০০। মা! তুমি সদাই ভক্তি ও প্রেম বিতরণ করে থাকো!
১০১। মা! সর্বদেব ও ঋষিগণ তোমার বন্দনা করে থাকেন।
১০২। মা! হে,মোক্ষদায়িনী মা সারদে! তুমি সকলেরই কল্যাণকারিণি।
মাতৃনাম-শিক্ষাপ্রদ মা।।১০৩।।
ভবসাগর-পারতরণী মা।।১০৪।।
নির্গুণসুত-অনুকম্পিনি মা।।১০৫।।
সচ্চিদ-সুখনিধিরূপিণি মা।।১০৬।।
রামকৃষ্ণ- চিতিলীনা মা।।১০৭।।
আনন্দধাম-প্রস্থিতা মা।।১০৮।।
জয়তু সারদা জয় জয় মা! জয়তু সারদা জয় জয় মা!
রামকৃষ্ণ জয় সারদা মা। রামকৃষ্ণ জয় সারদা মা।
১০৩। মা ! তুমি সকলকে পবিত্র মা নাম শিক্ষা দিয়েছো!
১০৪। মা! তুমি ভবসাগর পার হবার নৌকা সদৃশ।
১০৫। মা! তুমি গুণহীন পুত্রকেও অনুকম্পা করে থাক।
১০৬। মা! তুমি সচ্চিদানন্দনিধি স্বরূপা।
১০৭। মা! তুমি শ্রীরামকৃষ্ণ চৈতন্য সাগরে বিলীন হয়েছিলে।
১০৮! স্বকীয় আনন্দস্বরূপে তুমি একীভুত হয়েছিলে মা!
মা সারদে তোমার জয় হোক,তোমার জয় হোক!
রামকৃষ্ণ ও সারদার জয় হোক।!
রামকৃষ্ণ ও সারদার জয় হোক।!
জয় মহামায়ী কি জয়!

Wednesday 27 December 2017

Chanti Path Chapter 3 শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী তৃতীয় অধ্যায়

শ্রী চণ্ডী মাহাত্য
।। শ্রীদুর্গাকে প্রণাম ।।
শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী
তৃতীয় অধ্যায়
সেনাপতিগণসহ মহিষাসুরকে বধ
ধ্যান :-
দেবী জগদম্বার শ্রীঅঙ্গের কান্তি উদয়কালীন সহস্র সূর্যের মত। তাঁর পরণে রক্তবর্ণ কৌষেয় বস্ত্র। তিনি নরমুণ্ডমালিনী, তাঁর স্তনযুগল রক্তরঞ্জিত, চার কমলহস্তে অক্ষমালা, বিদ্যা ও অভয় তথা বরমুদ্রাধারিণী। তাঁর মুখমণ্ডল ত্রিনয়নে শোভিত ও কমলবৎ সুন্দর। তাঁর মাথায় চন্দ্রের সাথে রত্নময় মুকুট এবং তিনি কমলাসনে অবস্থিতা। সেই দেবীকে আমি ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি ।।
মেধা ঋষি বললেন - ।।১।।
অসুরসেনাদের এই রকম তছনছ অবস্থা দেখে সেনাপতি চিক্ষুর ক্রোধে আরক্ত হয়ে অম্বিকা দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে এগিয়ে এল ।।২।।
মেঘ যেমন সুমেরু পর্বতের চুড়াকে বারিধারায় আচ্ছন্ন করে, সেই চিক্ষুরাসুরও সেই রকম ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বাণ বৃষ্টি করতে লাগল ।।৩।।
অনন্তর দেবী স্বীয় বাণের দ্বারা চিক্ষুরের বাণসকল অনায়াসেই ছেদন করে তার রথের সারথি ও অশ্বগুলিকেও বধ করলেন ।।৪।।
সাথে সাথে তার ধনু এবং অতি উচ্চ রথধ্বজা কেটে দিলেন। পরে ধনুকহীন সেই অসুরের সর্বাঙ্গ বাণ দ্বারা বিদ্ধ করলেন ।।৫।।
ধনুক, রথ, অশ্ব ও সারথিবিহীন হয়ে সেই অসুর খড়্গ ও ঢাল নিয়ে দেবীর প্রতি ধাবিত হল ।।৬।।
