Saturday 12 November 2016

Devi Atharvashirsham

শ্রী  চণ্ডী মাহাত্য
                   শ্রীদেব্যথর্বশীর্ষ
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
ঔং সকল দেবতারা দেবীর কাছে গিয়ে বিনীতভাবে প্রশ্ন করলেন - হে মহাদেবি! তুমি কে? ।।১।।
তিনি বললেন - আমি ব্রহ্মস্বরূপ। আমার থেকেই প্রকৃতি-পুরুষাত্মক সৎরূপ ও অসৎরূপ জগৎ উৎপন্ন হয়েছে ।।২।।
আমি আনন্দ ও নিরানন্দরূপা। আমি বিজ্ঞান আর অবিজ্ঞানরূপা। অবশ্য জ্ঞাতব্য ব্রহ্ম এবং আমিই অব্রহ্ম। পঞ্চীকৃত ও অপঞ্চীকৃত মহাভূতও আমিই। এই সমগ্র দৃশ্য জগৎ আমিই ।।৩।।
বেদ ও অবেদ আমি। বিদ্যা ও অবিদ্যাও আমি, অজা আর অনজাও (প্রকৃতি ও তার থেকে ভিন্ন) আমি, উর্ধ্ব অধঃ, চারিদিকও আমিই ।।৪।।
রুদ্র ও বসু রূপে আমি সঞ্চার করি। আমি আদিত্য ও বিশ্বদেবের রূপে বিচরণ করি। মিত্র ও বরুণ এবং ইন্দ্র ও অগ্নি ও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের আমি ভরণ পোষণ করি ।।৫।।
সোম, ত্বষ্টা, পূষা এবং ভগকে আমি ধারণ করি। ত্রিলোক অধিকার করার জন্য যে বিশাল পদবিস্তার বিষ্ণু করেছেন সেই বিষ্ণু, ব্রহ্মদেব এবং প্রজাপতিকে আমিই ধারণ করি ।।৬।।
দেবতাদের কাছে উত্তম হবি পৌঁছে দেওয়া এবং সোমরস নিষ্কাষণকারী যজমানের জন্য হবিযুক্ত ধনসম্পদ ধারণ আমিই করি। আমিই সমগ্র জগদীশ্বরী, উপাসককে ফলদায়িনী, ব্রহ্মরূপা ও যজ্ঞহোমের (যজনের উপযুক্ত দেবতাদের মধ্যে) মুখ্যা। আমি নিজ স্বরূপরূপ আকাশাদি সৃষ্টি করি। আমি আত্মতত্ত্বনিহিতা উপলব্ধিরূপ বুদ্ধিবৃত্তি। যে এসব জানে তার দৈবীসম্পত্তি লাভ হয় ।।৭।।
সেই দেবতারা তখন বললেন - দেবীকে প্রণাম! শ্রেষ্ঠ শ্রেষ্ঠতমদেব নিজ নিজ কর্তব্যে প্রবৃত্তিরূপিণী, কল্যাণকর্ত্রীকে সদাই নমস্কার। ত্রিগুণাত্মিকা প্রকৃতি দেবীকে প্রণাম। নিয়মিতভাবে আমরা তাঁকে প্রণাম করি ।।৮।।
সেই অগ্নিবর্ণা, জ্ঞানে দেদীপ্যমানা, দীপ্তিমতী, কর্মফলদায়িনী, দুর্গাদেবীর আমরা শরণাগত হলাম। অসুরদলনী দেবি! তোমাকে প্রণাম ।।৯।।
প্রাণরূপ দেবগণ যে প্রকাশমান বৈখরী বাণীর উদ্গাতা, বিভিন্ন প্রণীরা তাহাই উচ্চারণ করেন। সেই কামধেনুতুল্য আনন্দদায়িনী, অন্ন ও সামর্থ্যদায়িনী বাগরূপিণী ভগবতী সুন্দর স্তুতিতে প্রীত হয়ে আমাদের কাছে আসুন ।।১০।।
কালবিধ্বংসিনী, বেদসূক্তে স্তুতা বিষ্ণুশক্তি, স্কন্দমাতা (শিবশক্তি), সরস্বতী (ব্রহ্মশক্তি), দেবমাতা অদিতি এবং দক্ষকন্যা (সতী), পাপনাশিনী, কল্যাণকারিণী ভগবতীকে আমরা প্রণাম করি ।।১১।।
আমরা মহালক্ষ্মীকে যেন জানতে পারি এবং সেই সর্বশক্তিরূপিণীরই ধ্যান করি। সেই দেবী আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকে সেই দিকে চালিত করুন ।।১২।।
হে দক্ষ! আপনার যে কন্যা অদিতি, তিনি প্রসূতা হয়ে অমর কল্যাণময় দেবতাদের উৎপন্ন করেন ।।১৩।।
কাম (ক), যোনি (এ), কমলা (ঈ), বজ্রপাণি - ইন্দ্র (ল), গুহা (হ্রীং), হ, স - বর্ণ, মাতরিশ্বা - বায়ু (ক), অভ্র (হ), ইন্দ্র (ল), পুনঃ গুহা (হ্রীং), স, ক, ল - বর্ণ, এবং মায়া (হ্রীং) - এরা সর্বাত্মিকা জগন্মাতার মূল বিদ্যা ব্রহ্মরূপিণী ।।১৪।।
(এই মন্ত্রের ভাবার্থ - শিবশক্ত্যভেদরূপা, ব্রহ্ম-বিষ্ণু-শিবাত্মিকা, সরস্বতী-লক্ষ্মী-গৌরীরূপা, অশুদ্ধ-মিশ্র-শুদ্ধোপাসনাত্মিকা, সমরসীভূত-শিবশক্ত্যাত্মক ব্রহ্মরূপের নির্বিকল্প জ্ঞানদাত্রী, সর্বতত্ত্বাত্মিকা মহাত্রিপুরসুন্দরী। এই মন্ত্রসকল মন্ত্রের শিরোমণি এবং মন্ত্রশাস্ত্রে পঞ্চদশী ইত্যাদি শ্রীবিদ্যা নামে প্রসিদ্ধ। ইহার ছয়টী অর্থ অর্থাৎ ভাবার্থ, বাচ্যার্থ, সম্প্রদায়ার্থ, লৌকিকার্থ, রহস্যার্থ ও তত্ত্বার্থ 'নিত্যষোড়শীকার্ণব' গ্রন্থে উক্ত আছে। এইভাবে 'বরিবস্যারহস্যাদি' পুস্তকে আরও অনেক রকম অর্থ বলা আছে। শ্রুতিতেও এই মন্ত্র এইভাবে অর্থাৎ ক্বচিৎ স্বরূপোচ্চার, ক্বচিৎ লক্ষণা এবং লক্ষিত লক্ষণার্থে আবার কোথাও বর্ণের পৃথক পৃথক অবয়ব প্রদর্শন করে জেনে শুনেই অসংলগ্নভাবে বর্ণিত আছে। এর থেকে বোঝা যায় যে এই মন্ত্র কত গোপনীয় ও মহত্ত্বপূর্ণ।)
ইনি পরমাত্মার শক্তি, ইনি বিশ্বমোহিনী, পাশ, অংকুশ, ধনু ও বাণধারিণী। ইনি শ্রীমহাবিদ্যা। যে তাঁকে এইভাবে জানে, সে শোকের দুস্তর সাগর পার হয়ে যায় ।।১৫।।
ভগবতি! তোমাকে প্রণাম। মাগো! আমাদের সর্বতোভাবে রক্ষা করো ।।১৬।।
(মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিরা বলেন) ইনিই সেই অষ্টবসু, ইনিই একাদশ রুদ্র, ইনিই দ্বাদশ আদিত্য, ইনি সোমপায়ী ও সোম অপায়ী বিশ্বেদেব; ইনি যাতুধান (এক শ্রেণীর রাক্ষস), অসুর, রাক্ষস, পিশাচ, যক্ষ ও সিদ্ধ; ইনিই সত্ত্ব-রজ-তম; ইনিই ব্রহ্ম-বিষ্ণু-রুদ্ররূপিণী, ইনিই প্রজাপতি-ইন্দ্র-মনু, এই গ্রহ, নক্ষত্র ও তারা; ইনিই কলাকাষ্ঠাদি কালরূপিণী, পাপনাশিনী, ভোগ ও মোক্ষদায়িনী, অনন্তা, বিজয়াধিষ্ঠাত্রী, নির্দোষা, শরণ্যা, কল্যাণদাত্রী ও মঙ্গলরূপিণী। এই দেবীকে আমরা সদাই প্রণাম করি ।।১৭।।
বিয়ৎ-আকাশ (হ) তথা ঈ-কার যুক্ত, বীতিহোত্র-অগ্নি-(র) সহিত, অর্ধচন্দ্র (ঁ) অলঙ্কৃত দেবীর যে বীজ, তা সব মনোরথ পূর্ণ করে। এই রকমই এই একাক্ষর ব্রহ্ম (হ্রীং)-এর ধ্যান শুদ্ধচিত্ত যতিগণ করেন, যিনি নিরতিশয় আনন্দময় এবং জ্ঞানের সাগর। এই মন্ত্রকে দেবীপ্রণব বলে মনে করা হয়। ওঁকারের সমতুল্যই এই প্রণবও ব্যাপক অর্থে পরিপূর্ণ। সংক্ষেপে এর অর্থ হল ইচ্ছা-জ্ঞান-ক্রিয়া, ধারণ, অদ্বৈত, অখণ্ড, সচ্চিদানন্দ, সমরসীভূত, শিব শক্তিস্ফুরণ ।।১৮-১৯।।
বাণী (ঐং), মায়া (হ্রীং), ব্রহ্মসূ - কাম (ক্লীং) এর আগে ছটী ব্যঞ্জন অর্থাৎ চ, সেই বক্ত্র অর্থাৎ আকারযুক্ত (চা), সূর্য্য (ম), 'অবাম শ্রোত্র' - দক্ষিণ কর্ণ (উ) আর বিন্দু অর্থাৎ অনুস্বারযুক্ত (মুং), ট বর্গের তৃতীয় বর্ণ ড, সেই নারায়ণ অর্থাৎ আ-সংযুক্ত (ডা), বায়ু (য়), সেই অধর অর্থাৎ এ-র সাথে যুক্ত (ঐ) এবং 'বিচ্চে' এই নবার্ণ মন্ত্র উপাসককে আনন্দ এবং ব্রহ্মসাযুজ্য দাতা ।।২০।।
এই মন্ত্রের অর্থ - হে চিৎস্বরূপিণী মহাসরস্বতী! হে সৎরূপিণী মহালক্ষ্মী! ব্রহ্মবিদ্যা অর্জনের উদ্দেশ্যে আমরা সর্বদাই তোমার ধ্যান করি। হে মহাকালী-মহালক্ষ্মী-মহাসরস্বতীরূপিণী-চণ্ডিকে! তোমাকে প্রণাম। অবিদ্যারূপ রজ্জুর শক্ত গ্রন্থি খুলে দিয়ে আমাদের মুক্ত করো ।
হৃদয়-কমলের মধ্যস্থিত, প্রাতঃসূর্যের সম প্রভাশালিনী, পাশ ও অঙ্কুশধারিণী, মনোহর রূপময়ী, বরাভয়মুদ্রা হস্তিনী, ত্রিনেত্রা, রক্তাম্বরপরিধেয়া এবং কামধেনুসম ভক্তমনোরথ পূরণকারিণী দেবীকে ভজনা করি ।।২১।।
মহাভয়নাশিনী, মহাসঙ্কট প্রশমনী ও মহান্ করুণার মূর্তিমতী তুমি। মহাদেবীকে আমরা প্রণাম করি ।।২২।।
ব্রহ্মাদি দেবতাগণ পর্যন্ত যাঁর স্বরূপ জানেন না, যে জন্য তাঁকে অজ্ঞেয়া বলা হয়, যাঁর অন্ত খুঁজে না পাওয়াতে তাঁকে অনন্তা বলা হয়, যাঁর লক্ষ্য বুঝতে পারা যায় না বলে যাঁকে অলক্ষ্যা বলা হয়, যাঁর জন্মরহস্য বোঝাই যায় না বলে যাঁকে অজা বলা হয়, যিনি সর্বত্রই একক - যার জন্য তাঁকে একা বলা হয়, যিনি স্বয়ংই সমগ্র বিশ্বরূপে দৃশ্যমান, বলে যাঁকে নৈকা বলা হয়, তিনি এইজন্যই অজ্ঞেয়া, অনন্তা, অলক্ষ্যা, অজা, একা ও নৈকা নামে অভিহিতা হন ।।২৩।।
সমস্ত মন্ত্রেই 'মাতৃকা' - মূলাক্ষররূপে অবস্থিতা, শব্দসমূহের মধ্যে জ্ঞান(অর্থ) রূপে অবস্থিতা, জ্ঞানের মধ্যে 'চিন্ময়াতীতা', শূন্যের মধ্যে 'শূন্যসাক্ষিণী' তথা যাঁর থেকে শ্রেষ্ঠ আর কিছুই নেই, তিনি দুর্গা নামে প্রসিদ্ধা ।।২৪।।
দুর্বিজ্ঞেরা, দুরাচারনাশিনী, সংসার সাগর হতে উদ্ধারকারিণী সেই দুর্গা দেবীকে ভবভয়তীত আমরা প্রণাম করি ।।২৫।।
এই অথর্বশীর্ষ যে পাঠ করে তার পঞ্চ অথর্বশীর্ষ জপের ফল লাভ হয়। এই অথর্বশীর্ষকে না জেনে যে প্রতিমাস্থাপন করে সে শত লক্ষ জপ করেও অর্চাসিদ্ধি পায় না। অষ্টোত্তর শতজপ (ইত্যাদি) ইহার পুরশ্চরণ বিধি। যে এই অথর্বশীর্ষ দশবার পাঠ করে সে সেই মুহূর্তেই সবপাপ হতে মুক্ত হয়ে যায় এবং মহাদেবীর প্রসাদে অতি বড় দুস্তর সঙ্কট থেকে উত্তীর্ণ হয়ে যায় ।।২৬।।
সন্ধ্যাকালে পাঠ করলে দিনে কৃত পাপরাশি নষ্ট হয়। প্রাতঃকালে পাঠ করলে রাত্রিকালে কৃত পাপরাশি ধ্বংস হয়ে যায়। দুইবেলা পাঠ করলে পূর্ণ নিষ্পাপ হয়ে যায়। মধ্যরাত্রে তুরীয় সন্ধ্যার সময় জপ করলে বাকসিদ্ধ হয়। নূতন প্রতিমার উপর জপ করলে দেবত্যসান্নিধ্য প্রাপ্ত হয়। প্রাণপ্রতিষ্ঠার সময় জপ করলে প্রাণের প্রতিষ্ঠা হয়। ভৌমাশ্বিনী (অমৃতসিদ্ধি) যোগে মহাদেবীর সান্নিধ্যে জপ করলে মহামৃত্যুর থেকে রক্ষা পায়। যে এসব জানে সে মহামৃত্যুকে অতিক্রম করে। ইহা অবিদ্যানাশিনী ব্রহ্মবিদ্যা ।।
হে দেবগণ, আমরা কর্ণ দ্বারা যেন কল্যাণপ্রদ বাক্যসমূহই শ্রবণ করি, হে যজনীয় দেবগণ, আমরা চক্ষু দ্বারা যেন মঙ্গলকর বিষয়সমূহ দর্শন করি। স্থির দৃঢ় শরীর এবং অবয়বের দ্বারা তোমাদের স্তুতি করিয়া যেন দেবগণের বিহিত আয়ু প্রাপ্ত হই, যা ঈশ্বরের সেবায় নিযুক্ত করতে পারি। সর্বত্র যাঁর সুযশ সেই ইন্দ্র আমাদের জন্য কল্যাণপোষণ করুন। যিনি সম্পূর্ণ বিশ্বের জ্ঞান রাখেন সেই পূষা আমাদের জন্য কল্যাণপোষণ করুন। অরিষ্টনাশে চক্র সদৃশ শক্তিশালী গরুড়দেব আমাদের জন্য কল্যাণপোষণ করুন তথা (বুদ্ধির স্বামী) বৃহস্পতি আমাদের জন্য কল্যাণপুষ্টি করুন ।।
হে পরমাত্মা! আমাদের ত্রিবিধ বিঘ্নের শান্তি হউক ।।

