Sunday 9 October 2016

অর্গলাস্তোত্র Argalastotram

শ্রী চণ্ডী মাহাত্য
                      অর্গলাস্তোত্র
ঔং চণ্ডীকা দেবী কে প্রণাম
এই অর্গলাস্তোত্রের ঋষি হলেন বিষ্ণু, ছন্দ হল অনুষ্টুপ ও দেবতা হলেন শ্রীমহালক্ষ্মী। জগজ্জননীর প্রীতির জন্য শ্রীশ্রীচণ্ডীপাঠের অঙ্গরূপে এই স্তোত্র পাঠ করা হয়।
মার্কণ্ডেয় বললেন–
হে দেবী, তুমি সর্বোৎকৃষ্টা জয়যুক্তা দেবী জয়ন্তী; তুমি জন্মমৃত্যুবিনাশিনী মোক্ষপ্রদায়িনী দেবী মঙ্গলা; তুমি সর্বসংহারকারিণী কালী; তুমি সুখদায়িনী ভদ্রকালী; আবার তুমিই প্রলয়কালে ব্রহ্মা প্রমুখের মাথার খুলি হস্তে নৃত্যরতা কপালিনী। তুমি দুর্গা, কারণ বহু কষ্ট স্বীকার করে তবে তোমায় লাভ করা যায়; তুমি চৈতন্যময়ী কল্যাণময়ী শিবা; তুমি করুণাময়ী ক্ষমা; তুমি বিশ্বধারিণী ধাত্রী; তুমি দেবগণের পোষণকর্ত্রী স্বাহারূপে যজ্ঞভাগ গ্রহণ কর ও পিতৃগণের পোষণকর্ত্রী স্বধারূপে শ্রাদ্ধভাগ এবং তর্পণ গ্রহণ কর। তোমায় প্রণাম করি ।।১।।
হে দেবী চামূণ্ডা, তোমার জয় হোক। হে দেবী, তুমি জীবের দুঃখনাশকারিণী; তুমি সর্বভূতে অবস্থিতা; আবার তুমিই প্রলয়ের অন্ধকার স্বরূপিণী কালরাত্রি। তোমায় প্রণাম করি ।।২।।
হে দেবী, তুমি মধুকৈটভ নামক দুই অসুরকে বিনাশ করেছিলে। তুমি ব্রহ্মাকে বরপ্রদান করেছিলে। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৩।।
হে দেবী, তুমি মহিষাসুরমর্দিনী। আবার তুমিই ভক্তগণে সুখ প্রদান করে থাকো। তোমায় প্রণাম করি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৪।।
হে দেবী, তুমি রক্তবীজ, চণ্ড ও মুণ্ড অসুরত্রয়কে বধ করেছিলে। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৫।।
হে দেবী, তুমি শুম্ভ ও নিশুম্ভ অসুরদ্বয়কে বধ করেছিলে। আবার তুমিই তিন লোকের কল্যাণকারিনী। তোমায় প্রণাম করি। হে দেবী, তুমি ধূম্রলোচন অসুরকে বধ করেছিলে। আবার তুমিই ভক্তকে ধর্ম, অর্থ ও কাম প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৬।।
হে দেবী, ব্রহ্মা প্রমুখ দেবগণ তোমার পদযুগল বন্দনা করেন। তুমি সকল প্রকার সৌভাগ্য প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৭।।
হে দেবী, তোমার রূপ ও কার্য চিন্তার অগম্য। তুমি সকল শত্রুকে বিনাশ করে থাকো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৮।।
হে চণ্ডিকে, তুমি আশ্রিত ভক্তের পাপ নাশ করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।৯।।
হে দেবী চণ্ডিকা, যে ভক্তিসহকারে তোমার স্তব করে, তুমি তার ব্যাধি নাশ করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১০।।
হে দেবী চণ্ডিকা, তুমি সতত যুদ্ধে বিজয়িনী ও পাপনাশিনী। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১১।।
হে দেবী, তুমি আমাকে সৌভাগ্য ও আরোগ্য প্রদান করো। আমাকে দাও পরম সুখ। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১২।।
হে দেবী, তুমি আমার কল্যাণ করো। আমাকে প্রদান করো বিপুল ঐশ্বর্য। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৩।।
হে দেবী, তুমি আমার শত্রুনাশের সহায়ক হও। আমাকে দাও প্রচুর বল। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৪।।
হে দেবী, দেবতা ও অসুরগণের মুকুটের মণি তোমার চরণপদ্মে লুটায়। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৫।।
তুমি আমাকে ব্রহ্মবিদ্যা, যশ ও ধন প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৬।।
হে দেবী, তুমি প্রবল পরাক্রমশালী দৈত্যের দর্প চূর্ণ করেছো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৭।।
হে দেবী চণ্ডিকা, তুমি প্রচণ্ড দৈত্যের দর্প হরণ করেছো। তোমার পায়ে সতত আমার প্রণাম রাখি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৮।।
হে চতুর্ভূজা দেবী, হে পরমেশ্বরী, ব্রহ্মা চার মুখে তোমার স্তব করেন। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।১৯।।
হে দেবী অম্বিকা, কৃষ্ণ সর্বদা ভক্তিসহকারে তোমার স্তব করেন। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২০।।
হে পরমেশ্বরী, হিমালয়ের কন্যা উমার পতি শিব সর্বদা তোমার স্তব করেন। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২১।।
শচীপতি ইন্দ্রের দ্বারা সৎভাবে পূজিতা হে পরমেশ্বরি ! তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২২।।
হে দেবী, তুমি ভক্তের হৃদয়ে প্রদান করো অপার আনন্দ। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২৩।।
হে দেবী, আমার মন বুঝে চলবে এমন মনোরমা পত্নী আমাকে প্রদান করো। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২৪।।
হে উচ্চকুলে উৎপন্না গিরিসূতা, দুস্তর সংসারসমুদ্রে আমাকে রক্ষা করো তুমি। তুমি আমাকে রূপ অর্থাৎ আত্মস্বরূপের জ্ঞান, জয় অর্থাৎ মোহের উপরে বিজয় এবং যশ অর্থাৎ জ্ঞানপ্রাপ্তিরূপ যশ প্রদান কর। তুমি আমার কামক্রোধ ইত্যাদি শত্রুগুলিকে নাশ করো ।।২৫।।
এই স্তোত্র পাঠ করিয়া মহাস্তোত্র (সপ্তশতমন্ত্রাত্মিকা চণ্ডী) পাঠ করা উচিত। এইরূপে সপ্তশতীর আরধনা করিলে জপসংখ্যাসম শ্রেষ্ঠ ফল প্রাপ্ত হয়। সাথে সাথে সে প্রভূত সম্পদাও লাভ করে ।।২৬।।
দেবীর অর্গলাস্তোত্র সম্পূর্ণ হল ।

No comments:

Post a Comment