তীক্ষ্নধার খড়্গ দিয়ে সিংহের মস্তকে আঘাত দিয়ে, দেবীরও বাম হাতে মহাবেগে খড়্গপ্রহার করল ।।৭।।
রাজন্! দেবীর বাহুতে লেগে সেই খড়্গ টুকরো টুকরো হয়ে গেল দেখে রক্তচক্ষু হয়ে সেই অসুর শূল গ্রহণ করল ।।৮।।
অনন্তর সেই মহাসুর ওই শূলটা ভগবতী ভদ্রকালীর দিকে নিক্ষেপ করল। সেই শূলটী আকাশে ওঠামাত্র সূর্যমণ্ডলের মত নিজের তেজে জ্বলে উঠল ।।৯।।
সেই শূলকে নিজের দিকে আসতে দেখে দেবীও তাঁর নিজের শূল নিক্ষেপ করলেন। দেবীর শূলে মহাসুরের শূল শতটুকরা হয়ে গেল এবং সেই সাথে মহাসুর চিক্ষুরও শতধা বিদীর্ণ হয়ে গেল ।।১০।।
মহিষাসুরের সেনাপতি মহাপরাক্রমশালী চিক্ষুর নিহত হলে দেবশত্রু চামর হাতীর পিঠে চড়ে যুদ্ধ করতে এল। সেও এসে দেবীর প্রতি শক্তি অস্ত্র প্রয়োগ করল কিন্তু জগদম্বা হুঙ্কারনাদে তাকে প্রতিহত এবং নিষ্প্রভ করে ভূতলে নিপাতিত করলেন ।।১১-১২।।
শক্তি অস্ত্রকে ভগ্ন এবং ভূপাতিত দেখে চামরাসুর খুবই ক্রুদ্ধ হল। সে তখন শূল নিক্ষেপ করল কিন্তু সেই শূলও দেবী বাণ দিয়ে কেটে দিলেন ।।১৩।।
তখন দেবীবাহন সিংহ হাতীর মাথার উপরে চড়ে বসল এবং সেই অসুরের সঙ্গে প্রচণ্ড বাহুযুদ্ধ করতে লাগল ।।১৪।।
দুজনে যুদ্ধ করতে করতে মাটীতে নেমে এল এবং ভীষণ ক্রোধের সাথে পরস্পরকে অতি দারুণ আঘাত করে যুদ্ধ করতে লাগল ।।১৫।।
তারপর সিংহ ভীষণ বেগে আকাশের দিকে লাফিয়ে উঠলেন এবং সবেগে নীচে নামার সময় করাঘাতে চামরের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন ।।১৬।।
এইভাবে শিলা ও বৃক্ষের আঘাতে রণভূমিতে দেবী উদগ্রাসুরকে বধ করলেন এবং দন্ত, মুষ্টি ও চপেটাঘাতে করালাসুর ধরাশায়ী হল ।।১৭।।
ক্রুদ্ধা হয়ে দেবী গদাঘাতে উদ্ধতাসুরকে, ভিন্দিপাল দিয়ে বাস্কলাসুরকে এবং বাণাঘাতে তাম্রাসুর ও অন্ধকাসুরকে চূর্ণবিচূর্ণ করলেন ।।১৮।।
ত্রিনয়না পরমেশ্বরী ত্রিশূল দিয়ে উগ্রাস্য, উগ্রবীর্য ও মহাহনু নামক অসুরদের বধ করলেন ।।১৯।।
তরোয়াল দিয়ে বিড়ালাসুরের শরীর থেকে মস্তক ছিন্ন করে ফেললেন। দুর্ধর ও দুর্মুখ - এই দুই অসুরকেও নিজের বাণ দ্বারা যমালয়ে পাঠিয়ে দিলেন ।।২০।।
এইভাবে নিজের সৈন্যদের বিনষ্ট হতে দেখে মহিষাসুর মহিষের রূপ ধারণ করে দেবীর সৈন্যদের ভীতি সঞ্চার করতে লাগল ।।২১।।
কাউকে নিজের মুখ দিয়ে আঘাত করে, কিছু সৈন্যকে খুরপ্রহারে, কাউকে কাউকে লেজের আঘাতে, কাউকে কাউকে আবার শিং এর আঘাতে বিদীর্ণ করে। কিছু সৈন্যদের দ্রুতগতির দ্বারা, কিছুদের গর্জন দ্বারা, কাউকে কাউকে আবার চক্রাকারে ছোটাছুটি করে আর অন্য অবশিষ্ট কিছুদের নিঃশ্বাস বায়ুর আকর্ষণে ভূতলশায়ী করে দিল ।।২২-২৩।।