Saturday 29 October 2016

রাত্রিসূক্ত তন্ত্রে উক্ত Ratrisuktam Tantra

শ্রী  চণ্ডী মাহাত্য
                 তন্ত্রে উক্ত রাত্রিসূক্ত
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
এই বিশ্বের জগদীশ্বরী, জগদ্ধাত্রী, স্থিতিসংহারকারিণী এবং তেজঃস্বরূপ ভগবান বিষ্ণুর অনুপম শক্তি, সেই ভগবতী নিদ্রাদেবীকে ভগবান ব্রহ্মা স্তুতি করতে লাগলেন ।।১।।
ব্রহ্মা বললেন -
দেবী! তুমি স্বাহা, তুমি স্বধা এবং তুমিই বষট্কার স্বরও তোমারই স্বরূপ। তুমিই জীবনদায়িনী সুধা। নিত্য অক্ষর প্রণবের অকার, উকার, মকার - এই তিনমাত্রারূপে তুমিই স্থিত, আবার এই তিন মাত্রা ছাড়া বিন্দুরূপা যে নিত্য অর্দ্ধমাত্রা - যাকে বিশেষরূপে আলাদাভাবে উচ্চারণ করা যায় না, তাও তুমিই। দেবি! তুমিই সন্ধ্যা, সাবিত্রী তথা পরম জননী ।।২-৩।।
দেবি! তুমিই এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ধারণ করে আছ। তোমার থেকেই এই জগতের সৃষ্টি হয়। তোমার দ্বারাই এই জগতের পালন হয় এবং সর্বদা প্রলয়কালে তুমিই এর সংহার কর ।।৪।।
জগন্ময়ী দেবী! এই জগতের সৃষ্টিকালে তুমি সৃষ্টিরূপা, পালনকালে স্থিতিরূপা এবং প্রলয়কালে সংহারশক্তিরূপা ।।৫।।
তুমিই মহাবিদ্যা, মহামায়া, মহামেধা, মহাস্মৃতি, মহামোহরূপা, মহাদেবী ও মহাসুরী ।।৬।।
তুমিই সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ এই তিনগুণের সৃষ্টিকারিণী সর্বময়ী প্রকৃতি। ভয়ঙ্কর কালরাত্রি, মহারাত্রি ও মোহরাত্রিও তুমিই ।।৭।।
তুমিই শ্রী, তুমিই ঈশ্বরী, তুমিই হ্রী এবং তুমি নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি। লজ্জা, পুষ্টি, তুষ্টি, শান্তি ও ক্ষমাও তুমিই ।।৮।।
তুমি খড়্গধারিণী, শূলধারিণী, ঘোররূপা, তথা গদা, চক্র, শঙ্খ ও ধুনর্ধারিণী। বাণ, ভুশুণ্ডী ও পরিঘা - এসবও তোমার অস্ত্র ।।৯।।
তুমি সৌম্যা ও সৌম্যতরা - শুধু তাই নয়, যত কিছু সৌম্য এবং সুন্দর পদার্থ আছে, সেই সবের থেকেও তুমি অত্যধিক সুন্দরী, পর ও অপর - সবের উপরে পরমেশ্বরী তুমিই ।।১০।।
হে বিশ্বরূপিণী, যে-কোনও স্থানে যাহা কিছু চেতন বা জড় বস্তু অতীতে ছিল, বর্তমানে আছে এবং ভবিষ্যতে হইবে সেই সকলের যে শক্তি, তাহা তুমিই। সুতরাং কিরূপে তোমার স্তব করিব? (বিশ্বপ্রপঞ্চে তুমি ভিন্ন যখন আর কিছুই নাই, তখন তোমার স্তব কিরূপে সম্ভব?) ।।১১।।
যেই ভগবান এই জগতের সৃষ্টি, স্থিতি ও পালন করেন, সেই ভগবানকেও যখন তুমি নিদ্রাবিষ্ট করে রেখেছ, তখন কে তোমার স্তব করতে সমর্থ? ।।১২।।
আমাকে, ভগবান বিষ্ণুকে ও ভগবান রুদ্রকেও তুমিই শরীর গ্রহণ করিয়েছ; কাজেই তোমার স্তুতি করার মত শক্তি কার আছে? ।।১৩।।
হে দেবি! তুমি তো নিজের এই উদর প্রভাবের দ্বারাই প্রশংসিত। এই যে দুই দুর্জয় অসুর মধু ও কৈটভ এদের তুমি মোহগ্রস্ত করে দাও এবং জগদীশ্বর ভগবান বিষ্ণুকে শীগগিরই জাগরিত করে দাও। সঙ্গে সঙ্গে এই মহাসুরকে বধ করবার জন্য তাঁর প্রবৃত্তি উৎপাদন কর ।।১৪-১৫।।
ইতি তন্ত্রে উক্ত রাত্রিসূক্ত সমাপ্ত ।

Monday 24 October 2016

রাত্রিসূক্ত Raatrisuktam Ved

শ্রী  চণ্ডী মাহাত্য
                বেদে উক্ত রাত্রিসূক্ত
রাত্রিসূক্তের ঋষি (মন্ত্রদ্রষ্টা)-কুশিক, ছন্দ-গায়ত্রী ও দেবতা-রাত্রি।
শ্রীজগদম্বার প্রীতির জন্য চণ্ডীপাঠের পূর্বে রাত্রিসূক্ত পাঠ করিতে হয়।
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
মহৎতত্ত্বাদিরূপ ব্যাপক ইন্দ্রিয়গণের দ্বারা সব দেশে চরাচর সমস্ত বস্তুকে প্রকাশ করার নিমিত্ত এই রাত্রিরূপা দেবী তার মধ্যে থেকে জাত জাগতিক জীবের শুভাশুভ কর্মের ওপর বিশেষরূপে লক্ষ্য রাখেন এবং সেই কর্মানুরূপ ফলের ব্যবস্থা করার উপযুক্ত সমস্ত বিভূতি ধারণ করেন ।।১।।
এই দেবী অমর এবং সমগ্র বিশ্বকে অধোমুখী তৃণগুল্ম থেকে উর্ধ্বমুখী বৃক্ষ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থান করেন; শুধু তাই নয় ইনি জ্ঞানময় জ্যোতি দিয়ে জীবের অজ্ঞানান্ধকার নাশ করেন ।।২।।
পরা চিৎশক্তিরূপ রাত্রিদেবী এসে তাঁর ভগ্নী ব্রহ্মবিদ্যাময়ী উষাদেবীকে প্রকাশ করেন, যেই প্রকাশে অবিদ্যাময় অন্ধকার স্বতঃই দূর হয়ে যায় ।।৩।।
এই রাত্রিদেবী এখন আমার ওপর প্রসন্ন হোন। এঁর আগমনে আমরা ঠিক সেইরকমভাবে নিজেদের বাড়ীতে সুখে শয়ন করি, যেমনভাবে রাত্রিতে গাছের ওপর নিজেদের তৈরী বাসায় পাখীরা সুখে রাত্রিবাস করে ।।৪।।
ঐ কৃপাময়ী রাত্রিদেবীর কোলে সমস্ত গ্রামবাসী মানুষ, পদচারী গবাশ্বাদি পশু, পাখী এবং পতঙ্গাদি, প্রয়োজনীয় কর্মে পথচারী পথিক এবং শোনাদিও সুখে শয়ন করে ।।৫।।
হে রাত্রিময়ী চিৎশক্তি! তুমি কৃপা করে বাসনাময়ী ব্যাঘ্রী ও পাপময় ব্যাঘ্রদের থেকে আমাদের রক্ষা করো। কামাদি তস্করদেরও দূর করে দাও। তারপর সংসারসাগররূপ বৈতরণী অনাযাসে পার করে দাও - মোক্ষদায়িনী কল্যাণকারিণী হও ।।৬।।
হে উষা! হে রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী দেবী! চতুর্দিকে বিস্তৃত এই অজ্ঞানময় গাঢ় অন্ধকার আমার কাছে এসে হাজির হয়েছে। নিজের স্তোতৃগণকে ধনপ্রদানের দ্বারা তুমি যেমন তাদের ঋণ অপগম কর, সেইরকম এই ঋণের বোঝাও দূর কর - জ্ঞানদান দ্বারা এই অজ্ঞানকেও দূর কর ।।৭।।
হে রাত্রিদেবী! তুমি দুগ্ধবতী গাভীর মত। তোমার কাছে এসে স্তুতিজপাদি দ্বারা আমি তোমাকে প্রসন্ন করছি। তুমি পরমাকাশরূপ সর্বব্যাপী পরমাত্মার কন্যা! তোমার কৃপাতে আমি কামাদি শত্রুকে জয় করেছি, তুমি স্তোমরূপ আমার প্রদত্ত এই হবিষাও কৃপা করে গ্রহণ কর ।।৮।।
ইতি ঋগ্বেদোক্ত রাত্রিসূক্ত সমাপ্ত ।
যে ব্রহ্মরূপা মহামায়া পুনঃপুনঃ অসুরবধার্থ আবির্ভূতা হন, যিনি প্রাণিগণের সুখদাত্রী ও কন্যারূপিনী, যিনি ময়ূরপুচ্ছভূষণা (শিখণ্ডিনী) ও অসুরবধার্থ পাশহস্তা এবং যিনি নিত্য বাল্য ও বার্ধক্যাবস্থা-রহিতা ও কুমারী প্রভৃতি শক্তিসমূহের সমষ্টীভূতা, সেই রাত্রিরূপা দেবীর শরণাপন্ন হই। তাঁহার প্রভাবে সূর্য চক্ষুদ্বয়কে শ্রীযুক্ত করিয়া রক্ষা করুন; বায়ুদেবতা পঞ্চপ্রাণ রক্ষা করুন; সোমদেব ঘ্রাণেন্দ্রিয় রক্ষা করুন; বরুণদেব সকল তরল পদার্থ রক্ষা করুন, চন্দ্রদেব আমার মন রক্ষা করুন এবং পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আমার শরীর রক্ষা করুন ।
সামবিধিব্রাহ্মণমতে রাত্রিতে এই দেবীমন্ত্রজপমাত্রেই সিদ্ধিলাভ হয়। এই সূক্তপাঠের অবান্তর ফল মরণকালজ্ঞান ও পরম ফল মোক্ষ-প্রাপ্তি ।
সামবিধিব্রাহ্মণোক্ত রাত্রিসূক্ত সমাপ্ত ।

