Monday 24 October 2016

রাত্রিসূক্ত Raatrisuktam Ved

শ্রী  চণ্ডী মাহাত্য
                বেদে উক্ত রাত্রিসূক্ত
রাত্রিসূক্তের ঋষি (মন্ত্রদ্রষ্টা)-কুশিক, ছন্দ-গায়ত্রী ও দেবতা-রাত্রি।
শ্রীজগদম্বার প্রীতির জন্য চণ্ডীপাঠের পূর্বে রাত্রিসূক্ত পাঠ করিতে হয়।
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
মহৎতত্ত্বাদিরূপ ব্যাপক ইন্দ্রিয়গণের দ্বারা সব দেশে চরাচর সমস্ত বস্তুকে প্রকাশ করার নিমিত্ত এই রাত্রিরূপা দেবী তার মধ্যে থেকে জাত জাগতিক জীবের শুভাশুভ কর্মের ওপর বিশেষরূপে লক্ষ্য রাখেন এবং সেই কর্মানুরূপ ফলের ব্যবস্থা করার উপযুক্ত সমস্ত বিভূতি ধারণ করেন ।।১।।
এই দেবী অমর এবং সমগ্র বিশ্বকে অধোমুখী তৃণগুল্ম থেকে উর্ধ্বমুখী বৃক্ষ পর্যন্ত ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থান করেন; শুধু তাই নয় ইনি জ্ঞানময় জ্যোতি দিয়ে জীবের অজ্ঞানান্ধকার নাশ করেন ।।২।।
পরা চিৎশক্তিরূপ রাত্রিদেবী এসে তাঁর ভগ্নী ব্রহ্মবিদ্যাময়ী উষাদেবীকে প্রকাশ করেন, যেই প্রকাশে অবিদ্যাময় অন্ধকার স্বতঃই দূর হয়ে যায় ।।৩।।
এই রাত্রিদেবী এখন আমার ওপর প্রসন্ন হোন। এঁর আগমনে আমরা ঠিক সেইরকমভাবে নিজেদের বাড়ীতে সুখে শয়ন করি, যেমনভাবে রাত্রিতে গাছের ওপর নিজেদের তৈরী বাসায় পাখীরা সুখে রাত্রিবাস করে ।।৪।।
ঐ কৃপাময়ী রাত্রিদেবীর কোলে সমস্ত গ্রামবাসী মানুষ, পদচারী গবাশ্বাদি পশু, পাখী এবং পতঙ্গাদি, প্রয়োজনীয় কর্মে পথচারী পথিক এবং শোনাদিও সুখে শয়ন করে ।।৫।।
হে রাত্রিময়ী চিৎশক্তি! তুমি কৃপা করে বাসনাময়ী ব্যাঘ্রী ও পাপময় ব্যাঘ্রদের থেকে আমাদের রক্ষা করো। কামাদি তস্করদেরও দূর করে দাও। তারপর সংসারসাগররূপ বৈতরণী অনাযাসে পার করে দাও - মোক্ষদায়িনী কল্যাণকারিণী হও ।।৬।।
হে উষা! হে রাত্রির অধিষ্ঠাত্রী দেবী! চতুর্দিকে বিস্তৃত এই অজ্ঞানময় গাঢ় অন্ধকার আমার কাছে এসে হাজির হয়েছে। নিজের স্তোতৃগণকে ধনপ্রদানের দ্বারা তুমি যেমন তাদের ঋণ অপগম কর, সেইরকম এই ঋণের বোঝাও দূর কর - জ্ঞানদান দ্বারা এই অজ্ঞানকেও দূর কর ।।৭।।
হে রাত্রিদেবী! তুমি দুগ্ধবতী গাভীর মত। তোমার কাছে এসে স্তুতিজপাদি দ্বারা আমি তোমাকে প্রসন্ন করছি। তুমি পরমাকাশরূপ সর্বব্যাপী পরমাত্মার কন্যা! তোমার কৃপাতে আমি কামাদি শত্রুকে জয় করেছি, তুমি স্তোমরূপ আমার প্রদত্ত এই হবিষাও কৃপা করে গ্রহণ কর ।।৮।।
ইতি ঋগ্বেদোক্ত রাত্রিসূক্ত সমাপ্ত ।
যে ব্রহ্মরূপা মহামায়া পুনঃপুনঃ অসুরবধার্থ আবির্ভূতা হন, যিনি প্রাণিগণের সুখদাত্রী ও কন্যারূপিনী, যিনি ময়ূরপুচ্ছভূষণা (শিখণ্ডিনী) ও অসুরবধার্থ পাশহস্তা এবং যিনি নিত্য বাল্য ও বার্ধক্যাবস্থা-রহিতা ও কুমারী প্রভৃতি শক্তিসমূহের সমষ্টীভূতা, সেই রাত্রিরূপা দেবীর শরণাপন্ন হই। তাঁহার প্রভাবে সূর্য চক্ষুদ্বয়কে শ্রীযুক্ত করিয়া রক্ষা করুন; বায়ুদেবতা পঞ্চপ্রাণ রক্ষা করুন; সোমদেব ঘ্রাণেন্দ্রিয় রক্ষা করুন; বরুণদেব সকল তরল পদার্থ রক্ষা করুন, চন্দ্রদেব আমার মন রক্ষা করুন এবং পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবতা আমার শরীর রক্ষা করুন ।
সামবিধিব্রাহ্মণমতে রাত্রিতে এই দেবীমন্ত্রজপমাত্রেই সিদ্ধিলাভ হয়। এই সূক্তপাঠের অবান্তর ফল মরণকালজ্ঞান ও পরম ফল মোক্ষ-প্রাপ্তি ।
সামবিধিব্রাহ্মণোক্ত রাত্রিসূক্ত সমাপ্ত ।

No comments:

Post a Comment