দেবীর প্রমথ-সৈন্যদের এইভাবে নিপাতিত করে মহিষাসুর এইবার মহাদেবীর বাহন সিংহকে বধ করবার জন্য ছুটে গেল। এতে জগদম্বা দেবী ভয়ানক ক্রুদ্ধা হলেন ।।২৪।।
তাতে আবার মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুরও অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে পায়ের খুর দিয়ে ভূমি বিদীর্ণ করে নিজের শিং দিয়ে উঁচু উঁচু পর্বতশৃঙ্গ দেবীর দিকে নিক্ষেপ করে গর্জন করতে লাগল ।।২৫।।
তার সবেগ দৌড় ঝাঁপে পৃথিবী ক্ষুব্ধা হয়ে কাতর হলেন। মহিষের লেজের তাড়নায় সমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে সব ভাসিয়ে দিল ।।২৬।।
তার কম্পিত শিংয়ের আঘাতে বিদীর্ণ হয়ে মেঘেরা সব খণ্ড বিখণ্ড হয়ে গেল। তার নিঃশ্বাসবায়ুর বেগে শত শত পর্বত আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়ে মাটীতে আছড়ে পড়তে লাগল ।।২৭।।
মহাক্রুদ্ধ মহাসুরকে নিজের দিকে সবেগে আসতে দেখে দেবী চণ্ডিকা তাকে বধের জন্য ক্রুদ্ধা হলেন ।।২৮।।
তিনি পাশাস্ত্র নিক্ষেপ করে মহিষাসুরকে বেঁধে ফেললেন। সেই মহাযুদ্ধে পাশবদ্ধ হওয়াতে সেই মহাসুর মহিষাকৃতি পরিত্যাগ করল ।।২৯।।
তৎক্ষণাৎ সিংহের রূপ ধরে প্রকাশ হল, সেই অবস্থায় যেইমাত্র তার মস্তক কাটতে উদ্যত হয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে সে খড়্গধারী পুরুষরূপে প্রকাশ হল ।।৩০।।
দেবী তৎক্ষণাৎ বাণ বর্ষণ করে ঢাল ও খড়্গ সমেত সেই পুরুষকে ছেদন করলেন। তৎক্ষণাৎ সে এক বিশাল হাতীর রূপ ধারণ করল ।।৩১।।
সেই বিশাল হাতী নিজের শুড় দিয়ে দেবীবাহন সিংহকে আকর্ষণ করে গর্জন করতে লাগল। শুঁড় দিয়ে আকর্ষণের সময় দেবী খড়্গ দিয়ে তার শুঁড়টী কেটে ফেললেন ।।৩২।।
তাতে সেই মহাসুর আবার মহিষের শরীর ধারণ করল। আগের মতই মহিষরূপে চরাচর প্রাণী সমেত ত্রিভুবন বিক্ষুব্ধ করতে লাগল ।।৩৩।।
অনন্তর জগন্মাতা চণ্ডিকা ক্রুদ্ধা হয়ে পুনঃপুনঃ উত্তম মধু পান করতে লাগলেন এবং আরক্ত নয়নে হাসতে লাগলেন ।।৩৪।।
ওদিকে সেই মহাসুরও দৈহিক বল ও পরাক্রমে মত্ত হয়ে গর্জন করতে লাগল এবং নিজের শিং দিয়ে চণ্ডী দেবীর ওপর বড় বড় পাহাড় ছুঁড়তে লাগল ।।৩৫।।
দেবী তাঁর বাণ দিয়ে সেই সব নিক্ষিপ্ত পর্বতসমূহকে চূর্ণ করে মধুর মাদকতায় রক্তিম মুখে বিজড়িত স্বরে বললেন ।।৩৬।।
দেবী বললেন - ।।৩৭।।
রে মূঢ়! আমি যতক্ষণ মধু পান করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুই গর্জন কর্। এখানে আমার হাতে তোর মৃত্যু হলেই শীগগিরই দেবতারা আনন্দ কোলহল করবে ।।৩৮।।
মেধা ঋষি বললেন - ।।৩৯।।