Narad Bhakti Sutras in Bangla নারদ ভক্তিসূত্র

নারদীয় ভক্তিসূত্র
১. এখন আমরা ভক্তি বা ঈশ্বরীয় প্রেমের ব্যাখ্যা করিব ।
২. একমাত্র ঈশ্বরের প্রতি পরম প্রেমকে ভক্তি বলে ।
৩. এই স্বর্গীয় প্রেম - তাহার অন্তর্নিহিত প্রকৃতিতে অবিনশ্বর স্বর্গীয় আনন্দ ।
৪. যাহা লাভ করিলে মানব চিরকালের জন্য সিদ্ধ হয়, অমর হয় এবং পরম তৃপ্তি লাভ করে।
৫. যাহা পাইবার পর মানুষ অন্য কিছু পাইবার বাঞ্ছা করেন না, তিনি আর কখনও শোক করেন না, তিনি ঘৃণা ও হিংসা হইতে মুক্ত হন, তিনি জীবনের অসার বস্তুতে আনন্দ লাভ করেন না এবং তিনি কোন বস্তু পাইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন না ।
৬. যে প্রেম লাভ করিলে ভক্ত প্রথমে আনন্দে পাগলের ন্যায় হন, পরে ঈশ্বরের উপলব্ধি হইলে জড়বৎ হন এবং আত্মার আনন্দে বিভোর হন ।
৭. ভক্তি সকল প্রকার বাসনার প্রতিবন্ধকস্বরূপ, তাই বাসনাপূরণের জন্য ভক্তিকে ব্যবহার করা চলে না ।
৮. নিরোধ বা ত্যাগ কথার অর্থ, লৌকিক ও বৈদিক সকল প্রকার কর্ম ঈশ্বরে উংসর্গীকরণ ।
৯. ভক্তের ত্যাগের অর্থ, ভক্তের সর্বান্তঃকরণ ঈশ্বরাভিমুখী করা এবং ভগবৎ-প্রেমের প্রতিবন্ধক বিষয় ও বস্তু পরিহার করা ।
১০. ঐকান্তিক ভক্তির অর্থ - অন্য সকল আশ্রয় ত্যাগ করিয়া ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করা।
১১. ভগবৎ-প্রেমের প্রতিবন্ধক কর্মসমূহ পরিহার করা, অর্থাৎ ভগবদ্ভক্তির অনুকূল সাংসারিক ও পবিত্র কর্মসমূহের অনুষ্ঠান ।
১২. আধ্যাত্মিক জীবন ঈশ্বরে দৃঢ়প্রতিষ্ঠ না হওয়া পর্যন্ত শাস্ত্রবাক্য মানিয়া চলিতে হইবে ।
১৩. অন্যথা করিলে পতিত হইবার আশঙ্কা আছে ।
১৪. লৌকিক কর্ম করা ততদিন প্রয়োজন, যতদিন না ভক্তি পাকা হয়। কিন্তু দেহরক্ষার জন্য সকল কর্ম - যথা পান - ভোজনাদি করিতে হয় ।
১৫. বিভিন্ন মতানুসারে মুনিগণকর্তৃক বিভিন্নভাবে ভক্তির লক্ষণসমূহ বর্ণিত হইয়াছে ।
১৬. পরাশর-পুত্র ব্যাস ভক্তির সংজ্ঞা দিয়েছেন - পূজাদি ও তদনুরূপ কর্মের প্রতি অনুরাগ ।
১৭. মহর্ষি গর্গের মতে ভক্তির সংজ্ঞা - ঈশ্বরের নাম শ্রবণ ও কীর্তনের প্রতি অনুরাগ ।
১৮. মহর্ষি শান্ডিল্য চিত্তবিক্ষেপকারী চিন্তা ত্যাগ এবং আত্মাতে প্রীতিলাভ করাকে 'ভক্তি' সংজ্ঞা দিয়েছেন ।
১৯. নারদের মতে ভক্তির লক্ষণ - যখন সকল চিন্তা, সকল কথা ও সকল কর্ম ইষ্টপদে সমর্পণ করা হয়, যখন ক্ষণেকের জন্য ইষ্টকে ভুলিলে অবস্থা শোচনীয় হয়, তখন ভক্তির সঞ্চার হয় ।
২০. ভক্তির পরিপূর্ণ প্রকাশের দৃষ্টান্ত আছে ।
২১. যেমন ব্রজগোপীগণের হইয়াছিল ।
২২. ব্রজগোপীগণ কৃষ্ণকে প্রেমিকরূপে পূজা করিলেও তিনি যে স্বয়ং ভগবান্ - এ কথা ভুলিয়া যান নাই ।
২৩. যদি 'কৃষ্ণ যে স্বয়ং ভগবান্' এই জ্ঞান তাঁহাদের না থাকিত, তাহা হইলে তাঁহাদের প্রেম  ভ্রষ্টা নারীদের উপপতির প্রতি আসক্তির সমান বলিয়া গন্য হইতো ।
২৪. প্রেমাস্পদের সুখে সুখী হওয়া নয়, কামে শুধু আত্মসুখের বাসনা থাকে ।
২৫. কর্ম, জ্ঞান ও যোগ(রাজযোগ) অপেক্ষা ভক্তি মহত্তর ।
২৬. কেন না, ভক্তি আধ্যাত্মিক জীবনের শেষ পরিণতি ও লক্ষ্য, অন্য পথগুলি মানুষকে এই উপলব্ধির দিকে চালিত করে ।
২৭. অহমিকার প্রতি ঈশ্বরের দ্বেষ এবং দীনতার প্রতি তাঁর প্রীতি থাকার জন্য ভক্তি সর্বোত্তম বলিয়া বিবেচিত হয় ।
২৮. কেহ কেহ মনে করেন, ভক্তিলাভের উপায় জ্ঞান ।
২৯. আবার কাহারও মতে জ্ঞান ও ভক্তি পরস্পরের উপর নির্ভরশীল ।
৩০. নারদের মতে ভক্তি নিজেই নিজের ফলস্বরূপ ।
৩১. ৩২. কেবলমাত্র রাজার বিষয় জানিয়া ও রাজগৃহ দেখিয়া কেহ রাজাকে সন্তুষ্ট করিতে পারে না । খাদ্যদ্রব্যের গুণাগুণ জানিলে ও খাদ্যদ্রব্য দেখিলেই কাহারও ক্ষুধার শান্তি হয় না। সেইরূপ ভক্তি না আসা পর্যন্ত শুধু ঈশ্বরের জ্ঞান ও ধারণাদ্বারা কেহ সন্তোষলাভ করিতে পারে না ।
৩৩. অতএব, (জন্ম, মৃত্যু, পুনর্জন্ম এই আপেক্ষিক জগতের বিপরীতমুখী অন্যান্য যুগ্মবস্তু সকলের) সীমাবদ্ধ অবস্থার ও বন্ধনের হাত হইতে যাঁহারা মুক্তি চান, তাঁহারা শ্রেষ্ঠ লক্ষ্যরূপে পরাভক্তির আশ্রয় গ্রহণ করিবেন ।
৩৪. আচার্যগণ স্তোত্র ও সঙ্গীতদ্বারা নিম্নলিখিতভাবে প্রেমাভক্তি লাভের উপায়সমূহ বর্ণনা করিয়াছেন ।
৩৫. পরাভক্তি লাভ করিতে হইলে ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয় ত্যাগ করিতে হয় ও তাহার প্রতি আসক্তিও ত্যাগ করিতে হয় ।
৩৬. নিরবচ্ছিন্নভাবে সতত ভগবানের ভজনাদ্বারা পরাভক্তি লাভ হয় ।
৩৭. জীবনের সকল কর্মে নিযুক্ত থেকেও ভগবানের গুণ শ্রবণ ও কীর্তনদ্বারা ভক্তি লাভ হয় ।
৩৮. প্রধানতঃ মহাপুরুষের কৃপায় ভক্তি লাভ হয় ।
৩৯. কিন্তু সাধুসঙ্গ দুর্লভ, কারণ সাধু চিনিতে পারা খুব কঠিন; কিন্তু সাধুসঙ্গ লাভ হইলে তাহার ফল অব্যর্থ ।
৪০. একমাত্র ভগবৎ-কৃপাতেই মহাপুরুষ-সঙ্গ লাভ করা যায় ।
৪১. ভক্ত ও ভগবানে ভেদ নাই ।
৪২. অতএব মহাপুরুষের কৃপালাভের জন্য প্রার্থনা কর ।
৪৩. সর্বপ্রকারে দুঃসঙ্গ ত্যাগ কর ।
৪৪. অসৎসঙ্গ ত্যাগ করা উচিত, কারণ ইহা কাম, ক্রোধ, মোহ, স্মৃতিভ্রংশ, বুদ্ধিনাশ ও সর্বনাশের কারণ ।
৪৫. কামক্রোধাদি রিপু প্রথম অবস্থায় ক্ষুদ্র তরঙ্গের ন্যায় থাকে, কিন্তু অসৎসঙ্গের ফলে ফলে ইহারা বিক্ষুব্ধ সমুদ্রের ন্যায় বিশাল আকার ধারণ করে ।
৪৬. মায়াকে কে অতিক্রম করতে পারেন? যিনি সর্বপ্রকার আসক্তি ত্যাগ করেন, যিনি মহাপুরুষগণের সেবা করেন, যিনি 'আমি' ও 'আমার' বোধ হইতে মুক্ত ।
৪৭. যিনি নির্জনে বাস করেন, সংসারের সকল বন্ধন ছিন্ন করেন, যিনি তিনগুণের অতীত হন এবং নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যও ঈশ্বরের উপর নির্ভর করেন ।
৪৮. যিনি কর্মফল ত্যাগ করেন, স্বার্থদুষ্ট সকল কর্ম ত্যাগ করেন এবং দ্বন্দ্বাতীত হন, ( তিনি মায়া অতিক্রম করেন ) ।
৪৯. যিনি শাস্ত্রীয় কর্ম ও অনুষ্ঠানাদিও ত্যাগ করেন এবং ঈশ্বরের প্রতি অবিচ্ছিন্ন অনুরাগ লাভ করেন, তিনি মায়া অতিক্রম করেন ।
৫০. এইরূপ ভক্ত নিশ্চয়ই মায়ামুক্ত হন এবং অপরকেও মায়ামুক্ত হইতে সাহায্য করেন ।
৫১. প্রেমের স্বরূপ বাক্যদ্বারা প্রকাশ করা যায় না ।
৫২. ইহা বোবা ব্যক্তির রসাস্বাদনের অনুভব প্রকাশ করিবার চেষ্টার মতো ।
৫৩. ( অনির্বচনীয় হইলেও ) এই প্রেম লাভ করিয়াছেন - এইরূপ মহাপুরুষে এই প্রেম প্রকাশ পায় ।
৫৪. এই প্রেম গুনরহিত, ইহা সকল প্রকার স্বার্থপর বাসনামুক্ত। ইহা অনুক্ষন বর্ধনশীল, ইহা অবিচ্ছিন্ন, সূক্ষ্মতম অপেক্ষা সূক্ষ্মতর উপলব্ধি ।
৫৫. ভক্ত যখন এই প্রেম লাভ করেন, তখন তিনি তাঁহার প্রেমাস্পদকে সর্বত্র দর্শন করেন, সর্বত্র তাঁহার বিষয় শ্রবণ করেন, কেবল তাঁহার কথাই বলেন ও তাঁহাকে চিন্তা করেন ।
৫৬. সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ - এই তিনটির যে কোন একটি গুণের মনের উপর প্রাধান্য ভেদে এবং সংসারে বীতরাগ, জ্ঞানান্বেষক ভক্ত ও ঐহিক কামণা পূরণে অভিলাষী ভক্তের ঈশ্বরানুরাগের কারণ ভেদে প্রাথমিক ভক্তি তিন প্রকার ।
৫৭. এই তিন শ্রেণীর ভক্তের মধ্যে প্রথম শ্রেণী শ্রেষ্ঠ, তার পরের শ্রেণী মধ্যম ও তারও পরের শ্রেণী অধম ।
৫৮. অন্য সব পথ অপেক্ষা ভক্তিপথ সহজ ।
৫৯. প্রেম নিজেই প্রমাণস্বরূপ বলিয়া তাহার আর অন্য প্রমাণের প্রয়োজন নাই ।
৬০. ইহার প্রকৃতি শান্তি-স্বরূপ ও পরমানন্দ-স্বরূপ ।
৬১. নিজেকে, নিজের বলিতে সব কিছু বস্তুকে, এমন কি শাস্ত্রীয় আচারাদিকেও ভক্ত ঈশ্বরে সমর্পণ করিয়াছেন, তাই তিনি ব্যক্তিগত ক্ষতিরজন্য শোক করেন না ।
৬২. ঈশ্বরে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করা সত্ত্বেও ভক্তের লৌকিক কর্ম ত্যাগ করা উচিত নয়; কিন্তু ঈশ্বরে কর্মফল সমর্পণপূর্বক তিনি কর্ম করিবেন ।
৬৩. কাম, কাঞ্চন ও নাস্তিকতার বিষয়ে আলোচনা শ্রবণ করা উচিত নয় ।
৬৪. অভিমান, দম্ভ ও অনুরূপ দোষ ত্যাগ করিতে হইবে ।
৬৫. তোমার সকল কর্ম ঈশ্বরে সমর্পণ কর এবং কাম, ক্রোধ, অভিমান প্রভৃতি তোমার সকল রিপুকে ঈশ্বরাভিমুখী কর ।
৬৬. তিন প্রকার ভক্তি পার হইয়া নিজেকে ইষ্টের নিত্যদাস বা নিত্যকান্তা ভাবিয়া তাঁহার উপাসনা কর ।
৬৭. তাঁহারাই শ্রেষ্ঠ ভক্ত, যাঁহারা ভগবানকে ঐকান্তিকভাবে ভালবাসেন এবং তাঁহাদের ভালবাসা হয় একমাত্র ভালবাসার জন্যই ভালবাসা ।
৬৮. ভক্ত যখন ঈশ্বরের কথা বলেন, তখন তাঁহার কন্ঠস্বর রুদ্ধ হয়, অশ্রুপাত হয়, উল্লাসে রোমাঞ্চ হয় । এইরূপ ভক্ত শুধু যে তাঁহার বংশকে পবিত্র করেন, তাহা নহে, তাঁহার জন্মভূমিকে,পৃথিবীকেও পবিত্র করেন ।
৬৯. ভগবদ্ভক্ত এইসব ব্রহ্মজ্ঞ পুরুষ তীর্থসমূহকে পবিত্র করেন, তাঁহাদের কৃতকর্ম ই সুকর্মের নিদর্শন, তাঁহারা শাস্ত্রকে সৎ-শাস্ত্রে পরিণত করেন ( নব সমর্থন দেন ) ।
৭০. ভক্তগণের প্রত্যেকেই ঈশ্বরে তন্ময় হন ।
৭১. এইরূপ ভক্ত পৃথিবীতে বাস করিলে তাঁহাদের পিতৃপুরুষগণ আনন্দিত হন, দেবগণ আনন্দে নৃত্য করেন, পৃথিবী পবিত্র হয় ।
৭২. ভক্তগণের মধ্যে জাতি, বিদ্যা, রূপ, কুল, ধন, কর্ম প্রভৃতির জন্য কোন ভেদ নাই ।
৭৩. যেহেতু ভক্তগণ ঈশ্বরের আপন জন ।
৭৪. তর্ক-বিতর্ক অবলম্বন করিবে না ।
৭৫. তর্কের শেষ নাই, সন্তোষজনক কোন ফল তর্কদ্বারা পাওয়া যায় না ।
৭৬. ভক্তিমূলক শাস্ত্রপাঠের সময় শাস্ত্রীয় উপদেশের উপর ধ্যান কর ও উহা অনুসরন কর; ইহার ফলে তোমার হৃদয়ে ভগবদ্ভক্তি বর্ধিত হইবে ।
৭৭. সুখ, দুঃখ, বাসনা, লোভ প্রভৃতি হইতে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত ভক্তের একমুহূর্তকালও বৃথা যাইতে দেওয়া বা ঈশ্বর উপাসনার জন্য বিলম্ব করা উচিত নয় ।
৭৮. ভক্তের অহিংসা, সত্যবাদিতা, পবিত্রতা, দয়া, বিশ্বাস প্রভৃতি ধর্ম অনুশীলন করা উচিত ।
৭৯. সকল প্রকারে চিত্তবিক্ষেপকর চিন্তারহিত হইয়া দিবারাত্র একমাত্র ভগবানের ভজনা করা কর্তব্য ।
৮০. যেখানে এইভাবে ভগবানের উপাসনা করা হয় সেখানে অতি শীঘ্র ভক্তগণের মানসপটে তিনি প্রকাশিত হন ।
৮১. শাশ্বতসত্যের প্রতি ভক্তি অবশ্যই শ্রেষ্ঠভক্তি ।
৮২. এই দিব্যপ্রেম একাদশটি বিভিন্নরূপে প্রকাশ পায়:
(১) ভক্ত ভগবানের নামগুণগান ও কীর্তন করিতে ভালবাসেন ।
(২) তিনি তাঁহার অতি মনোরম সৌন্দর্য ভালবাসেন ।
(৩) তিনি তাঁহাকে তাঁহার হৃদয়ের পূজা নিবেদন করিতে ভালবাসেন ।
(৪) তিনি তাঁহার উপস্থিতি অবিরাম ধ্যান করিতে ভালবাসেন ।
(৫) তিনি ভগবানের দাস - এই চিন্তা করিতে ভালবাসেন ।
(৬) তিনি তাঁহাকে সখারূপে ভালবাসেন ।
(৭) তিনি তাঁহাকে সন্তানরূপে ভালবাসেন ।
(৮) তিনি তাঁহাকে দয়িত বা প্রিয়তম কান্তরূপে ভালবাসেন ।
(৯) তিনি তাঁহার সম্পূর্ণ শরণাগত হইতে ভালবাসেন ।
(১০) তিনি তাঁহার ভিতর সম্পূর্ণ অভিনিবিষ্ট হইতে ভালবাসেন ।
(১১) তিনি তাঁহার বিরহযন্ত্রণা ভোগ করিতে ভালবাসেন ।
৮৩. ভক্তি-সাধনার আচার্যগণ একমত হইয়া লোকমত গ্রাহ্য না করিয়া এই প্রকার উপদেশ দিয়াছেন । সেইসকল মহান্ আচার্যের নাম: কুমার, ব্যাস, শুক, শাণ্ডিল্য,গর্গ, বিষ্ণু, কৌণ্ডিন্য, শেষ, উদ্ধব, আরুণি, বলি, হনুমান, বিভীষণ এবং আরও অনেক ।
৮৪. যিনি নারদ-বর্ণিত মঙ্গলদায়ক দিব্যপ্রেম বিশ্বাস করেন এবং শ্রদ্ধাসহকারে এই সকল উপদেশে বিশ্বাস স্থাপন করেন, তিনি ভগবৎপ্রেমিক হন, পরমসুখ লাভ করেন এবং জীবনের সর্বোচ্চ লক্ষ্যে উপনীত হন ।

Wednesday 19 October 2016

Devi Bhagwat: Devi Bhagwat Mahatmya : Chapter 1, দেবী ভাগবত কথা

দেবী ভাগবত পুরাণ
            শ্রীমদ্দেবীভাগবত-মাহাত্য
প্রথমোধ্যায়
ঋষিগণ তথা ঋষি সূতের সংবাদ, দেবী ভাগবতের মাহাত্য
যিনি সৃষ্টিকালে সর্গশক্তি, স্থিতিকালে পালন শক্তি তথা সংহারকালে রুদ্রশক্তি রূপে বিরাজ করেন, অখিল জগত যার মনোরঞ্জনের সামগ্রী; পরা, পশ্যন্তি, মধ্যমা, বৈখরী বাণী রূপে যিনি বিরাজমানা তথা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শঙ্কর দ্বারা যিনি আরাধিতা, সেই ভগবতী আদ্যা আমাদের বাণীকে সুশোভিত করুন ।।১।।
নারায়ণ ও নর (বদরিকাশ্রমের দুই ঋষি) এবং নরোত্তম (বিষ্ণু) ও দেবী সরস্বতীকে প্রণাম করিয়া ও ব্যাসদেবকে প্রণাম করিয়া জয় (সংসার জয়কারী পুরানাদি) গ্রন্থ পাঠ করিবে ।।২।।
ঋষিগণ কহিলেন -
হে ঋষি সূত ! আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। আপনি ব্যাসদেবের কাছ হইতে শিক্ষাপ্রাপ্ত। আপনি বহুবর্ষ জীবিত থেকেছেন। হে ভগবান ! আপনি আমাদের মনপ্রসন্ন করার মত পবিত্র কথা শোনাবার কৃপা করুন ।।৩।।
ভগবান বিষ্ণুর অবতরণের পবিত্র কথা সম্পুর্ণ পাপের সংহারকারী এবং অত্যন্ত অদ্ভুত। আমরা ভক্তিপুর্বক তার শ্রবণ করেছি ।।৪।।
ভগবান শিবের দিব্য চরিত্র, ভস্ম, এবং রুদ্রাক্ষ ধারণ করার মহিমা তথা এর ইতিহাসও আপনার মুখারবিন্দ হইতে শ্রবণ করার সুঅবসর আমাদের প্রাপ্ত হইছে ।।৫।।
এবার আমরা সেই কথা শ্রবণ করতে ইচ্ছুক যা পরম পবিত্র তথা যার প্রভাবে মনুষ্য সুগমতাপুর্বক মুক্তি আর মুক্তির সম্পুর্ণ অধিকারী হয়ে ওঠে ।।৬।।
আপনি হইতে শ্রেষ্ঠ অন্য কোনও সন্দেহনিবারণকারীকে আমরা দেখি না। আপনি আমাদের মুখ্য-মুখ্য কথা শোনাবার কৃপা করুন, যাতে কলিযুগের মনুষ্যও সিদ্ধি লাভ করতে পারে ।।৭।।
ঋষি সূত কহিলেন -
হে ঋষিগণ ! তোমরা বড়ই ভাগ্যশালী। জগতকল্যাণ হেতু তোমারা বড়ই উত্তম প্রশ্ন করেছ। অতএব সম্পুর্ণ শাস্ত্রের যা সাররূপ, সেই প্রসঙ্গ বিশদরূপে তোমাদের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি ।।৮।।
সমস্ত তীর্থ, পুরাণ এবং ব্রত নিজ নিজ শ্রেষ্ঠতার বর্ণনা করে ততকালই গর্জন করে যতকাল মনুষ্য সম্যকরূপে দেবীভাগবত শ্রবণ না করে ।।৯।।
মনুষ্যগণের জন্য পাপরূপি অরণ্য ততকালই দুঃখপ্রদ এবং কণ্টকময় হয় যতকাল দেবীভাগবতরূপী পরশু উপলব্ধ না হয় ।।১০।।
গ্রহণরূপী ঘোর অন্ধকার ততকালই কষ্ঠপ্রদ হয়, যতকাল দেবীভাগবতরূপী সুর্যের উদয় হয় না ।।১১।।
ঋষিগণ কহিলেন -
হে মহাভাগে সূত ! আপনি বক্তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। সেই পুরাণ কেমন এবং তাহাকে শ্রবণ করিবার কোন বিধি আছে ।।১২।।
কত দিবসে এই কথা সম্পূর্ণ হয়? এই কথায় কোন দেবতার পূজা হওয়া উচিত তথা কতজন মনুষ্য এই কথা পুর্বে শ্রবণ করেছেন এবং তাদের কোন-কোন অভিলাষ পূর্ণ হয়েছে? সেই সব আমাদেরকে শোনাবার কৃপা করুন ।।১৩।।
ঋষি সূত কহিলেন -
মহর্ষি ব্যাসদেব ভগবান বিষ্ণুর অংশ। পরাশর মুনি তার পিতা আর দেবী সত্যবতী মাতা। ব্যাসদেব বেদকে চতুর্ভাগে বিভাজিত করে তার শিষ্যদের পড়িয়েছিলেন ।।১৪।।
কিন্তু যারা সংস্কারহীন, নীচ কুলে উত্পন্ন, বেদ পাঠের অনধিকারী এবং নারীগণ তথা মুর্খজন, তাদের ধর্মজ্ঞান কেমন করে হবে - এই চিন্তা তার মনে জাগ্রত হল ।।১৫।।
তখন স্বয়ং মনে বিচার করে তিনি উক্ত প্রাণিগণের ধর্মজ্ঞানার্থে পুরাণ-সংহিতার সম্পাদন করলেন ।।১৬।।
অষ্টাদশ পুরাণের রচনা করে তিনি আমাকে পড়ালেন। মহাভারতের কথাও শোনালেন ।।১৭।।
সেই সময় ভুক্তি এবং মুক্তি প্রদানকারী দেবীভাগবত নামক পুরাণের রচনা করলেন। স্বয়ং তার বক্তা হলেন এবং রাজা জনমেজকে শ্রোতা হওয়ার সুঅবসর প্রদান করলেন ।।১৮।।
পুর্ব সময়ের কথা - মহারাজা পরীক্ষিতের পুত্র রাজা জনমেজকে তক্ষক সর্প দংশন করেছিল। তার দুর্গতি-নিবারণের জন্য রাজা জনমেজ দেবীভাগবত শ্রবণ করলেন ।।১৯।।
বেদব্যাসদেবের মুখারবিন্দ হতে নয় দিবসে এর শ্রবণ-বিধি সম্পূর্ণ করলেন। তিনি ত্রিলোক জননী ভগবতী আদ্যাশক্তির বিধিপূর্বক পূজনও করতেন ।।২০।।
নবাহ যজ্ঞ সমাপ্ত হওয়ার পর তত্ক্ষণ মহারাজ পরীক্ষিত ভগবতীর পরমধামকে প্রাপ্ত হল। দিব্য-রূপ ধারণ করে তিনি সেই স্থানে গমন করলেন ।।২১।।
পিতা পরমধাম প্রাপ্ত হয়েছে এই দর্শন করিয়া রাজা জনমেজের অপার হর্ষ হল। তিনি মুনিবর ব্যাসদেবের আচারমত যথাযথ পূজা করলেন ।।২২।।
অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে পরম এবং সর্বোত্তম এই দেবীভাগবতপুরাণ। এই পুরাণ ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ চতুর্পুরুষার্থের ফলদায়ী ।।২৩।।
যে মানব ভক্তিপূর্বক দেবীভাগবত কথা শ্রবণ করে, সিদ্ধি সদা তার সংনিকট খেলা করে। অতএব তার নিরন্তর এই পুরাণের শ্রবণ করা উচিত ।।২৪।।
যে নর অর্থ বুঝে ভক্তিভরে দিবসে অর্ধ শ্রবণ করে বা মুহূত্তক্ষণও শ্রবণ করে তার কদাচিৎও দুর্গতি হয়ে না ।।২৫।।
সর্বযজ্ঞের, সর্বতীর্থের, সর্বদানের যা ফল লাভ হয়, তাহা সর্ব মিলিত রূপে একবারেই এই পুরাণ শ্রবণ করলে লাভ হয় ।।২৬।।
সত্যযুগ, ত্রেতা এবং দ্বাপরে অনেক ধর্ম ছিল, কিন্তু কলিকালের জন্য এক পুরাণ-শ্রবণই ধর্ম। এর অতিরিক্ত মনুষ্যকে উদ্ধার করার আর দ্বিতীয় কোন ধর্ম নেই ।।২৭।।
কলিকালের মনুষ্যগণ ধর্ম তথা সদাচারহীন এবং অল্পায়ু। তাদের কল্যাণের জন্য ভগবান ব্যাসদেব পুরাণ-সঙ্গক এই অমৃতরসের নির্মাণ করেছেন ।।২৮।।
অমৃতপান করে কেবল একজন মনুষ্যই অজর-অমর হয় কিন্তু ভগবতী কথারূপী অমৃত সম্পূর্ণ কূলকে অজর-অমর করে দেয় ।।২৯।।
দেবীভাগবতের শ্রবণে মাস এবং দিবসের কোন বিশেষ নিয়ম নেই। মনুষ্যগণ সদাই এর শ্রবণ করতে পারে ।।৩০।।
আশ্বিন, চৈত্র, বৈশাখ আর জৈষ্ঠ মাসে তথা চার নবরাত্রে শ্রবণ করলে এই পুরাণ বিশেষ ফলদায়ী হয় ।।৩১।।
নবরাত্রে এর অনুষ্ঠান করলে মনুষ্যগণ সকল পুণ্যকর্মের থেকে অধির ফল প্রাপ্ত করে, অতএব একে "নবাহ-যজ্ঞ" বলা হয় ।।৩২।।
যারা কলুষিত বিচারযুক্ত, পাপী, মুর্খ, মিত্রদ্রোহী, বেদের নিন্দাকারী, হিংসায় সংলগ্ন আর নাস্তিক, সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরও কলিযুগে এই নবাহ-যজ্ঞের দ্বারা নিস্তার হয় ।।৩৩।।
যেই অতিলোভী নরগণ অন্যের বস্তু হরণ করে নিজ দ্বারে আনে এমন পাপভারে কলুষিত নরগণ, গো দেবতা তথা ব্রাহ্মণের প্রতি ভক্তিহীনাও নবাহ যজ্ঞের দ্বারা শীঘ্রই পাপমুক্ত ও শুদ্ধ হয়ে যায় ।।৩৪।।
মহান তপ, ব্রত, তীর্থ, দান, নিয়ম, হবন তথা যজ্ঞ করেও মনুষ্যগণের কাছে যেই ফল দুর্লভ হয়ে থাকে, সেটাও নবাহ যজ্ঞের দ্বারা সুলভ হয়ে যায় ।।৩৫।।
গঙ্গা, গয়া, কাশী, নৈমিষারণ্য, মথুরা, পুষ্কর এবং বদরীবন আদি তীর্থের যাত্রা থেকেও সেই ফল প্রাপ্ত হয় না যা নবাহ্র পারায়ণ রূপী দেবী ভাগবত শ্রবণ যজ্ঞের দ্বারা প্রাপ্ত হয় ।।৩৬।।
অতএব সমস্ত পুরাণের মধ্যে দেবীভাগবত সর্বোত্তম পুরাণ। ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ প্রাপ্তি হেতু ইহাই সর্বোপরি সাধন ।।৩৭।।
সূর্য কন্যারাশিতে স্থিত হলে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথির দিবসে শ্রীমদ্দেবীভাগবতের পুস্তক স্বর্ণ সিংহাসনের উপর স্থাপিত করে ভক্তিপূর্বক যোগ্য ব্রাহ্মণকে দান করা উচিত। এমন করে সেই পুরুষ দেবীর প্রীতিভাজন হয়ে তার পরমপদের অধিকারী হয়ে যায় ।।৩৮-৩৯।।
যেই পুরুষ দেবীভাগবতের একটি শ্লোক অথবা অর্ধশ্লোকেরও ভক্তিভাবে নিত্য পাঠ করে, তার উপরে দেবী প্রসন্না হন ।।৪০।।
মহামারী ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগও তথা ঘোর উপসর্গ আদি অনেক প্রকারের উৎপাতও দেবীভাগবতের শ্রবণমাত্রই শমন হয়ে যায় ।।৪১।।
পুতনা আদি বালগ্রহকৃত তথা ভয়ঙ্কর ভূত-প্রেত, এই দেবী ভাগবত শ্রবণ করিলে আসেপাসেও ভ্রমণ করতে পারে না, তারা দুরে-দুরেই থাকে ।।৪২।।
যেই মনুষ্য ভক্তিপূর্বক দেবীভাগবতের পাঠ এবং শ্রবণ করে সে ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষফলের অধিকারী হয়ে যায় ।।৪৩।।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন প্রসেনের সন্ধানে গিয়েছিলেন, এবং বহু কাল পরেও ফিরলেন না, তখন বসুদেব এই দেবীভাগবত পুরাণ শ্রবণ করলেন। এর প্রভাবে তিনি তার প্রিয় পুত্র শ্রীকৃষ্ণকে শীঘ্র প্রাপ্ত করে আনন্দলাভ করেছিলেন ।।৪৪।।
যেই পুরুষ দেবীভাগবতকথা ভক্তি সহকারে পাঠ করে এবং শ্রবণ করে, ভুক্তি আর মুক্তি তার করতলগত হয়ে থাকে ।।৪৫।।
এই কথা অমৃতস্বরূপা, এর শ্রবণে অপুত্র পুত্রবান, দরিদ্র ধনবান এবং রোগী আরোগ্যবান হয়ে যায় ।।৪৬।।
যেই স্ত্রী বন্ধ্যা, কাকবন্ধ্যা তথা মৃতবৎসা তারাও দেবীভাগবত কথা শ্রবণ করে দীর্ঘজীবী পুত্রের জননী হবার সৌভাগ্য প্রাপ্ত করে ।।৪৭।।
যেই ঘরে শ্রীদেবীভাগবতের পুস্তক নিত্য পূজিত হয়, সেই ঘর তীর্থস্বরূপ হয়ে যায়। সেইস্থানের স্থাই ব্যক্তিদের পাপ নাশ হয় ।।৪৮।।
যেই ব্যক্তি অষ্টমী, নবমী অথবা চতুর্দশীর দিবসে ভক্তিসহকারে এই কথা শ্রবণ বা পাঠ করে, সে পরমসিদ্ধি উপলব্ধ করে ।।৪৯।।
যে এর পাঠ করে সে যদি ব্রাহ্মণ হয় তবে প্রকাণ্ড বিদ্বান, ক্ষত্রিয় হলে মহান শূরবীর, বৈশ্য হলে প্রচুর ধনের অধিকারী এবং শূদ্র হলে নিজ কুলে সর্বোত্তম হয়ে যায় ।।৫০।।
ইতি শ্রীস্কন্দপুরাণের মানসখণ্ডে শ্রীমদ্দেবীভাগবতমাহাত্যে দেবীভাগবতশ্রবণমাহাত্যবর্ণন নামক প্রথমোধ্যায়

Friday 14 October 2016

কীলকস্তব অনুবাদ Kilakstab Bengali Translation

শ্রী  চণ্ডী মাহাত্য
                        কীলকস্তব
এই কীলকস্তবের ঋষি-মহাদেব, ছন্দ-অনুষ্টুপ্ ও  দেবতা-মহাসরস্বতী।
শ্রী জগদম্বার প্রীতির নিমিত্ত চণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে কীলকস্তব-পাঠের প্রয়োগ হয়।
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
ঋষি মার্কণ্ডেয় স্বীয় শিষ্যগণকে নিম্নোক্ত কীলকস্তব বলিলেন-
নির্মল জ্ঞান যাঁহার দেহ, বেদত্রয় যাঁহার তিনটি দিব্য চক্ষু, যিনি মোক্ষপ্রাপ্তির কারণ এবং যাঁহার কপালে অর্ধচন্দ্র শোভিত, সেই মহাদেব শিবকে প্রণাম করি ।।১।।
মন্ত্রের যে অভিকীলক অর্থাৎ মন্ত্রসিদ্ধিতে বিঘ্ন উৎপাদনকারী শাপরূপী কীলককে যিনি নিবারণ করেন সেই শ্রীশ্রীচণ্ডীকে সম্পূর্ণরূপে জানা প্রয়োজন (এবং জানার পর তার উপাসনা করা প্রয়োজন)। যদিও চণ্ডী ছাড়া অন্য মন্ত্রও যে নিরন্তর জপ করে, সেও মঙ্গল লাভ করে ।।২।।
তারও উচ্চাটন আদি কর্ম সিদ্ধি হয় এবং সে সমস্ত দুর্লভ বস্তু প্রাপ্ত হয়; তথাপি যে অন্য কোনও মন্ত্র জপ না করে কেবলমাত্র এই চণ্ডী স্তোত্রের দ্বারা দেবীর স্তুতি করে, তাঁর স্তুতিমাত্রেই সেই সচ্চিদানন্দস্বরূপিণী দেবী প্রসন্না হন ।।৩।।
নিজের কর্মে সিদ্ধিলাভের জন্য তার (সেই মানুষের) মন্ত্র, ঔষধ বা অন্য কোনও সাধনার প্রয়োজন থাকে না। এমন কি জপ না করেও তার উচ্চাটন ইত্যাদি সমস্ত আভিচারিক কর্ম সিদ্ধ হয়ে যায় ।।৪।।
শুধু এইই নয়, তার সমস্ত অভীষ্ট পর্যন্ত সিদ্ধ হয়। প্রশ্ন জাগতে পারে যে কেবল চণ্ডীর উপাসনাতেই যখন অথবা চণ্ডী ছাড়া অন্য মন্ত্রের উপাসনাতেও যখন সব কাজ একইভাবে সিদ্ধ হয়, সেক্ষেত্রে এর মধ্যে কোনটা শ্রেষ্ঠ? এই প্রশ্নের উত্তরে ভগবান শঙ্কর সমস্ত জিজ্ঞাসুদের বলেছেন যে, চণ্ডীর সম্পুর্ণ স্তোত্রই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং মঙ্গলময় ।।৫।।
তারপর ভগবতী চণ্ডিকার সপ্তশতীনামক স্তোত্র মহাদেব গুপ্ত করে দিলেন। সপ্তশতী পাঠে যে পুণ্যলাভ হয় সেই পুণ্যের কখনও ক্ষয় হয় না; কিন্তু অন্য মন্ত্রের জপের পুণ্যফল একদিন না একদিন শেষ হয়ে যায়। অতএব ভগবান শিব যে অন্য মন্ত্রের চেয়ে সপ্তশতীর শ্রেষ্ঠতা প্রতিপাদন করেছেন, তাকে সঠিক বলে গ্রহণ করা উচিত ।।৬।।
অন্য মন্ত্রজপকারী পুরুষও যদি সপ্তশতীর (চণ্ডীর) স্তোত্র এবং জপের অভ্যাস করে, তাহলে সেও পূর্ণরূপে মঙ্গলপ্রাপ্ত হয়, এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। যে সাধক কৃষ্ণচতুর্দশী অথবা কৃষ্ণাষ্টমীতে একাগ্রচিত্তে ভগবতীর সেবায় নিজের সর্বস্ব সমর্পণ করে এবং তারপর প্রসাদরূপে তা গ্রহণ করে, তার প্রতি ভগবতী যেমন প্রসন্না হন অন্য কোনও ভাবেই দেবী এরকম প্রসন্না হন না। সিদ্ধির প্রতিবন্ধকস্বরূপ কীলকদ্বারা মহাদেব এই স্তোত্রকে কীলিত অর্থাৎ দৃঢ়ভাবে বদ্ধ করে রেখেছেন ।।৭-৮।।
পূর্বোক্ত বিধিমত কীলকবিহীন অর্থাৎ কীলককে   খুলে যে প্রতিদিন স্পষ্টউচ্চারণে এই সপ্তশতী স্তোত্র (চণ্ডী) পাঠ করে সে দেবীর পার্ষদ হয়ে সিদ্ধ ও গন্ধর্বদের সঙ্গে বাস করে ।।৯।।
সর্বত্র বিচরণ করেও এই সংসারে তার কোনও বা কোথাও ভয় থাকে না। তার অপমৃত্যু হয় না এবং মৃত্যুর পর সে মোক্ষলাভ করে ।।১০।।
অতএব কীলককে ভাল করে বুঝে এবং তাকে কীলকবিহীন করে তবেই সপ্তশতী পাঠ করা উচিত। যে তা না করে, তার বিনাশ হবে। এইজন্য কীলক ও নিষ্কীলক জ্ঞান লাভ করলে পরে তবেই এই স্তোত্র নির্দোষ হয় এবং পণ্ডিতগণ এই নির্দোষ স্তোত্রই পাঠ করেন ।।১১।।
নারীদের যা কিছু সৌভাগ্য, সবই অনুগ্রহের ফল। সুতরাং এই কল্যাণকারী স্তোত্র সর্বদা পাঠ করা উচিত ।।১২।।
এই স্তোত্র নিম্নস্বরে পাঠ করলে অল্প ফলদায়ী এবং উচ্চৈঃস্বরে পাঠ করলে পূর্ণফলদায়ী হয়। সুতরাং উচ্চৈঃস্বরেই এই স্তোত্র পাঠ করা উচিত ।।১৩।।
যে দেবীর অনুগ্রহে ঐশ্বর্য, সৌভাগ্য, আরোগ্য, সম্পত্তি, শত্রুনাশ এবং পরম মোক্ষলাভ পর্যন্ত হয়, সেই মঙ্গলময়ী জগদম্বাকে মানুষ কেন স্তুতি না করবে? ।।১৪।।
দেবীর কীলক স্তোত্র সম্পূর্ণ হল ।