এই কথা বলে দেবী লম্ফ দিলেন এবং মহিষাসুরের উপরে চড়ে বললেন। তারপর পা দিয়ে তাকে চেপে ধরে শূল দিয়ে কণ্ঠে আঘাত করলেন ।।৪০।।
দেবীর পায়ের তলায় পিষ্ট অবস্থায়ও মহিষাসুর নিজের মুখ থেকে (অন্য আর এক রূপে বের হতে চেষ্টা করল) অর্দ্ধেক শরীরেই সে বেরহতে পারল কারণ দেবী তাঁর নিজের তেজে তার বাকীটা আটকে দিলেন ।।৪১।।
অর্দ্ধেকমাত্র শরীর বাইরে আসা সত্ত্বেও ওই মহাসুর দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। তখন এক বিশাল খড়্গাঘাতে দেবী তার মাথা কেটে মাটীতে লুটিয়ে দিলেন ।।৪২।।
তখন দৈত্যের সৈন্যসকল হাহাকার করতে করতে পালিয়ে গেল এবং দেবতারা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন ।।৪৩।।
দেবতারা স্বর্গীয় মহর্ষিদের সাথে একত্র হয়ে দুর্গাদেবীকে স্তুতি করলেন। গন্ধর্বপতিগণ গান করলেন আর অপ্সরাগণ নৃত্য করতে লাগলেন ।।৪৪।।
শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে মহিষাসুরবধনামক তৃতীয় অধ্যায় সম্পুর্ণ হল ।।৩।।

Chanti Path Chapter 2 শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী দ্বিতীয় অধ্যায়

শ্রী চণ্ডী মাহাত্য
।। শ্রীদুর্গাকে প্রণাম ।।
শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী
দ্বিতীয় অধ্যায়
দেবতাদের পুঞ্জীভূত তেজে দেবীর আবির্ভাব এবং মহিষাসুরের সৈন্য বধ
বিনিয়োগ :-
ওঁ মধ্যম চরিত্রের ঋষি বিষ্ণু, দেবতা মহালক্ষ্মী, উষ্ণিক্ ছন্দ, শাকম্ভরী শক্তি, দুর্গা বীজ, বায়ু তত্ত্ব এবং যজুর্বেদ স্বরূপ। শ্রীমহালক্ষ্মীর প্রসন্নতালাভের উদ্দেশ্যে মধ্যম চরিত্রের পাঠের বিনিয়োগ করা হয়।
ধ্যান :-
কমলাসনে অধিষ্ঠিতা, প্রসন্নাননা যিনি, যার হাতে রুদ্রাক্ষের জপমালা, কুঠার, গদা, বাণ, বজ্র, পদ্ম, ধনু, কমণ্ডলু, দণ্ড, শক্তি, খড়্গ, ঢাল, শঙ্খ, ঘন্টা, সুরাপাত্র, শূল, পাশ এবং সুদর্শনচক্র ধারণ করা আছে, সেই মহিষাসুরমর্দিনী ভগবতী মহালক্ষ্মীর ধ্যান করি।
মেধা ঋষি বললেন - ।।১।।
পূর্বকালে পূর্ণ একশ বছর ধরে দেবতা ও অসুরদের ঘোর যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে অসুরদের রাজা মহিষাসুর আর দেবতাদের অধীশ্বর ছিলেন ইন্দ্র। ওই যুদ্ধে মহাবীর অসুরদের হাতে দেবতারা পরাজিত হন। দেবতাদের পরাভূত করে মহিষাসুর স্বর্গের অধিপতি হয়ে বসলেন ।।২-৩।।
পরাজিত দেবতারা তখন প্রজাপতি ব্রহ্মাকে অগ্রবর্তী করে ভগবান শিব ও বিষ্ণুর সমীপে গমন করলেন ।।৪।।
মহিষাসুরের পরাক্রম এবং নিজেদের পরাজয়ের কাহিনী সবিস্তারে তাঁরা বিষ্ণু ও শিবের কাছে বর্ণনা করলেন ।।৫।।
তাঁরা বললেন - "হে ভগবন্! সূর্য, ইন্দ্র, অগ্নি, বায়ু, চন্দ্র, যম, বরুণ ও অন্যান্য দেবতাদের অধিকার হরণ করে মহিষাসুর নিজেই সব অধিকার করে বসেছে ।।৬।।