Sunday 9 October 2016

অর্গলাস্তোত্র Argalastotram

শ্রী চণ্ডী মাহাত্য
                      অর্গলাস্তোত্র
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
এই অর্গলাস্তোত্রের ঋষি হলেন বিষ্ণু, ছন্দ হল অনুষ্টুপ ও দেবতা হলেন শ্রীমহালক্ষ্মী। জগজ্জননীর প্রীতির জন্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে এই স্তোত্র পাঠ করা হয়।
মার্কণ্ডেয় বললেন–
হে দেবী, তুমি সর্বোৎকৃষ্টা জয়যুক্তা দেবী জয়ন্তী; তুমি জন্মমৃত্যুবিনাশিনী মোক্ষপ্রদায়িনী দেবী মঙ্গলা; তুমি সর্বসংহারকারিণী কালী; তুমি সুখদায়িনী ভদ্রকালী; আবার তুমিই প্রলয়কালে ব্রহ্মা প্রমুখের মাথার খুলি হস্তে নৃত্যরতা কপালিনী। তুমি দুর্গা, কারণ বহু কষ্ট স্বীকার করে তবে তোমায় লাভ করা যায়; তুমি চৈতন্যময়ী কল্যাণময়ী শিবা; তুমি করুণাময়ী ক্ষমা; তুমি বিশ্বধারিণী ধাত্রী; তুমি দেবগণের পোষণকর্ত্রী স্বাহারূপে যজ্ঞভাগ গ্রহণ কর ও পিতৃগণের পোষণকর্ত্রী স্বধারূপে শ্রাদ্ধভাগ এবং তর্পণ গ্রহণ কর। তোমায় প্রণাম করি ।।১।।
হে দেবী চামূণ্ডা, তোমার জয় হোক। হে দেবী, তুমি জীবের দুঃখনাশকারিণী; তুমি সর্বভূতে অবস্থিতা; আবার তুমিই প্রলয়ের অন্ধকার স্বরূপিণী কালরাত্রি। তোমায় প্রণাম করি ।।২।।
হে দেবী, তুমি মধুকৈটভ নামক দুই অসুরকে বিনাশ করেছিলে। তুমি ব্রহ্মাকে বরপ্রদান করেছিলে। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৩।।
হে দেবী, তুমি মহিষাসুরমর্দিনী। আবার তুমিই ভক্তগণে সুখ প্রদান করে থাকো। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৪।।
হে দেবী, তুমি রক্তবীজ, চণ্ড ও মুণ্ড অসুরত্রয়কে বধ করেছিলে। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৫।।
হে দেবী, তুমি শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়কে বধ করেছিলে। আবার তুমিই তিন লোকের কল্যাণকারিনী। তোমায় প্রণাম করি। হে দেবী, তুমি ধূম্রলোচন অসুরকে বধ করেছিলে। আবার তুমিই ভক্তকে ধর্ম, অর্থ ও কাম প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৬।।
হে দেবী, ব্রহ্মা প্রমুখ দেবগণ তোমার পদযুগল বন্দনা করেন। তুমি সকল প্রকার সৌভাগ্য প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৭।।
হে দেবী, তোমার রূপ ও কার্য চিন্তার অগম্য। তুমি সকল শত্রুকে বিনাশ করে থাকো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৮।।
হে চণ্ডিকে, তুমি আশ্রিত ভক্তের পাপ নাশ করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৯।।
হে দেবী চণ্ডিকা, যে ভক্তিসহকারে তোমার স্তব করে, তুমি তার ব্যাধি নাশ করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১০।।
হে দেবী চণ্ডিকা, তুমি সতত যুদ্ধে বিজয়িনী ও পাপনাশিনী। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১১।।
হে দেবী, তুমি আমাকে সৌভাগ্য ও আরোগ্য প্রদান করো। আমাকে দাও পরম সুখ। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১২।।
হে দেবী, তুমি আমার কল্যাণ করো। আমাকে প্রদান করো বিপুল ঐশ্বর্য। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৩।।
হে দেবী, তুমি আমার শত্রুনাশের সহায়ক হও। আমাকে দাও প্রচুর বল। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৪।।
হে দেবী, দেবতা ও অসুরগণের মুকুটের মণি তোমার চরণপদ্মে লুটায়। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৫।।
তুমি আমাকে ব্রহ্মবিদ্যা, যশ ও ধন প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৬।।
হে দেবী, তুমি প্রবল পরাক্রমশালী দৈত্যের দর্প চূর্ণ করেছো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৭।।
হে দেবী চণ্ডিকা, তুমি প্রচণ্ড দৈত্যের দর্প হরণ করেছো। তোমার পায়ে সতত আমার প্রণাম রাখি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৮।।
হে চতুর্ভূজা দেবী, হে পরমেশ্বরী, ব্রহ্মা চার মুখে তোমার স্তব করেন। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৯।।
হে দেবী অম্বিকা, কৃষ্ণ সর্বদা ভক্তিসহকারে তোমার স্তব করেন। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২০।।
হে পরমেশ্বরী, হিমালয়ের কন্যা উমার পতি শিব সর্বদা তোমার স্তব করেন। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২১।।
শচীপতি ইন্দ্রের দ্বারা সৎভাবে পূজিতা হে পরমেশ্বরি ! তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২২।।
হে দেবী, তুমি ভক্তের হৃদয়ে প্রদান করো অপার আনন্দ। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২৩।।
হে দেবী, আমার মন বুঝে চলবে এমন মনোরমা পত্নী আমাকে প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২৪।।
হে উচ্চকুলে উৎপন্না গিরিসূতা, দুস্তর সংসারসমুদ্রে আমাকে রক্ষা করো তুমি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২৫।।
এই স্তোত্র পাঠ করিয়া মহাস্তোত্র (সপ্তশতমন্ত্রাত্মিকা চণ্ডী) পাঠ করা উচিত। এইরূপে সপ্তশতীর আরধনা করিলে জপসংখ্যাসম শ্রেষ্ঠ ফল প্রাপ্ত হয়। সাথে সাথে সে প্রভূত সম্পদাও লাভ করে ।।২৬।।
দেবীর অর্গলাস্তোত্র সম্পূর্ণ হল ।

Saturday 8 October 2016

Devi Kavach দেবী কবচ

শ্রী  চণ্ডী মাহাত্য                  
                       দেবী কবচ
এই দেবীকবচের ঋষি-ব্রহ্মা, ছন্দঃ-অনুষ্টুপ্ ও দেবতা চামুণ্ডা।
শ্রীচণ্ডিকাদেবীর প্রীতির জন্য চণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে দেবীকবচ পাঠের প্রয়োগ হয়।
ঔং চণ্ডিকা দেবীকে প্রণাম করি ।
মার্কেণ্ডেয় মুনি বললেন - পিতামহ! এই সংসারে পরম গোপনীয় তথা মানুষকে সর্বতোভাবে রক্ষাকারী এবং আজ পর্যন্ত যা আপনি অন্য কাউকে বলেননি, এরকম কোনও সাধন আমাকে বলুন ।।১।।
ব্রহ্মা বললেন - ব্রহ্মন ! এরকম সাধন তো একমাত্র দেবীকবচই আছে, যা গোপনীয় থেকেও গুহ্যতম, পবিত্র তথা সমস্থ প্রাণীবর্গের মঙ্গলকারী। হে মহামুনি, তা শ্রবণ করুন ।।২।।
প্রথম শৈলপুত্রী, দ্বিতীয় ব্রহ্মচারিণী, তৃতীয় চন্দ্রঘন্টা, চতুর্থ কুষ্মাণ্ডা, পঞ্চম স্কন্দমাতা, ষষ্ঠ কাত্যায়নী, সপ্তম কালরাত্রি, অষ্টম মহাগৌরী এবং নবম সিদ্ধিদাত্রী (মোক্ষদা)- ইহারা নবদুর্গা বলিয়া প্রকীর্তিতা। এই সকল নাম সর্বজ্ঞ বেদ কর্তৃক উক্ত হইয়াছে ।।৩-৫।।
অগ্নির দ্বারা দাহ্যমান, রণক্ষেত্রে শত্রুমধ্যে পতিত বা বিষম বিপদে সন্ত্রস্ত হইয়া যাহারা দেবীর শরণাগত হয়, তাহাদের রণসঙ্কটে কিছুমাত্র অশুভ ঘটে না এবং তাহাদের শোক ও দুঃখ-বিজড়িত বিপদ হয় না ।।৬-৭।।
যাহারা তোমাকে নিত্য ভক্তিভাবে স্মরণ করে, তাহাদের ঋদ্ধি (শ্রী) বৃদ্ধি হয়। হে দেবেশ্বরি ! যে তোমাকে স্মরণ করে তাহাকে যে তুমি রক্ষা কর তাহাতে কোনও সংশয় নাই ।।৮।।
চামুণ্ডা দেবী প্রেতের উপর আরূঢ়া। বারাহী মহিষের ওপর আসীনা। ঐন্দ্রীর বাহন ঐরাবত হাতী। বৈষ্ণবীদেবী গরুডের পৃষ্ঠে সমাসীনা ।।৯।।
মহেশ্বরী বৃষভের উপর আরূঢ়া। কৌমারীর বাহন ময়ূর। ভগবান বিষ্ণুর প্রিয়তমা লক্ষ্মীদেবী পদ্মফুলের আসনের ওপর বিরাজমানা এবং হাতেও পদ্মফুল ধারণ করেন ।।১০।।
বৃষভারূঢ়া ঈশ্বরীদেবী শ্বেতবর্ণা রূপ ধারণ করেছেন। ব্রাহ্মীদেবী হংসের ওপর বসা এবং সমস্থ রকম আভরণে ভূষিতা ।।১১।।
এইভাবেই সব মাতৃকাগণ সব রকম যোগশক্তিসম্পন্না এঁরা ছাড়া আরও অনেক দেবী রয়েছেন যাঁরা বহুপ্রকার আভরণে বিভূষিতা এবং নানা রত্নে শোভিতা ।।১২।।
এইসব দেবীগণ অতীব ক্রোধযুক্তা এবং ভক্তদের রক্ষার জন্য রথের উপর দৃশ্যত বসে আছেন। তাঁরা শঙ্খ, চক্র, গদা, শক্তি, হল ও মুসল, খেটক ও তোমর, পরশু ও পাশ, কুন্ত ও ত্রিশুল এবং উত্তম শার্ঙ্গ ধনুকাদি অস্ত্র-শস্ত্র নিজেদের হাতে ধারণ করে রয়েছেন। দৈত্যদের শরীর নাশ করা, ভক্তকে অভয়প্রদান এবং দেবতাদের কল্যাণ করা - তাঁদের শস্ত্রধারণের এই-ই উদ্দেশ্য ।।১৩-১৫।।
কবচ পাঠের প্রারম্ভে এইরকম প্রার্থনা করা দরকার - মহান রৌদ্ররূপ, অত্যন্ত ঘোর পরাক্রম, মহান বল ও মহান উৎসাহশালিনী  দেবী! তুমি মহান ভয়ের নাশকারী, তোমাকে নমস্কার ।।১৬।।
তোমার দিকে তাকানোও কঠিন। শত্রুর ভয়বর্দ্ধিনী জগদম্বিকে! আমাকে রক্ষা করো। পূর্বদিকে ঐন্দী (ইন্দ্রশক্তি) আমাকে রক্ষা করুন। অগ্নিকোণে অগ্নিশক্তি, দক্ষিণ দিকে বারাহী এবং নৈঋতকোণে খড়্গধারিণী আমাকে রক্ষা করুন, পশ্চিম দিকে বারুণী এবং বায়ুকোণে মৃগারূঢ়া দেবী আমাকে রক্ষা করুন ।।১৭-১৮।।
উত্তরদিকে কৌমারী এবং ঈশানকোণে শূলধারিণী দেবী আমাকে রক্ষা করুন। ব্রহ্মাণি ! আপনি ঊর্ধ্বদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন এবং বৈষ্ণবীদেবী অধোদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন ।।১৯।।
এইভাবে শববাহনা চামুণ্ডাদেবী দশদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন। জয়া সামনের দিকে এবং বিজয়া পশ্চাৎদিক থেকে আমাকে রক্ষা করুন ।।২০।।
বামদিকে অজিতা এবং দক্ষিণদিকে অপরাজিতা আমাকে রক্ষা করুন। আমার শিখা দ্যোতিনী দেবী রক্ষা করুন। উমাদেবী আমার শিরোদেশে অবস্থান করে আমাকে রক্ষা করুন ।।২১।।
ললাটে মালাধরী রক্ষা করুন এবং যশস্বিনীদেবী আমার ভ্রূদ্বয় রক্ষা করুন। ত্রিনেত্রা দেবী আমার ভ্রূযুগলের মধ্যভাগ এবং যমঘন্টাদেবী নাসিকা রক্ষা করুন ।।২২।।
দুই চোখের মধ্যদেশকে শঙ্খিনী এবং কর্ণদ্বয় দ্বারবাসিনী দেবী রক্ষা করুন। কালিকাদেবী কপোলদ্বয় এবং ভগবতী শঙ্করী দেবী কর্ণমূল রক্ষা করুন ।।২৩।।
সুগন্ধাদেবী নাসিকাযুগল এবং চর্চিকাদেবী উপরোষ্ঠ রক্ষা করুন। অধরোষ্ঠে অমৃতকলা আর জিহ্বাকে সরস্বতীদেবী রক্ষা করুন ।।২৪।।
কৌমারী আমার দাঁত এবং চণ্ডিকা কণ্ঠপ্রদেশ রক্ষা করুন। চিত্রঘন্টা আমার গলঘন্টা এবং মহামায়া তালুতে অবস্থান করে তালুকে রক্ষা করুন ।।২৫।।
কামাক্ষী আমার চিবুক এবং সর্বমঙ্গলা আমার বাণীকে রক্ষা করুন। ভদ্রকালী গ্রীবাদেশ আর ধনুর্ধরী পৃষ্ঠবংশতে (মেরুদণ্ডে) অবস্থান করে তাকে রক্ষা করুন ।।২৬।।
কণ্ঠের বহির্দেশ নীলগ্রীবা এবং কণ্ঠনালীকে নলকূবরী রক্ষা করুন। দুই স্কন্দদেশ খড়্গিনী এবং আমার দুই বাহু বজ্রধারিণী রক্ষা করুন ।।২৭।।
আমার দুই হাতকে দণ্ডিনী এবং আঙ্গুলগুলিকে অম্বিকা দেবী রক্ষা করুন। শূলেশ্বরী আমার নখসমূহ রক্ষা করুন। কুলেশ্বরী কুক্ষিতে (পেটে) থেকে রক্ষা করুন ।।২৮।।
দুই স্তনকে মহাদেবী এবং মনকে শোকবিনাশিনী দেবী রক্ষা করুন। ললিতা দেবী হৃদয় এবং শূলধারিণী উদরে থেকে রক্ষা করুন ।।২৯।।
নাভিদেশে কামিনী এবং গুহ্যদেশকে গুহ্যেশ্বরী রক্ষা করুন। পূতনা ও কামিকা লিঙ্গকে এবং মহিষবাহিনী পায়ুকে রক্ষা করুন ।।৩০।।
কটিভাগে ভগবতী এবং বিন্ধ্যবাসিনী দুই জানুদেশ রক্ষা করুন। সমস্থ কামনাদায়িনী মহাবলা দেবী দুই জঙ্ঘাদেশ রক্ষা করুন ।।৩১।।
নারসিংহী গুল্ফ দুটি এবং তৈজসী দেবী দুই পায়ের পাতার উপরিদেশ রক্ষা করুন। শ্রীদেবী পায়ের আঙ্গুলগুলি এবং তলবাসিনী পায়ের পাতার তলদেশে অবস্থান করে তাদের রক্ষা করুন ।।৩২।।
ভয়ঙ্কররূপিণী দংষ্ট্রাকরালী দেবী নখগুলি এবং ঊর্ধ্বকেশিনী দেবী চুলগুলিকে রক্ষা করুন। লোমকূপগুলিকে কৌবেরী এবং ত্বককে বাগীশ্বরী দেবী রক্ষা করুন ।।৩৩।।
পার্বতী দেবী রক্ত, মজ্জা, চর্বি, মাংস, হাড় এবং মেদকে রক্ষা করুন। কালরাত্রি দেবী অন্ত্র আর মুকুটেশ্বরী দেবী পিত্তকে রক্ষা করুন ।।৩৪।।
মূলাধার আদি কমলকোশে পদ্মাবতী দেবী এবং কফে চূড়ামণি দেবী স্থিত হয়ে তাদের রক্ষা করুন। নখের জ্যোতিকে জ্বালামুখী দেবী রক্ষা করুন। যাঁকে কোনও অস্ত্রই ভেদ করতে পারে না, সেই অভেদ্যা দেবী শরীরের সমস্থ সন্ধিস্থানে অবস্থান করে তাদের রক্ষা করুন ।।৩৫।।
ব্রহ্মাণি! আপনি আমার বীর্যকে (শুক্র) রক্ষা করুন। ছত্রেশ্বরী ছায়াকে এবং ধর্মধারিণী দেবী আমার অহংকার, মন ও বুদ্ধিকে রক্ষা করুন ।।৩৬।।
হাতে বজ্রধারিণী রজ্রহস্তা দেবী আমার প্রাণ, অপান, ব্যান, উদান ও সমান বায়ুকে রক্ষা করুন। ভগবতী কল্যাণশোভনা আমার প্রাণকে রক্ষা করুন ।।৩৭।।
রস, রূপ, গন্ধ, শব্দ আর স্পর্শ এই সব বিষয়ের অনুভূতিকে যোগিনী দেবী রক্ষা করুন এবং সত্ত্বগুণ, রজোগুণ ও তমোগুণকে নারায়ণী দেবী সদাই রক্ষা করুন ।।৩৮।।
বারাহী দেবী আয়ুকে রক্ষা করুন, বৈষ্ণবী দেবী ধর্মকে এবং চক্রিণী দেবী যশ, কীর্তি, লক্ষ্মী, ধন এবং বিদ্যাকে রক্ষা করুন ।।৩৯।।
ইন্দ্রাণি! আপনি আমার গোত্র রক্ষা করুন। চণ্ডিকে! আপনি আমার পশুকুল রক্ষা করুন। মহালক্ষ্মী পুত্রদের রক্ষা করুন এবং ভৈরবী পত্নীকে রক্ষা করুন ।।৪০।।
সুপথা দেবী আমার পথ, ক্ষেমঙ্করী মার্গ, রাজদ্বারে মহালক্ষ্মী এবং সর্বব্যাপিনী বিজয়াদেবী আমাকে ভয় থেকে রক্ষা করুন।।৪১।।
দেবী ! যে সব জায়গা কবচ দিয়ে রক্ষিত হয়নি সুতরাং অরক্ষিত রয়েছে, সে সব আপনার দ্বারা সুরক্ষিত হোক; কারণ, আপনি বিজয়শালিনী ও পাপনাশিনী ।।৪২।।
মানুষ যদি নিজের শরীরের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা করে, তবে বিনা কবচে একপাও যাওয়া উচিত নয় - কবচ পাঠ করেই যাত্রা করা উচিত। কবচের দ্বারা সবদিক থেকে সুরক্ষিত মানুষ যেখানে যেখানে যায়, সেখানেই তার ধনলাভ হয় এবং সর্বকামপ্রদ বিজয় প্রাপ্ত হয়। যে যে অভীষ্ট প্রাপ্তির চিন্তা সে করে সেই সব তার অবশ্যই প্রাপ্তি হয়। সেই মানুষ এই পৃথিবীতে অতুলনীয় মহান ঐশ্বর্য লাভ করে ।।৪৩-৪৪।।
কবচের দ্বারা সুরক্ষিত মানুষ নির্ভীক হয়। যুদ্ধে তার কখনও পরাজয় হয় না এবং সে ত্রিলোকের পূজ্য হয় ।।৪৫।।
দেবীর এই কবচ দেবতাদেরও দুর্লভ। প্রতিদিন নিয়ম করে যে ত্রিসন্ধা শ্রদ্ধার সাথে এই কবচ পাঠ করে তার দৈবী কলা প্রাপ্তি হয় এবং সে ত্রিলোকে কোথাও পরাজিত হয় না। শুধু এইই নয় সে অপমৃত্যু থেকে রক্ষা পেয়ে একশ বছরেরও বেশী জীবিত থাকে ।।৪৬-৪৭।।
কলেরা, বসন্ত এবং কুষ্ঠ ইত্যাদি সমস্ত ব্যাধি থেকে সে মুক্ত থাকে। সিদ্ধি, আফিম, ধুতুরা ইত্যাদি উদ্ভিজ্জ বিষ, সাপ, বিছা ইত্যাদির দংশনজনিত জঙ্গম বিষ এবং আফিম এবং তৈলাদি সংযোগে কৃত্রিম বিষ। এই সব রকম বিষ থেকে সে রক্ষা পায়, এইসব তার কোনও অনিষ্ট করতে পারে না ।।৪৮।।
এই পৃথিবীতে মারণ, মোহন ইত্যাদি যতরকম অভিচারমূলক প্রয়োগ এবং তৎসম্পর্কিত মন্ত্র ও যন্ত্রসকল এইসব কিছু, কবচপাঠকের দৃষ্টিপাতেই নির্বিষ হয়ে যায়। কেবল তাই নয়, পৃথিবীতে বিচরনকারী গ্রামদেবতা, খেচর বিশেষ দেবগণ (কুলজা) জল-সম্পর্কীয় প্রকাশমান গণেরা, উপদেশমাত্র সিদ্ধিপ্রাপ্ত ক্ষুদ্রদেবতা, জন্মের সাথে সাথেই প্রকাশমান দেবতা, কুলদেবতা, মালা (কন্ঠমালা ইত্যাদি ডাকিনী, শাকিনী, অন্তরীক্ষচারী ভয়ানক ডাকিনী উপদেবতা), গ্রহ, ভুত, পিশাচ, যক্ষ, গন্ধর্ব, রাক্ষস, ব্রহ্মদৈত্য, বেতাল, কুষ্মাণ্ড এবং ভৈরব আদি অনিষ্টকারী দেবতাও এই কবচধারণকারী মানুষের দৃষ্টিপাতমাত্রই পালিয়ে যায়। কবচধারী পুরুষের রাজদরবারে সন্মানবৃদ্ধি হয়। এই কবচ মানুষের তেজবৃদ্ধিকারী এক অতি উত্তম ।।৪৯-৫২।।
কবচপাঠক পুরুষের কীর্তিবৃদ্ধি ও যশোবৃদ্ধি হয় এবং সাথে সাথে তদনুযায়ী শ্রীবৃদ্ধি হয়। যে মানুষ প্রথমে কবচ পাঠ করে তারপর এই সপ্তশতী চণ্ডী পাঠ করে, যাবৎ বন, পর্বত এবং কানন যুক্ত ভূমণ্ডল বর্তমান থাকবে, তাবৎ তার  পুত্র পৌত্রাদি সন্ততি পৃথিবীতে অবস্থান করবে ।।৫৩-৫৪।।
অতঃপর দেহান্তে চণ্ডীপাঠক ভগবতী মহামায়ার প্রসাদে সেই নিত্য পরমপদ প্রাপ্ত হয়, যা দেবতাদের কাছেও দুর্লভ ।।৫৫।।
সে সুন্দর দিব্য রূপ ধারণ করে এবং কল্যাণময় শিবের সাথে আনন্দভাগী হয় ।।৫৬।।
দেবী কবচ সম্পূর্ণ হল ।
 