সেই দুরাত্মা মহিষাসুর সব দেবতাদের স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে। সেই সব দেবতারা এখন মানুষদের মত পৃথিবীতে বিচরণ করছেন ।।৭।।
অসুরদের দৌরাত্ম্যের সব কথাই আমরা আপানাদের জানালাম। আমরা এখন আপনাদের শরণাপন্ন হলাম। আপনারা এই মহিষাসুরের বধের কোনও ব্যবস্থা করুন ।।৮।।
দেবতাদের কাছে এই সব শুনে মধুসূদন ও মহাদেব অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলেন। তাঁদের ভ্রুকুটি ভঙ্গে তাঁদের মুখ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করল ।।৯।।
তখন অত্যন্ত ক্রোধান্বিত চক্রপাণি শ্রীবিষ্ণুর বদন থেকে এক মহাতেজ নির্গত হল। সাথে সাথে ব্রহ্মা, শিব, তথা ইন্দ্রাদি অন্যান্য দেবতাদের শরীর থেকেও সুবিপুল তেজ নির্গত হল। এই সমস্ত মিলে একত্র হয়ে গেল ।।১০-১১।।
মহা মহা তেজের সেই পুজ্ঞীভূত রাশি এক জ্বলন্ত পর্বতের মত দেখা যেতে লাগল। দেবতারা দেখলেন সেই সুদীপ্ত তেজঃপুঞ্জ দশদিক ব্যাপ্ত করে রয়েছে ।।১২।।
সকল দেবতাদের শরীর থেকে নিঃসৃত সেই তেজের কোন তুলনাই হয় না। একত্র হয়ে সেই তেজ একটি নারী মূর্তি ধারণ করল এবং আপন তেজে ত্রিলোক ব্যাপ্ত করে রাখল ।।১৩।।
শম্ভুর তেজে সেই নারীমূর্তির মুখ তৈরী হল, যমের তেজে তৈরি হল মাথার চুল। বিষ্ণুর তেজে তৈরি হল তাঁর বাহুসকল ।।১৪।।
চন্দ্রতেজে তাঁর স্তনযুগল আর ইন্দ্রের তেজে শরীরের মধ্যভাগ, বরুণের তেজে জঙ্ঘা ও ঊরুদ্বয় এবং পৃথিবীর তেজে তাঁর নিতম্ব উদ্ভূত হল ।।১৫।।
ব্রহ্মার তেজে পদযুগল, সূর্যের তেজে পদযুগলের অঙ্গুলিসকল,অষ্টবসুর তেজে হাতের সকল আঙ্গুল এবং কুবেরের তেজে তাঁর নাসিকা উৎপন্ন হল ।।১৬।।
প্রজাপতিগণের তেজে দন্তপাটি এবং অগ্নির তেজে তিনটী চক্ষু উৎপন্ন হল ।।১৭।।
সন্ধ্যাদেবীর তেজে তাঁর ভ্রুযুগল এবং বায়ুর তেজে কান দুটী এবং এইরকম অন্যান্য দেবতাগণের তেজঃপুঞ্জ থেকেও সেই মঙ্গলময়ী দেবীর আবির্ভাব হল ।।১৮।।
তারপর সমস্ত দেবতাদের তেজরাশিসম্ভূতা দেবীকে দেখে মহিষাসুরপীড়িত দেবতারা আনন্দিত হলেন ।।১৯।।
ত্রিশূলধারী ভগবান শঙ্কর তাঁর শূল থেকে শূলান্তর এবং ভগবান বিষ্ণু চক্র থেকে চক্রান্তর উৎপাদন করে ভগবতীকে দিলেন ।।২০।।
ররুণদেব দিলেন শঙ্খ, অগ্নি দিলেন শক্তি, পবনদেব একটী ধনু ও বাণদ্বারা পূর্ণ দুটী তূণ দিলেন ।।২১।।
সহস্ত্রনয়ন দেবরাজ ইন্দ্র নিজের বজ্র থেকে বজ্রান্তর এবং ঐরাবত হাতীর গলার থেকে একটী ঘন্টাও দিলেন ।।২২।।
যমরাজ কালদণ্ড থেকে দণ্ডান্তর, জলদেবতা বরুণ নিজের পাশ থেকে একটি পাশ, প্রজাপতি রুদ্রাক্ষের মালা এবং ব্রহ্মা কমণ্ডলু দেবীকে দিলেন ।।২৩।।