Friday 7 October 2016

Kaatyayani কাত্যায়নী মায়ের কথা

কাত্যায়নী
চন্দ্রহাসোজ্জ্বলকরা শার্দূলবরবাহনা।
কাত্যায়নী শুভং দদ্যাদ্দেবী দানবঘাতিনী।।
নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ কাত্যায়নী। নবরাত্রি উৎসবের ষষ্ঠ দিনে তাঁর পূজা করা হয়। তিনি আজ্ঞা চক্রের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। প্রাচীন কিংবদন্তি অনুযায়ী, কাত্যবংশীয় ঋষি কাত্যায়ন দেবী দুর্গাকে কন্যারূপে লাভ করার জন্য তপস্যা করেছিলেন। তাঁর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে দুর্গা কাত্যায়নের কন্যা রূপে জন্মগ্রহণ করে ‘কাত্যায়নী’ নামে পরিচিতা হন। অন্য মতে, ঋষি কাত্যায়ন প্রথম দুর্গাকে পূজা করেছিলেন বলে তাঁর নাম হয় ‘কাত্যায়নী’।
দেবী কাত্যায়নী চতুর্ভুজা–তাঁর ডানদিকের দুটি হাত বর ও অভয়মুদ্রা প্রদর্শন করে, বাঁ দিকের দুই হাতে পদ্ম ও খড়্গ। দেবী সিংহবাহিনী। তাঁর গায়ের রং সোনার মতো উজ্জ্বল। তন্ত্রসার-এর ধ্যানমন্ত্রে তাঁকে বর্ণনা করা হয়েছে দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী রূপে। আবার হরিবংশ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী, তিনি অষ্টাদশভুজা।
পতঞ্জলির মহাভাষ্য ও কৃষ্ণযজুর্বেদীয় তৈত্তিরীয় আরণ্যক-এ কাত্যায়নীর উল্লেখ রয়েছে। তাঁর কাহিনি বর্ণিত হয়েছে মার্কণ্ডেয় পুরাণ-এর অন্তর্গত শ্রীশ্রীচণ্ডী, দেবীভাগবত পুরাণ, কালিকা পুরাণ ও বামন পুরাণ-এ। এই কাহিনিটিই দেবী দুর্গার মহিষাসুর বধের কাহিনি। কাত্যায়নীই দুর্গা। একটি মতে বলে, আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশীর দিন দেবী কাত্যায়নীর জন্ম। তারপর শুক্লা সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর দিন ঋষি কাত্যায়নের পূজা গ্রহণ করে দশমীর দিন তিনি মহিষাসুর বধ করেছিলেন।

দশভুজা মহিষাসুরমর্দিনী কাত্যায়নী
দেবী কাত্যায়নীর পূজা করলে ভক্ত ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ–এই চার ফল লাভ করে; তার সমস্ত রোগ-শোক-ভয় দূর হয়; দূর হয় জন্ম-জন্মান্তরের পাপও। ভাগবত পুরাণ-এ আছে, বৃন্দাবনের গোপীগণ কৃষ্ণকে পতিরূপে পাওয়ার জন্য সারা মাঘ মাস জুড়ে কাত্যায়নী ব্রত পালন করেছিলেন। তাই মনোমত স্বামী প্রার্থনায় এক মাস ধরে কাত্যায়নী ব্রত পালনেরও প্রথা রয়েছে।
কাশীর আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহের একটি কুলুঙ্গিতে দেবী কাত্যায়নীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত। এটি অষ্টভূজা মহিষাসুরমর্দিনীর মূর্তি। মূর্তিটি কষ্টিপাথরে নির্মিত, উচ্চতা এক হাত। উল্লেখ্য, স্বামী বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী এই আত্মাবীরেশ্বর মন্দিরে মানত করেই স্বামীজিকে পুত্ররূপে লাভ করেছিলেন। আত্মাবীরেশ্বর শিবই দেবী কাত্যায়নীর ভৈরব। শারদীয়া ও বাসন্তী নবরাত্রির ষষ্ঠ দিনে এখানে প্রচুর ভক্তসমাগম হয়।
কাত্যায়নী :--
____________
সতীর মরদেহ মহাদেবের স্কন্ধে,তা খন্ড খন্ড করে ভাগ করলেন বিষ্ণু নিজ সুদর্শনচক্র দিয়ে | বিভিন্ন স্থানে সতীর দেহ একান্নটি দেহাংশ ছড়িয়ে পড়ল | সৃষ্টি হল একান্নটি মহাপীঠ | বৃন্দাবন এক মহাপীঠ | দেবী সেখানে বিরাজিতা কাত্যায়নীরূপে--নবদুর্গার ষষ্ঠ রূপ | তাঁর একটি কার্য অনন্যসাধারণ,সেটি হল সুদুর্লভ কৃষ্ণভক্তিদান | 'চন্ডী'তে দেবীর সুখদা ও মোক্ষদা--দুটি স্বরূপের কথা জানা যায় | সুরথ রাজাকে দিলেন সুখ,সমাধি বৈশ্যকে দিলেন মোক্ষ | কাত্যায়নীরূপে দেবী ভক্তিদান করেন |
ভক্তি--ধন অতীব দুষ্প্রাপ্য বস্তু | এটি সাধনলব্ধ নয় | কোনো সাধনাতেই ভক্তি-সম্পত্তি লাভ করা যায় না | এটি একমাত্র কৃপালব্ধ সামগ্রী | কাত্যায়নীরূপিণী যোগমায়ার করুণায় তা লাভ হয় | তবে যাঁরা সুখ ও মোক্ষকে একান্তভাবে তুচ্ছ করতে পারে,যাঁদের কৃষ্ণসেবা ছাড়া আর কিছুই কাম্য নেই--তাঁদের দেবী দান করেন ভক্তি--প্রেমরূপ মহাসম্পদ |
ব্রজের গোপবালারা নন্দ-নন্দনকে পতিরূপে পাবার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন কাত্যায়নী দেবীর কাছে | তাঁদের প্রার্থনার মন্ত্র ভাগবতে দৃষ্ট হয় :--
"কাত্যায়নী ! মহামায়ে ! মহাযোগিন্যধিশ্বরী ! নন্দগোপসুতে দেবী ! পতিং মে কুরু তে নম: ||"
কাত্যাযনীর ধ্যান :---
_____________
 "গরুড়ৎপলসন্নিভাং মণিময়কুণ্ডলমন্ডিতাম | নৌমি ভাববিলোচনাং মহিষত্তমাঙ্গনিষেদুষিম || শংখচক্রকৃপণখেটকবাণ কার্মুকশূলকম | তর্জনীমপি বিভ্রতিং নিজবাহুভি: শশীশেখরাম ||
মরকতমণিরতুল্যবর্ণা(হরিদ্বর্ণ),মণিময়কুণ্ডলশোভিতা,ভাবপূর্ণনেত্রাবিশিষ্টা,মহিষমস্তকস্থা(কাত্যায়নীকে নমস্কার করি | যিনি শংখ,চক্র,অসি,খেটক(যষ্ঠী),বাণ,ধনু,শূল ও তর্জনী ধারণ করে আছেন,যাঁর মস্তকে চন্দ্র বিদ্যমান --সেই কাত্যায়নী দেবীকে ধ্যান করি |
প্রণামমন্ত্র :----
_________
 "কাত্যায়নীং দশভুজাং মহিষাসুরমর্দিনীং | প্রসন্নবদনাং দেবীং বরদাং তাং নমাম্যহম || যঙ যঙ পশ্যাম্যহং দেবী স্থাবরজংমেসু চ | তং তং ব্যাপ্তং ত্বয়া সর্বং কাত্যায়নী নমহস্তুতে ||"
কাশীর নবদুর্গা - দেবী কাত্যায়নী
বীরেশ্বর মন্দিরের গর্ভগৃহে লিঙ্গের উত্তর-পূর্বকোণে দেওয়ালের নিচে দেড় হাত একটি কুলুঙ্গিতেই অধিষ্ঠান শরৎ ও বসন্তকালের শুক্লা ষষ্ঠীতে দর্শনীয়া দেবী কাত্যায়নীর। বীরেশ্বর লিঙ্গরূপায় নরমুণ্ডমাল্যশোভিত গৌরিপট্ট-ঘেরা কুণ্ডের মধ্যে বিরাজিত। তাঁর উত্তর-পূর্ব কোণে দেবী বিরাজিতা। হাত খানেক উঁচু দেবী সিংহের পিঠে দক্ষিণ চরণ ও মহিষাসুরের কাঁধে বাম চরণ স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে আছেন। অষ্টভুজা কালো পাথরের বিগ্রহ। ডান হাতের ত্রিশূল অসুরের বুকে গেঁথে আছে, অন্য হাতের কোন অস্ত্রাদিই বোঝা যায় না। সব ক্ষয়ে গিয়েছে। সবসময় যাত্রীভক্তরা জল দেওয়ায় দেবীর শরীর সব সময়ই পেছল হয়ে থাকে। শিবশক্তির একত্র সমাবেশ।
এইসব ছোট ছোট মন্দিরে দেবীদের অবস্থান দেখে মনে হয়ে কোন সময় অত্যাচারীদের হাত থেকে বিগ্রহদের রক্ষা করবার জন্য পূজারীরা তাঁদের নিজেদের বাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। মন্দিরগুলি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে সেই সব দেবী বা দেবতাদের বিগ্রহগুলি আর স্ব-মন্দিরে ফিরে যেতে পারেননি। ঐ গৃহস্থ পূজারীর বাড়িরই কোনো অংশে বা কোনো মন্দিরের একপাশে তাঁদের ঠাঁই হয়েছিল। এই বীরেশ্বর ও কাত্যায়নী মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে চত্বরের পাশে মঙ্গলেশ্বর ও বুধেশ্বর শিবলিঙ্গ আছেন ছোট ছোট কুণ্ডের মধ্যে। মন্দিরের দক্ষিণ দেওয়ালে তিনমুখ দত্তাত্রেয় আছেন,গণেশ আছেন,আর একেবারে প্রবেশপথের বাঁ দিকে ছোট ঘরে আধুনিক দেবতা সন্তোষী মা আছেন।
‘কাত্যায়নীং দশভুজাং মহিষাসুরঘাতিনীং নমামি বরদাং দেবীং সর্বদেবনমস্কৃতাম্।’ এই দেবী কাত্যায়নীর উদ্ভব হিমালয়ে কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে। ঋষি কাত্যায়ন কাত্য গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কঠোর তপস্যা করেছিলেন দেবী অম্বিকাকে তাঁর কন্যা হিসাবে পাওয়ার জন্য। দেবী তাঁর তপস্যায় প্রসন্না হয়ে সেই প্রার্থনা স্বীকার করে বলেছিলেন, দেবতাদের প্রয়োজনে আমি তোমার তপোবনে আবির্ভূত হয়ে তোমার সেবা গ্রহণ করব।
এরপরে দৈত্যরাজ মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবতারা কাতর হয়ে একত্রে মহাশক্তির আরাধনা করবার সময় তাঁদের ক্রোধসঞ্জাত তাপ ও তেজ একত্রিত হয়ে এক অপরূপা দেবীমূর্তির সৃষ্টি হয়েছিল। দেবীকে দেবতারা নিজেদের অস্ত্র থেকে অস্ত্রাদি দিয়ে ও নানা বসনভূষণে সাজিয়ে দিয়ে তাঁর কাছে মহিষাসুর বধের জন্য প্রার্থনা জানান। সেই দেবীর সৃষ্টি হয়েছিল হিমালয়ের কাত্যায়ন ঋষির আশ্রমে দেবী কাত্যায়নকে দেওয়া তাঁর কথা রাখলেন ভাদ্র কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিন কাত্যায়নাশ্রমে এই দেবী প্রকট হন। তারপর সপ্তমী,অষ্টমী ও নবমীর তিনদিন এই আশ্রমে থেকে কাত্যায়নের পূজা গ্রহণ করেন। অষ্টমী-নবমীর সন্ধিতে তিনি চণ্ডমুণ্ডকে চামুণ্ডামূর্তিতে বধ করেন। আর দশমীর দিন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন। এই কারণেই দেবীর একটি নাম হয় কাত্যায়নী। কাত্যায়নপূজিতা দেবী এই নামে তিনি খ্যাত হন।
কাত্যায়নী দেবীর মাহাত্ম্য দ্বাপরের কিছু ঘটনাতেও জানা যায়। দক্ষযজ্ঞে সতীর দেহত্যাগের পর তাঁর দেহ শিবের কাঁধ থেকে বিষ্ণুচক্রে খণ্ডিত হয়ে যখন ভারতের একান্নটি স্থানে পড়ে একান্নপীঠ হলো-তখন সেই পীঠগুলিও বিভিন্ন নামে দেবী ভগবতীর মূর্তি জ্ঞানে মর্তের ভক্তদের উপাসনাস্থল হিসাবে পূজিত হতে লাগল। এই রকম একটি পীঠ হলো ব্রজধামে বৃন্দাবনে,যেখানে দেবীর কেশগুচ্ছ পড়েছিল। তাঁর সেই কুঞ্চিত দিব্য কেশপাশ প্রস্তরীভূত হয়ে আজও বিরাজিত। সেখানে তাঁর নাম কাত্যায়নী।‘ব্রজে কাত্যায়নী পরা।’ বৃন্দাবনের গোপী-গোপেরা ছিলেন শাক্ত। তাঁদের আরাধ্য দেবী ছিলেন এই কাত্যায়নী। প্রতিটি উত্সবপর্ব ঘিরে ছিল এই কাত্যায়নী দেবীকে নিয়ে। ব্রজের কুমারী গোপিনীরা এই কাত্যায়নী দেবীর কাছেই তাঁদের প্রাণধন নন্দ নন্দনকে পতি হিসাবে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল প্রার্থনা জানিয়ে ব্রত উপবাস পূজা করতেন। তাঁদের পূজার মন্ত্র ছিল,“কাত্যায়নী মহামায়ে মহাযোগিন্যধীশ্বরী/নন্দগোপসুতং দেবি পতিং মে কুরুতে নমঃ।” এই মন্ত্র ও কাহিনী শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্দে আছে। এই সিদ্ধমন্ত্র দেবী কাত্যায়নীর পূজায় উচ্চারিত হওয়ার ফলও ব্রজবিলাসিনীরা পেয়েছিলেন। দেবীর কৃপায় তাঁদের কৃষ্ণপ্রাপ্তি পরাভক্তি লাভ হয়েছিল। দেবী কাত্যায়নী সুখদা-মোক্ষদা। কৃষ্ণপ্রাপ্তিরূপ পরমানন্দ, মোক্ষ তাঁদের লাভ হয়েছিল। সত্যযুগে দেবতাদের অসুরদের হাত থেকে রক্ষা করে তাঁদের ভোগ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। আর দ্বাপরে ঐকান্তিক ভক্তদের পূজায় প্রসন্না হয়ে তাঁদের নিঃশ্রেয়স্ বা পরমপ্রেমের আস্বাদন করিয়ে কৃতার্থ করেছিলেন।
বৃন্দাবনে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম ছাড়িয়ে গোবিন্দজীর মন্দির যাওয়ার পথে ডান দিকে একটু ভেতর দিকে দেবী কাত্যায়নীর সুন্দর মন্দির। আর সেই মন্দিরে দেবী দশভুজার অষ্টধাতুর কাত্যায়নী মূর্তির কাচের আবরণে ঢাকা প্রস্তরীভূত দেবীর সেই কেশকলাপ কাত্যায়নীপীঠ নামে আজও নিত্য পূজিত। এছাড়াও বৃন্দাবনে কাত্যায়নীপীঠ বলে আরও একটি স্থান কেউ কেউ নির্দেশ করেন। এটি বৃন্দাবন পরিক্রমার পথে যমুনার ধারে মথুরার দিকে যেতে একটু জঙ্গলের মধ্যে। এখানেও একটি ছোট মন্দিরে ত্রিভুজাকার সিন্দুরলিপ্ত একটি কালো পাথরের চূড়াকে দেবী কাত্যায়নী বলে পূজা করা হয়।যাই হোক বৃন্দাবন দেবী কাত্যায়নীর বিহার ক্ষেত্র। ভক্তেরা আন্তরিক হয়ে তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে তিনি মনস্কামনা পূর্ণ করেন-ভক্তজনের এই বিশ্বাস।