সূর্যদেব দেবীর সমস্ত রোমকূপে নিজের রশ্মিজাল ভরে দিলেন। কাল অর্থাৎ মৃত্যুদেবতা একটী প্রদীপ্ত ঢাল এবং উজ্জ্বল তরোয়াল দিলেন ।।২৪।।
হ্মীরসমুদ্র দিলেন উজ্জ্বল হার ও চিরনূতন দিব্য বস্ত্রের সঙ্গে দিব্য চূড়ামণি, দুটী কুন্তল, হাতের বালা, ললাটভূষণ উজ্জ্বল অর্দ্ধচন্দ্র, সকল বাহুর জন্য কেয়ূর, দুই চরণের জন্য নির্মল নূপুর, অতি উত্তম কণ্ঠাভরণ, এবং সব আঙ্গুলের জন্য রত্নাঙ্গুরী। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা দিলেন অতি নির্মল ধারাল কুঠার ।।২৫-২৭।।
এর সাথে নানাপ্রকার অস্ত্রশস্ত্র এবং অভেদ্য কবচও দিলেন। এছাড়া মস্তক এবং বহ্মঃস্থলে ধারণ করার জন্য অম্লান পদ্মের মালা দিলেন ।।২৮।।
সমুদ্র তাঁর হাতে একটী অতি সুন্দর পদ্মফুল দিলেন। বাহনস্বরূপ সিংহ ও বিবিধ রত্ন দিলেন পর্বতাধিপতি হিমালয় ।।২৯।।
ধনাধ্যক্ষ কুবের সদাই সুরাপূর্ণ একটী পানপাত্র এবং নাগাধিপতি বাসুকি যিনি এই পৃথিবীকে ধারণ করে আছেন দেবীকে বহুমূল্য রত্নে বিভূষিত নাগহার দিলেন। এইভাবে অন্যান্য দেবগণও অলঙ্কার ও অস্ত্রশস্ত্রাদি দিয়ে দেবীকে সম্মানিত করলেন। এই সমস্ত জিনিষে সজ্জিতা হয়ে দেবী বারংবার অট্টহাস্যে হুঙ্কার করতে লাগলেন। সেই মহান ঘোর গর্জনে সমগ্র আকাশ গুজ্ঞিত হল ।।৩০-৩২।।
দেবীর সেই সিংহনাদের ভয়ানক প্রতিধ্বনি উঠল, চতুর্দশ ভুবন সংহ্মুদ্ধ, সপ্ত সমুদ্র প্রকম্পিত হতে থাকল ।।৩৩।।
পৃথিবী বিচলিত হল আর পর্বতসমূহ দুলতে লাগল। তখন দেবতারা অসীম আনন্দে সিংহবাহিনী ভবানীর জয়ধ্বনি দিয়ে বললেন - দেবি! তোমার জয় হোক ।।৩৪।।
মুনিগণ ভক্তিভরে বিনম্রভাবে দেবীকে স্তব করতে লাগলেন। সমস্ত ত্রিলোকবাসীকে সন্ত্রস্ত দেখে অসুররা নিজেদের সমস্ত সৈন্যদের সুসজ্জিত করে অস্ত্র-শস্ত্রাদ
ি উদ্যত করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল। মহিষাসুর তখন ক্রোধে সেখানে এসে বলল ---'আঃ! এ সব কি!' এই কথা বলে সব অসুরদের নিয়ে সে সেই সিংহনাদের দিকে ধাবিত হল এবং সেখানে গিয়ে যিনি নিজ অঙ্গজ্যোতিতে ত্রিভুবন আলোকিত করে রয়েছেন সেই দেবীকে দেখতে পেল ।।৩৫-৩৭।।
তাঁর পদভারে পৃথিবী নত হয়ে পড়েছে। তাঁর মাথার মুকুট আকাশে রেখা টানার ন্যায় স্পর্শ করেছে এবং তার ধনুকের টঙ্কার পাতাল পর্যন্ত সাত নিম্নলোক আকুলিত করছে ।।৩৮।।
তাঁর সহস্র বাহুতে দশদিক আচ্ছাদিত করে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তখন অসুরদের সাথে দেবীর যুদ্ধ আরাম্ভ হল ।।৩৯।।
নানারকম নিক্ষিপ্ত অস্ত্রশস্ত্রের দীপ্তিতে দশদিক উদ্ভাষিত হতে লাগল। মহিষাসুরের সেনাপতির নাম মহাসুর চিক্ষুর ।।৪০।।
সে দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। চতুরঙ্গিণী বাহিনী পরিবেষ্টিত চামর অন্য অসুরগণকে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ আরম্ভ করল। ষাট হাজার রথীদের সঙ্গে নিয়ে উদগ্র নামে মহাসুর যুদ্ধ আরম্ভ করল ।।৪১।।
এক কোটি রথী নিয়ে মহাহনু অসুর যুদ্ধ করতে এল। অসিলোমা নামে মহাসুর, যার গায়ের রোমসমূহ অসির মত তীক্ষ্ন ছিল, পাঁচ কোটি রথী নিয়ে যুদ্ধ আরম্ভ করল ।।৪২।।
ষাট লাখ রথী নিয়ে বাস্কলাসুর রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে লাগল। পরিবারিত নামে এক মহাসুর বহু সহস্র হাতী ও অশ্বারোহীর সঙ্গে এক কোটি রথীকে নিয়ে যুদ্ধ করতে লাগল। বিড়াল নামের মহাসুর পাঁচ অর্বুদ রথীদের নিয়ে যুদ্ধ আরম্ভ করল। এরা ছাড়াও অন্যান্য বহুসংখ্যক মহাসুরগণ রথ, হাতী, ঘোড়া, সৈন্যসামন্ত নিয়ে দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। স্বয়ং মহিষাসুর সেই যুদ্ধে কোটি কোটি সহস্র রথ, হাতী ও অশ্বারোহী সেনাদের নিয়ে যুদ্ধ আরম্ভ করল। সেই সব মহাসুরেরা তোমর(শাবল), ভিন্দিপাল, শক্তি, মুষল, খড়্গ, পরশু(কুঠার) এবং পট্টিশ প্রভৃতি অস্ত্রসমূহ দ্বারা দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। কিছু সংখ্যক অসুর আবার শক্তি, কেউ কেউ পাশ দেবীর ওপর নিক্ষেপ করল ।।৪৩-৪৮।।
কেউ কেউ বা খড়্গের আঘাতে দেবীকে বধ করবার চেষ্টা করল। দেবীও অনায়াসেই নিজের অস্ত্র-শস্ত্র বর্ষণ করে অসুরদের সেই সব অস্ত্র-শস্ত্রকে ছেদন করলেন। তাঁর মুখের ওপর পরিশ্রম বা ক্লান্তির কোনও চিহ্নমাত্রও দেখা গেল না, দেবতা ও ঋষিগণ তাঁকে স্তুতি করতে থাকলে ভগবতী পরমেশ্বরী অসুরদের শরীরে অস্ত্রশস্ত্রাদি নিক্ষেপ করতে লাগলেন। দেবীর বাহন সিংহও ক্রোধে কেশর ফুলিয়ে অসুরসৈন্যের মধ্যে দাবানলের মত বিচরণ করতে লাগলেন। রণক্ষেত্রে যুদ্ধ করতে করতে অম্বিকাদেবী যত নিঃশ্বাস ফেললেন, সেই সব নিঃশ্বাস হতে তৎক্ষনাৎ শত শত সহস্র সহস্র দেবীর গণ অর্থাৎ দেবীর সৈন্যরূপে উৎপন্ন হলেন এবং পরশু, ভিন্দিপাল, খড়্গ তথা পট্টিশাদি অস্ত্রদ্বারা অসুরদের বধ করতে লাগলেন ।।৪৯-৫৩।।
দেবীর শক্তিতে শক্তিমান হয়ে সেই দেবীসৈন্যেরা নাগাড়া ও শঙখ ইত্যাদি বাজাতে বাজাতে অসুরসেনা ধ্বংস করতে লাগলেন ।।৫৪।।
সেই যুদ্ধমহোৎসবে দেবীসৈন্যরা মৃদঙ্গ বাজাচ্ছিলেন। অতঃপর দেবী নিজে ত্রিশূল, গদা, শক্তি অস্ত্র বর্ষণ করে এবং খড়্গ ইত্যাদি দ্বারা শত শত মহাসুর বিনাশ করলেন। অপর কতকগুলি অসুরকে ঘন্টার ভয়ঙ্কর ধ্বনি দিয়ে বিমোহিত করে বধ করলেন ।।৫৫-৫৬।।