Kaalraatri কালরাত্রী মা

কালরাত্রি :--
_________

কালরাত্রি মা দুর্গার একটি নাম | এমন নামের অবশ্যই কারণ আছে | ঋগ্বেদের দশম মন্ডলের "রাত্রিসুক্ত"-এ পরমাত্মাকে বলা হয়েছে রাত্রি | পরমব্রহ্মই রাত্রি | ব্রহ্মময়ী মা ঐ রাত্রিরই শক্তি | রাত্রিতে জীবজগৎ বিরত হয় সমস্ত কার্য থেকে | বিশ্রামলাভ করে সকলে | প্রলয়কালে এই রাত্রিরূপিণী মাতার ক্রোড়ে বিলয় ঘটে বিশ্বের | মায়ের অঙ্গে বিশ্রাম নেয় নিখিল জীবনীবহ | মহাপ্রলয়ের রাত্রিই মহারাত্রি !! দেবী এই রাত্রিরূপা |
মহারাত্রি থেকে কালরাত্রি গভীরতর | মহারাত্রিতে সংসার লয় হয় ,কিন্তু পরমপুরুষ মহাবিষ্ণু জেগে থাকেন | কালরাত্রিতে মহাবিষ্ণুও ঘুমিয়ে পড়েন | অনন্তশয্যা বিস্তার করে নিদ্রিত ভগবান কি করেন ? "শ্রীশ্রীচন্ডী" তে বলেন,তিনি যোগনিদ্রাকে ভজনা করেন | এই যোগনিদ্রাই মহাকালিকা বা কালরাত্রি | প্রত্যহ দিবাবসানে কর্মক্লান্তির পর মানুষ যাঁর কোলে বিশ্রাম নেয়,আবার প্রভাতে যাঁর কোল থেকে উত্থিত হয় নতুন উদ্যম নিয়ে---তিনি কালরাত্রি | দেবীর অংশভূতা কুন্ডলিনী কালিকা | বিশ্বকে,বিশ্বজীবকে,বিশ্বনাথ ও কালশক্তিকে যিনি স্তব্ধ করেন তিনিই দেবী কালরাত্রি---মায়ের সপ্তম রূপ |
ধ্যান :---
________

 "কালরাত্রিং মহামায়ায়ং শক্তিশূলাসিধারিণীম | সর্বায়ুধধরাং রৌদ্রীং খেটপট্টিশধারিণীম || করলদ্রংষ্ট্রাং বিম্বৌষ্ঠিং সর্বলক্ষণসংযুতাম | সূর্যকোটিসহস্রেন অযুতাযুতবর্চসা || বিচিত্রাভরণপেতাং দিব্যকাঞ্চনভুষিতাম | দিব্যাম্বরধরাং দীপ্তাং দীপ্তকাঞ্চনসুপ্রভাম || সর্বৈশ্বর্যময়ীং দেবীং কালরাত্রিমিবদ্যতাম | লীলাধারাং মহাকায়াং প্রেক্ষৎ কাঞ্চীগুণস্রজাম || খড়্গমেকেন হস্তেন করেনান্যেন খেটকাম | ধনুরেকেন হস্তেন শরমন্যেন্য বিভ্রতীম || তর্জয়ন্তীং ত্রিশূলেন জ্বালামালাকৃতি প্রভাম |
--কালরাত্রি মহামায়া শক্তি,শূল ও অসি-ধারিণী,সর্বায়ুধধারিণী,ভীষণা,খেট ও কুঠার--ধারিণী,ভীষণদশনা,বিম্বৌষ্ঠী,সর্বসুলক্ষণযুক্তা | সহস্রকোটি সূর্যের তেজ:পুঞ্জধারিণী,বিচিত্র আভরণবিশিষ্টা,দিব্যস্বর্ণবিভুষিতা | দিব্য বস্ত্রধরা,দীপ্তা,দীপ্তকাঞ্চন প্রভাবিশিষ্টা | সর্বৈশ্বর্যময়ী কালরাত্রির ন্যায় আবির্ভূতা দেবী লীলার আধার,বিশাল দেহবিশিষ্ট উজ্জ্বল কাঞ্চী ভূষণধারীণী | এক হস্তে খড়্গ,অন্য হস্তে খেটক,অপর হস্তে ধনু ও অন্য হস্তে শর ধারণ করে ত্রিশূল দ্বারা তিনি (দৈত্যগণকে) তর্জন করছেন এবং তেজ:পুঞ্জ দ্বারা প্রভাবিশিষ্ট হয়েছেন |
প্রণাম :--
________

 "কালী কালী মহাকালী ,কালিকে কালরাত্রীকে | ধর্মার্থমোক্ষদে দেবী কালরাত্রি নমস্তুতে ||"
কাশীর নবদুর্গা - দেবী কালরাত্রী
Deviছোট ছোট দুটি মন্দির পাশাপাশি, ওপরে সামান্য চূড়া, সামনে আয়তাকার কিছুটা ঘেরা বারান্দার মতো, এটাকে নাটমন্দিরও বলা যেতে পারে। বাঁ দিকের ঘরটিই দেবী কালরাত্রির মন্দির। অত্যন্ত সংকীর্ণ পরিসর গর্ভগৃহ। একমাত্র পূজারীই দেবীর সামনে বসতে পারেন, আর কারও ঢোকবার মতো জায়গা নেই। তাই দর্শন মন্দিরের দাওয়ার সামনে থেকেই করা হয়। তবে একেবারে মুখোমুখি সামনে দু-তিন হাতের মধ্যেই মাকে দেখা যায়। বেশ বড় কালো পাথরের দণ্ডায়মানা কালীমূর্তি। তবে কালী না বলে চামুণ্ডা বলাই ভাল। দেবীর চেহারার সঙ্গে তাঁরই রূপের বর্ণনা মেলে। শরীরের তুলনায় মাথাটি বেশ বড়, ত্রিকোণ-তাতে দুটি গোল বিরাট কোটরগত চোখ। ত্রিনেত্রটিও বেশ বড়। বিরাট লাল মুখ থেকে রক্তবর্ণ লোলজিহ্বা বার হয়ে আছে। মাথায় বিশাল রুপোর মুকুট, সর্বাঙ্গ রক্তবর্ণ পট্টবস্ত্রাবৃত। ছোট ছোট চারটি হাতে খড়গ, মুণ্ড ও বরাভয়ের আভাস কাপড়ের মধ্যে দিয়ে বোঝা যায়। চরণ দুটি দেখা যায়। বেদীতে শিবের মাথাটি খোদাই করা, শায়িত অবস্থায়। দীপাধারে প্রদীপ জ্বলছে, ভোর ৬টায় স্নান-শৃঙ্গারের পর মায়ের মন্দির খুলে কর্পূরারতি হয়। বেশ বড় পাত্রে অনেকটা কর্পূর দিয়ে মায়ের আরতির পর সর্বসাধারণ মাকে দর্শন করতে পারে। আরতির সময়ই দরজা খোলা হয়।
কাল্কা বা কালরাত্রি বলে এঁর মহিমা সকলেই খুব মানে। শরৎ ও বসন্তের সপ্তমী তিথিতে হাজার হাজার লোক সারা দিনরাত্রি এখানে এসে মাকে দর্শন প্রণাম প্রদক্ষিণ ও পূজা মানত করেন। মহাষ্টমী ও দীপান্বিতা অমাবস্যাতেও এখানে মায়ের বিশেষ পূজাদি হয়। আগে এখানে ঐ একদিন পশুবলিও হতো। এখন বলিদান বন্ধহয়ে গিয়েছে। তবে পূজা হয় দেবী কালিকার ধ্যান ও বীজমন্ত্রে তন্ত্রমতেই। পূজারীরা পূর্ণাভিষিক্ত আগে ছিলেন, এখন সে ভার ক্রমশ কমে আসছে।
“একবেণী জপাকর্ণপুরা নগ্না খরাস্থিতা। লম্বোটি কর্ণিকাকর্ণা তৈলাভ্যক্তশরীরিণী। বামপদোল্লসল্লোহলতা-কণ্টকভূষণা। বর্ধনমূর্ধধ্বজা কৃষ্ণ কাল-রাত্রিভয়ঙ্করী।” সত্যিই বড় ভয়ঙ্করী এই মূর্তি, ধ্যানবর্ণনা অণুযায়ী। এঁর গায়ের রং ঘনকৃষ্ণবর্ণা। মাথার চুল এলো করা, দিগম্বরী, সারা শরীরে কর্ণিকা কণ্টকের মালা, তৈলাক্ত শরীর, ত্রিনেত্রা, কোটরাগত গোল চোখ, শ্বাসপ্রশ্বাসে আগুনের মতো হল্কা বের হচ্ছে। এঁর বাহন গর্দভ। চতুর্ভুজা, দক্ষিণ দুই হাতে বরাভয়, বাম দুই হাতে খড়গ ওলোহার কাঁটা। কিন্তু এখানকার দেবীমূর্তির সঙ্গে এই ধ্যানবর্ণনার কোনো মিল নেই।
এই কালরাত্রি দেবীই তন্ত্রমতে আদিশক্তি। মহামায়া দেবী ভগবতী। সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড মহাপ্রলয়ে তাঁতেই লীন হয়ে যায়। প্রতি কল্পের শেষে সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড কারণ সলিলে আপ্লুত হয়-‘জগত্যেকার্ণবীকৃতে’। আদিপুরুষও তখন নিদ্রাভিভূত থাকেন, সেই নিদ্রার নাম যোগনিদ্রা। দেবী মহামায়ার প্রভাবেই তাঁর নিদ্রা। ইনিই স্থূল-সূক্ষ্ম কারণ বিভাগে মোহনিদ্রা-মোহরাত্রি-মহারাত্রি-যোগনিদ্রা বা কালরাত্রি। ঋগ্বেদে এই রাত্রির কথা বলা হয়েছে রাত্রি সূক্তে। পরমাত্মাই রাত্রিস্বরূপ। আর ব্রহ্মশক্তি দেবী যোগমায়া ঐ রাত্রিরই প্রকাশমূর্তি।
মর্ত্যজগতে প্রতিটি জীব প্রতিরাত্রে সমস্ত কর্মের অবসানে ক্লান্তি দূর করতে ঘুমিয়ে পড়ে। তার এই বিশ্রাম সব পরিশ্রম দূর করে শান্তি দেয়। এই যে জীবের নিত্য রাত্রির নিদ্রা-এর নাম মোহরাত্রি। আর প্রলয়কালে সমস্ত পৃথিবী এই আলোকোজ্জ্বল ধরিত্রীর পরিবর্তে এক তমসাচ্ছন্ন অন্ধকার আবর্তে নিমজ্জিত হয়। রাত্রিরূপিণী দেবী মহামায়ার শরীরে বিশ্রাম নেয় সমগ্র বিশ্বচরাচর, পরবর্তী সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত। এর নাম মহারাত্রি মহাপ্রলয়ই এই মহারাত্রির রূপ।
এরপরে কালরাত্রি। মহারাত্রিতে জগতের বিলয়। তখন স্রষ্টা মাত্র জাগ্রত আর সব নিদ্রা-ভিভূত। আর কালরাত্রিতে স্রষ্টাও নিদ্রামগ্ন-যোগনিদ্রামগ্ন। শুধুমাত্র জেগে থাকেন আদ্যাশক্তি সৃষ্টির বীজ পুঁটুলি বেঁধে, এই যোগনিদ্রাই কালরাত্রি। সমগ্র পৃথিবীকে, পৃথিবীর সমস্ত জীবজন্তুকে ও বিশ্বনাথকেও যিনি নিদ্রায় আচ্ছন্ন করেন তিনিই কালরাত্রি। তিনি কালেরও কলনকর্ত্রী। প্রণীমাত্রকে গ্রাস, কলন করেন বলে শিব মহাকাল, আর মহাপ্রলয়ে এই মহাকালও মহাপ্রকৃতিতে লীন হয়ে যান। মহানিদ্রাচ্ছন্ন হন। ‘কালসংগ্রসনাৎ কালী’। তন্ত্রমন্ত্রে শিব আদি পুরুষ আদি প্রকৃতি দেবী ভগবতী আদ্যাশক্তি, তিনি শিবেরও নিয়স্ত্রী। “সৈব মায়া প্রকৃতির্যা সংমোহয়তি শংকরম।” তিনি সবকিছু সংহরণ করেন, সম্মোহিত করেন, নিদ্র্রাভিভূত করেন। তাঁর মায়া প্রভাবে ত্রিভূবন আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তিনি গ্রাস করেন। সব সৃষ্টির বীজ তিনি নিজের শরীরে ধারণ করে পরবর্তী কল্পের পূর্ব পর্যন্ত নিরাকার তামসী জ্ঞানেচ্ছা-ক্রিয়াময়ী অখণ্ড এক সত্তারূপে বিরাজ করেন, ইনিই কালরাত্রি। “ত্বং কর্ত্রী কারয়িত্রী করণ-গুণময়ী কর্মহেতু স্বরূপা” এই অব্যাকৃতা-মহামায়াই জগতের আদিকারণ ব্রহ্মময়ী ‘পরব্রহ্মের পট্টমহিষী’।
এখানে যে কালরাত্রি তিনি দেবী মহাকালী বলেই পূজিতা কালী কৃষ্ণবর্ণা ঘোরা। সাদা-লাল-হলুদ সব রংই কালো রং-এ মিশে যায়। মিশে এক কালো হয়ে যায়। সেই রকম বহু বিচিত্র বর্ণবিভূষিত এই জগৎ এক কারণরূপিণীকালো মায়ের শরীরে লীন হয়ে যায় তাই সর্ববর্ণময়ী মা আমার কালো। নির্গুণা, গুণাতীত, নিরাকার মা, সবকিছু তাঁর মধ্যে টেনে নিয়ে এক করে দেন তাই তিনি কালো। তাঁর ললাটে চন্দ্রকলা। তিনি নিত্যা। চির অমৃতের আধার, অমৃতের প্রতীক চন্দ্র তাই তাঁর শিরে শোভমান। ত্রিনেত্রা তিনি ত্রিলোক দর্শন করেছেন, সদা জাগ্রতা, রক্ষা করেছেন, চন্দ্র-সূর্য-অগ্নি তাঁর নেত্র, জীবকে সর্বদা সর্বোতভাবে পালন করছেন তাঁর ত্রিনেত্রে।
 রুধিরাক্ত ওষ্ঠদ্বয় সদা দন্তপংক্তিতে চেপে রেখেছেন। লাল রক্ত রজোগুণের, আর সাদা দাঁত সত্ত্বগুণের প্রতীক। সত্ত্বগুণ দিয়ে রজোগুণকে অুভিভূত করে রেখেছেন।

তাঁর খড়্গ জ্ঞান অসি। মুণ্ডমালা ও করধৃত মুণ্ড কৃপায় সন্তানের শরীরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা ও সৃষ্টির বীজ বহন করা। বরাভয় করদ্বয় সন্তানের জন্য সদামঙ্গলময়ী মায়ের কৃপা করুণার, প্রসন্নতার প্রতীক। ভীষণা হলেও, রুদ্রাণী হলেও কাতর সন্তান পাছে মায়ের ঐ মূর্তি দেখে ভয় পেয়ে দূরে সরে যায়-তাই অভয়া বরদা বলেছেন, ‘ভয় নেই, কাছে আয়, তোর যা চাই তাই তুই পাবি। শুধু নির্ভয় হয়ে একান্তে সবকিছু ছেড়ে একবার আমার কছে আয়।’ শরণাগত সন্তানের প্রতি অসীম করুণায় মায়ের এ চিরন্তন আশ্বাসবাণী। সমগ্র বিশ্বের কর্ত্রী, পালয়িত্রী, সংহন্ত্রী তিনি, তাই বিশ্বনাথও তাঁর চরণতলে।