আবার কতকগুলিকে পাশবদ্ধ করে ভূমিতে পাতিত করলেন। কত না অসুর তাঁর তীক্ষ্ন তরোয়ালের আঘাতে দু টুকরো হয়ে প্রাণত্যাগ করল ।।৫৭।।
কতকগুলি গদাঘাতে চূর্ণ হয়ে ভূতলে নিপাতিত হল। অনেকগুলো আবার মুষলাঘাতে আহত হয়ে রক্ত বমন শুরু করল। সেই যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও কোনও অসুর সর্বাঙ্গে বাণবিদ্ধ হয়ে প্রাণত্যাগ করল ।।৫৮-৫৯।।
বাজপাখীর মত ঝাপটাদেওয়া দেবশত্রু অসুরগণ নিজেদের প্রাণ দিয়ে নিজেদের ক্ষয় করতে লাগল। কারও কারও বাহুসকল ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেল। কারোর ঘাড় ভেঙ্গে গেল। কারো কারো মস্তক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে লাগল। কারোর দেহের মধ্যভাগ বিদীর্ণ হয়ে গেল। কতকগুলোর জঙ্ঘা ছিন্ন হয়ে মাটীতে লুটাতে লাগল। অনেককে দেবী এক বাহু, এক পা, আবার এক চক্ষু করে দ্বিখণ্ডিত করে মাটীতে লুটিয়ে দিলেন। কতকগুলি অসুরের মস্তক ছিন্ন হওয়া সত্তেও মাটিতে পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়াল এবং মস্তকহীন শরীরে ভাল ভাল অস্ত্র নিয়ে দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। অনেকগুলো কবন্ধ আবার যুদ্ধের বাজনার তালে তালে নৃত্য করতে লাগল ।।৬০-৬৩।।
কিছু কিছু কবন্ধ খড়্গ, শক্তি ও খষ্টি হাতে নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে লাগল এবং অন্যান্য মহাসুরেরা 'দাঁড়াও দাঁড়াও' বলে দেবীকে যুদ্ধে আহ্বান করতে লাগল। যেখানে ওই বিশাল মহাযুদ্ধ হয়েছিল, সেখানকার পৃথিবীর জায়গাগুলি দেবীর দ্বারা পাতিত রথ, হাতী, ঘোড়া এবং অসুরদের মৃতদেহে এমন স্তূপীকৃত হয়েছিল যে, সে সব জায়গায় চলাফেরাও করা যাচ্ছিল না ।।৬৪-৬৫।।
অসুর সৈন্যদের হাতী, ঘোড়া এবং মৃতদেহের থেকে এতই রক্তপাত হয়েছিল যে অল্পক্ষণের মধ্যেই সেখানে বড় বড় রক্তনদী বইতে লাগল ।।৬৬।।
আগুন যেমন তৃণ ও কাঠের বিশাল বিশাল স্তূপকে মুহূর্তের মধ্যেই ভস্মসাৎ করে দেয়, জগদম্বাও তেমনই ক্ষণকাল মধ্যে অসুরদের বিশাল সেনাকে বিনাশ করলেন ।।৬৭।।
আর সেই সিংহও কেশর ফুলিয়ে ফুলিয়ে ভীষণ গর্জন করতে করতে অসুরদের দেহ থেকে প্রাণ বের করে নিচ্ছিলেন ।।৬৮।।
যুদ্ধক্ষেত্রে দেবীর সৈন্যগণও সেই অসুরদের সাথে এমন ভীষন যুদ্ধ করলেন যে আকাশ থেকে দেবতাগণ তাঁদের ওপর পুষ্পবৃষ্টি করে আনন্দ প্রকাশ করলেন ।।৬৯।।
শ্রীমার্কন্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিকমন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্য প্রসঙ্গে মহিষাসুরসৈন্যবধ
নামক দ্বিতীয় অধ্যায় সম্পূর্ণ হল ।।২।।