Thursday 6 October 2016

আদ্যা স্তোত্র Translation in Bengali

ঔং নম আদ্যায়ৈ
ব্রহ্ম নারদ সংবাদে আদ্যা স্তোত্র
হে বত্স মহাফলপ্রদ আদ্যা স্তোত্র বলিব
শ্রবন কর
যে ভক্তিপুর্বক ইহা সর্বদা পাঠ করে
সে ভগবান বিষ্ণুর প্রিয় হয়
এই কলিযুগে তাহার মৃত্যু ও ব্যাধি ভয় থাকেনা
অপুত্রা তিন পক্ষকাল ইহা শ্রবন করিলে পুত্র  লাভ করে
ব্রাহ্মনের মুখ হতে দুই মাস শ্রবন করিলে বন্ধনমুক্তি হয়
ছয় মাস কাল শ্রবন করিলে মৃতবত্স্যা নারী জীববত্স্যা হয়
ইহা পাঠ করিলে নৌকায় সংকটে ও যুদ্ধে জয় লাভ হয়
লিখিয়া গৃহে রাখিলে অগ্নি বা চোরের ভয় থাকেনা
রাজস্থানে নিত্য জয়ী হয় এবং সর্ব দেবতা সন্তুষ্ট হন
হে মাত
তুমি ব্রহ্মলোকে ব্রহ্মাণী বৈকুণ্ঠে সর্ব্বমঙ্গলা
অমরাবতিতে ইন্দ্রাণী বরুণালয়ে অম্বিকা
যমালয়ে কালরূপা কুবেরভবনে শুভা
অগ্নিকোনে মহানন্দা বায়ুকোনে মৃগবাহিনী
নৈঋতকোনে রক্তদন্তা ঐশাণকোনে শূলধারিণী
পাতালে বৈষ্ণবীরূপা সিংহলে দেবমোহিনী
মণীদ্বিপে সুরসা লঙ্কায় ভদ্রকালিকা
সেতুবন্ধে রামেশ্বরী পুরুষোত্তমে বিমলা
উত্কলে বিরজা নীলপর্বতে কামাক্ষ্যা
বঙ্গদেশে কালিকা অযোধ্যায় মহেশ্বরী
বারাণসীতে অন্নপূর্ণা গয়াক্ষেত্রে গয়েশ্বরী
কুরুক্ষেত্রে ভদ্রকালী ব্রজে শ্রেষ্ঠা কাত্যায়নী
দ্বারকায় মহামায়া মথুরায় মাহেশ্বরী
তুমি সমস্ত জীবের ক্ষুধা স্বরূপা
সাগরের বেলা তুমি
শুক্লপক্ষের নবমী ও কৃষ্ণপক্ষের একাদশী
দক্ষের দুহিতা দেবী তুমিই আবার দক্ষযজ্ঞ বিনাশিনী
তুমি শ্রীরামচন্দ্রের প্রিয়তমা জানকী
আবার তুমিই মা রাবণ ধ্বংসকারিণী
মা তুমি চণ্ডমুণ্ডবধকারিনী রক্তবীজবিনাশিনী
নিশুম্ভশুম্ভমথিনী মধুকৈটভঘাতিনী
তুমি বিষ্ণুভক্তিপ্রদা দুর্গা সর্বদা সুখ ও মোক্ষ দায়িনী
যে নর এই মহাপুণ্যবাণ আদ্যাস্তব ভক্তিভরে নিত্য পাঠ করে সে সর্ব জ্বর-ভয় হইতে মুক্ত হয় এবং তার সর্ব ব্যাধি বিনাশ হয়
সে কোটি তীর্থের ফল লাভ করে সে বিষয়ে কোন সংশয় নেই
জয়া আমাকে অগ্রভাগে রক্ষা করুন, বিজয়া পৃষ্ঠদেশে রক্ষা করুন
নারায়ণী মস্তকে রক্ষা করুন, সিংহবাহিনী সর্ব্বাঙ্গে রক্ষা করুন
শিবদূতী উগ্রচণ্ডা পরমেশ্বরী বিশালাক্ষী মহামায়া কৌমারী সঙ্খিনী শিবা
চক্রিণী জয়ধাত্রী রণমত্তা রণপ্রিয়া দুর্গা জয়ন্তী কালী ভদ্রকালী মহোদরী
নারসিংহী বারাহী সিদ্ধিদাত্রী সুখপ্রদা ভয়ঙ্করী মহারৌদ্রী মহাভয়বিনাশিনী
আমার প্রতি অঙ্গ রক্ষা করুন
ব্রহ্মযামলে ব্রহ্মনারদসংবাদে আদ্যা স্তোত্র সমাপ্ত হল
ঔং নম আদ্যায়ৈ ঔং নম আদ্যায়ৈ ঔং নম আদ্যায়ৈ

Wednesday 5 October 2016

108 names of Durga in Bengali

শ্রী চন্ডী মাহাত্য
         শ্রীদুর্গাষ্টোত্তরশতনামস্তোত্র
মহাদেব পার্বতীকে বলছেন - হে কমলাননে! আমি এখন অষ্টোত্তর শতনাম বর্ণনা করছি, শোনো; যার প্রসাদ (পাঠ বা শ্রবণ) মাত্রেই পরমা সাধ্বী ভগবতী দুর্গা প্রসন্না হন ।।১।।
১. ঔং সতী, ২. সাধ্বী, ৩. ভবপ্রীতা (ভগবান শিবের প্রতি প্রীতিপূর্ণ হৃদয়া), ৪. ভবানী, ৫. ভবমোচনী (সংসারবন্ধন থেকে মুক্তিদায়িনী), ৬. আর্যা, ৭. দুর্গা, ৮. জয়া, ৯. আদ্যা, ১০. ত্রিনেত্রা, ১১. শূলধারিণী, ১২. পিনাকধারিণী, ১৩. চিত্রা, ১৪. চণ্ডঘন্টা (প্রচণ্ড শব্দে ঘন্টানাদকারিণী), ১৫. মহাতপা (দুশ্চর তপস্যাকারিণী), ১৬. মন (মননশক্তি) ১৭. বুদ্ধি (বোধশক্তি), ১৮. অহংকারা (অহমের আশ্রয়), ১৯. চিত্তরূপা, ২০. চিতা, ২১. চিতি (চেতনা), ২২. সর্বমন্ত্রময়ী, ২৩. সত্তা (সৎ-স্বরূপা), ২৪. সত্যানন্দস্বরূপিণী, ২৫. অনন্তা (যাঁর স্বরূপের কোনও অন্ত নেই), ২৬. ভাবিনী (সর্ব কিছুর উৎপত্তিকারিণী), ২৭. ভাব্যা (ভাবনা এবং ধ্যানের যোগ্যা), ২৮. ভব্যা (কল্যাণরূপা), ২৯. অভব্যা (যাঁর থেকে বেশী ভব্য আর কোথাও নেই), ৩০. সদাগতি, ৩১. শাম্ভবী (শিবপ্রিয়া), ৩২. দেবমাতা, ৩৩. চিন্তা, ৩৪. রত্নপ্রিয়া, ৩৫. সর্ববিদ্যা, ৩৬. দক্ষকন্যা, ৩৭. দক্ষযজ্ঞবিনাশিনী, ৩৮. অপর্ণা (তপস্যাকালে পর্ণ পাতা পর্যন্ত না খাওয়া), ৩৯. অনেকবর্ণা (বহুবর্ণবিশিষ্টা), ৪০. পাটলা (লাল বরণা), ৪১. পাটলাবতী (গোলাপফুল বা লালফুল ধারণকারিণী), ৪২. পট্টাম্বরপরীধানা (রেশমীবস্ত্র পরিহিতা), ৪৩. কলমঞ্জীররঞ্জিনী (মধুর ধ্বনিকারী নুপুর ধারণ করে প্রসন্না), ৪৪. অমেয়বিক্রমা (অসীম পরাক্রমশালিনী), ৪৫. ক্রূরা (দৈত্যদের প্রতি কঠোর), ৪৬. সুন্দরী, ৪৭. সুরসুন্দরী, ৪৮. বনদুর্গা, ৪৯. মাতঙ্গী, ৫০. মতঙ্গমুনিপূজিতা, ৫১. ব্রাহ্মী, ৫২. মাহেশ্বরী, ৫৩. ঐন্দ্রী, ৫৪. কৌমারী, ৫৫. বৈষ্ণবী, ৫৬. চামুণ্ডা, ৫৭. বারাহী, ৫৮. লক্ষ্মী, ৫৯. পুরুষাকৃতি, ৬০. বিমলা, ৬১. উৎকর্ষিণী, ৬২. জ্ঞানা, ৬৩. ক্রিয়া, ৬৪. নিত্যা, ৬৫. বুদ্ধিদা, ৬৬. বহুলা, ৬৭. বহুলপ্রেমা, ৬৮. সর্ববাহনবাহনা, ৬৯. নিশুম্ভশুম্ভহননী, ৭০. মহিষাসুরমর্দিনী, ৭১. মধুকৈটভহন্ত্রী, ৭২. চণ্ডমুণ্ডবিনাশিনী, ৭৩. সর্বাসুরবিনাশা, ৭৪. সর্বদানবঘাতিনী, ৭৫. সর্বশাস্ত্রময়ী, ৭৬. সত্যা, ৭৭. সর্বাস্ত্রধারিণী, ৭৮. অনেকশস্ত্রহস্তা, ৭৯. অনেকাস্ত্রধারিণী, ৮০. কুমারী, ৮১. এককন্যা, ৮২. কৈশোরী, ৮৩. যুবতী, ৮৪. যতি, ৮৫. অপ্রৌঢ়া, ৮৬. প্রৌঢ়া, ৮৭. বৃদ্ধমাতা, ৮৮. বলপ্রদা, ৮৯. মহোদরী, ৯০. মুক্তকেশী, ৯১. ঘোররূপা, ৯২. মহাবলা, ৯৩. অগ্নিজ্বালা, ৯৪. রৌদ্রমুখী, ৯৫. কালরাত্রি, ৯৬. তপস্বিনী, ৯৭. নারায়ণী, ৯৮. ভদ্রকালী, ৯৯. বিষ্ণুমায়া, ১০০. জলোদরী, ১০১. শিবদূতী, ১০২. করালী, ১০৩. অনন্তা (বিনাশরহিতা), ১০৪. পরমেশ্বরী, ১০৫. কাত্যায়নী, ১০৬. সাবিত্রী, ১০৭. প্রত্যক্ষা, ১০৮. ব্রহ্মবাদিনী ।।২-১৫।।
দেবী পার্বতি! যে প্রতিদিন মা দুর্গার এই অষ্টোত্তরশতনাম পাঠ করে, তার কাছে ত্রিলোকে অসাধ্য কিছুই নেই ।।১৬।।
সে বহু ধন, ধান, পুত্র, স্ত্রী, ঘোড়া, হস্তী, ধর্ম আদি চার পুরুষার্থ তথা অন্তে সনাতন মুক্তিও প্রাপ্ত হয় ।।১৭।।
কুমারীপূজা এবং দেবী সুরেশ্বরীর ধ্যান করে পরমভক্তির সহিত তাঁর পূজা করে, এরপর অষ্টোত্তরশতনাম পাঠ আরম্ভ করতে হয় ।।১৮।।
দেবি! যে এইরূপ করে, সর্বশ্রেষ্ঠ দেবতাদের কাছ থেকে তার সিদ্ধি প্রাপ্তি হয়। রাজা তার দাস হয়ে যায়, সে রাজলক্ষ্মীকে লাভ করে ।।১৯।।
গোরোচন, লাক্ষা, কুঙ্কুম, সিন্দুর, কর্পুর, ঘী (অথবা দুধ), চিনি ও মধু - এই সব বস্তু একত্র করে এর দ্বারা বিধিমত যন্ত্র লিখে যে বিধিজ্ঞ পুরুষ সতত ওই যন্ত্র ধারণ করে, সে শিবের তুল্য (মোক্ষরূপ) হয়ে যায় ।।২০।।
ভৌমবতী অমাবস্যার মধ্যরাত্রে, চন্দ্র যখন শতভিষা নক্ষত্রে অবস্থান করে, সেই সময় এই স্তোত্র লিখে যে ইহা পাঠ করে সে অতুল সম্পত্তিশালী হয় ।।২১।।
বিশ্বসারতন্ত্রে উল্লিখিত শ্রীদুর্গাষ্টোত্তরশতনাম স্তোত্র সম্পূর্ণ হল ।

Wednesday 28 September 2016

Teachings from Sri Maa

The food which you eat is the blessing of Mother Annapurna. The Mother of this whole world is the giver of everything. How much tasteless the food may be the kindness of mother is same. Mother has different forms so the taste is different. Therefore, a obedient child should accept all forms and tastes of food. 


Be like the machines and do all your worldly work like them. Without attachment, without expecting the result. How much work these machines do day and night! Still even if they are not kept in A.C. rooms and kept in adverse conditions of life, even if they are thrown out still they keep quite and say nothing. All time they only meditate on God. Even if someone excessively uses them still they say nothing and properly do their work. One has to do all material duties like them.

Tuesday 27 September 2016

Sri Saptashloki Durga

শ্রী চন্ডী মাহাত্য
                    শ্রীসপ্তশ্লোকী দুর্গা
শিব বললেন - হে দেবি! তুমি ভক্তের কাছে সহজলভ্য এবং সমস্থ কর্মের বিধানকারিণী। কলিযুগে কামনাপূরণের যদি কোনও উপায় থাকে, তবে তোমার বাণীদ্বারা সম্যকভাবে তা বলো।
দেবী বললেন - হে দেব! আমার ওপরে আপনার অসীম স্নেহ। কলিযুগে সর্বকামনা সিদ্ধির যে সাধন তা আমি বলছি, শুনুন! তার নাম হল 'অম্বাস্তুতি'।
ঔং এই দুর্গাসপ্তশ্লোকী স্তোত্রের ঋষি হলেন নারায়ণ, ছন্দ অনুষ্টুপ, শ্রীমহাকালী, মহালক্ষী, এবং মহাসরস্বতী হলেন দেবতা; শ্রীদুর্গার প্রীতার্থে সপ্তশ্লোকী দুর্গাপাঠে এর বিনিয়োগ করা হয়।
এই ভগবতী মহামায়া দেবী জ্ঞানীদের চিত্তকেও বলপূর্বক আকর্ষণ করে মোহময় করে দেন ।।১।।
হে মা দুর্গা! আপনি স্বরণমাত্রই সব প্রাণীর ভয় হরণ করে নেন এবং স্বস্থ পুরুষের দ্বারা চিন্তা করলে তাকে পরম কল্যাণময়ী বুদ্ধি প্রদান করেন। দুঃখ, দারিদ্র ও ভয়হারিণী দেবি! আপনি ছাড়া দ্বিতীয়া কে আছেন যার চিত্ত সকলের উপকার করার জন্য সততই দয়াদ্র ।।২।।
নারায়ণি! আপনি সর্বপ্রকার মঙ্গলপ্রদানকারিণী মঙ্গলময়ী, কল্যাণদায়িনী শিবা। আপনি সর্ব পুরুষার্থ সিদ্ধিদায়িনী, শরণাগতবৎসলা ত্রিনয়নী গৌরী। আপনাকে প্রণাম ।।৩।।
শরণাগত, দীন এবং পীড়িতকে রক্ষায় সতত নিরত তথা সকলের পীড়া নিবারণকারিণী নারায়ণী দেবি! আপনাকে প্রণাম ।।৪।।
সর্বস্বরূপা, সর্বেশ্বরী তথা সর্বপ্রকার শক্তিসম্পন্না দিব্যরূপা দেবি দুর্গে! সকল ভয় থেকে আমাদের রক্ষা করুন, আপনাকে প্রণাম ।।৫।।
হে দেবি! আপনি প্রসন্ন হলে সর্বব্যাধি দূর করে দেন, আবার কুপিত হলে মনোবাঞ্ছিত সব কামনা নাশ করে দেন। যারা আপনার শরণ গ্রহণ করেছে, তাদের কাছে বিপদ কখনও আসে না। আপনার শরণগ্রহণকারী ব্যক্তি অপরের শরণদাতা হন ।।৬।।
হে সর্বেশ্বরি! আপনি এই রকম তিন লোকের সমস্থ বাধা দূর করুন এবং আমাদের শত্রু নাশ করুন ।।৭।।
শ্রীসপ্তশ্লোকী দুর্গা সম্পূর্ণ হল ।।

Teachings from Sri Maa

Each and every word that came out from the mouth of Thakur is eternal truth. They can never be fake for God is always truth. The one having strong and unbaised faith in him only gets liberated. 


How much you try to seperate the Lord and his devotee, Lord will keep his devotee with him every time and bring him to his divine abode. Just like Hanuman cannot live without Siyaram always engaged in devotional service to their Lotus feet.


The scriptural chants, bathe in holy gangas, recitation of Vedas, nothing can purify a soul if the heart is not in love with the feet of Sri Krishna.


In this world it is not only you who suffer. There are millions who suffer much more than you and are still serving you. So its not good to think about your own welfare first but others welfare should be thought first.

Mercy of Lord Shiva

The one who calls Lord Shiva even at the time of distress is saved from the demons of the world by the Lord for the Lord alone rules all Pishach, Bhut, Pret and pocess supreme control over them. Lord Bolenath even if called only at the time of distress never leaves his devotees alone.

Teachings from Sri Maa

The one taking shelter in me fear nothing neither anything material nor anything beyond material world for he knows he has taken shelter in the Lotus feet of the Supreme Power of the Universe.

Sri Sharada Devi

Mohamaya Shonatoni, Shoktirupa Gunomoyi, Tini ek tobuo prokash bibhinno rupe