Wednesday 19 October 2016

Devi Bhagwat: Devi Bhagwat Mahatmya : Chapter 1, দেবী ভাগবত কথা

দেবী ভাগবত পুরাণ
            শ্রীমদ্দেবীভাগবত-মাহাত্য
প্রথমোধ্যায়
ঋষিগণ তথা ঋষি সূতের সংবাদ, দেবী ভাগবতের মাহাত্য
যিনি সৃষ্টিকালে সর্গশক্তি, স্থিতিকালে পালন শক্তি তথা সংহারকালে রুদ্রশক্তি রূপে বিরাজ করেন, অখিল জগত যার মনোরঞ্জনের সামগ্রী; পরা, পশ্যন্তি, মধ্যমা, বৈখরী বাণী রূপে যিনি বিরাজমানা তথা ব্রহ্মা, বিষ্ণু এবং শঙ্কর দ্বারা যিনি আরাধিতা, সেই ভগবতী আদ্যা আমাদের বাণীকে সুশোভিত করুন ।।১।।
নারায়ণ ও নর (বদরিকাশ্রমের দুই ঋষি) এবং নরোত্তম (বিষ্ণু) ও দেবী সরস্বতীকে প্রণাম করিয়া ও ব্যাসদেবকে প্রণাম করিয়া জয় (সংসার জয়কারী পুরানাদি) গ্রন্থ পাঠ করিবে ।।২।।
ঋষিগণ কহিলেন -
হে ঋষি সূত ! আপনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান। আপনি ব্যাসদেবের কাছ হইতে শিক্ষাপ্রাপ্ত। আপনি বহুবর্ষ জীবিত থেকেছেন। হে ভগবান ! আপনি আমাদের মনপ্রসন্ন করার মত পবিত্র কথা শোনাবার কৃপা করুন ।।৩।।
ভগবান বিষ্ণুর অবতরণের পবিত্র কথা সম্পুর্ণ পাপের সংহারকারী এবং অত্যন্ত অদ্ভুত। আমরা ভক্তিপুর্বক তার শ্রবণ করেছি ।।৪।।
ভগবান শিবের দিব্য চরিত্র, ভস্ম, এবং রুদ্রাক্ষ ধারণ করার মহিমা তথা এর ইতিহাসও আপনার মুখারবিন্দ হইতে শ্রবণ করার সুঅবসর আমাদের প্রাপ্ত হইছে ।।৫।।
এবার আমরা সেই কথা শ্রবণ করতে ইচ্ছুক যা পরম পবিত্র তথা যার প্রভাবে মনুষ্য সুগমতাপুর্বক মুক্তি আর মুক্তির সম্পুর্ণ অধিকারী হয়ে ওঠে ।।৬।।
আপনি হইতে শ্রেষ্ঠ অন্য কোনও সন্দেহনিবারণকারীকে আমরা দেখি না। আপনি আমাদের মুখ্য-মুখ্য কথা শোনাবার কৃপা করুন, যাতে কলিযুগের মনুষ্যও সিদ্ধি লাভ করতে পারে ।।৭।।
ঋষি সূত কহিলেন -
হে ঋষিগণ ! তোমরা বড়ই ভাগ্যশালী। জগতকল্যাণ হেতু তোমারা বড়ই উত্তম প্রশ্ন করেছ। অতএব সম্পুর্ণ শাস্ত্রের যা সাররূপ, সেই প্রসঙ্গ বিশদরূপে তোমাদের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছি ।।৮।।
সমস্ত তীর্থ, পুরাণ এবং ব্রত নিজ নিজ শ্রেষ্ঠতার বর্ণনা করে ততকালই গর্জন করে যতকাল মনুষ্য সম্যকরূপে দেবীভাগবত শ্রবণ না করে ।।৯।।
মনুষ্যগণের জন্য পাপরূপি অরণ্য ততকালই দুঃখপ্রদ এবং কণ্টকময় হয় যতকাল দেবীভাগবতরূপী পরশু উপলব্ধ না হয় ।।১০।।
গ্রহণরূপী ঘোর অন্ধকার ততকালই কষ্ঠপ্রদ হয়, যতকাল দেবীভাগবতরূপী সুর্যের উদয় হয় না ।।১১।।
ঋষিগণ কহিলেন -
হে মহাভাগে সূত ! আপনি বক্তাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। সেই পুরাণ কেমন এবং তাহাকে শ্রবণ করিবার কোন বিধি আছে ।।১২।।
কত দিবসে এই কথা সম্পূর্ণ হয়? এই কথায় কোন দেবতার পূজা হওয়া উচিত তথা কতজন মনুষ্য এই কথা পুর্বে শ্রবণ করেছেন এবং তাদের কোন-কোন অভিলাষ পূর্ণ হয়েছে? সেই সব আমাদেরকে শোনাবার কৃপা করুন ।।১৩।।
ঋষি সূত কহিলেন -
মহর্ষি ব্যাসদেব ভগবান বিষ্ণুর অংশ। পরাশর মুনি তার পিতা আর দেবী সত্যবতী মাতা। ব্যাসদেব বেদকে চতুর্ভাগে বিভাজিত করে তার শিষ্যদের পড়িয়েছিলেন ।।১৪।।
কিন্তু যারা সংস্কারহীন, নীচ কুলে উত্পন্ন, বেদ পাঠের অনধিকারী এবং নারীগণ তথা মুর্খজন, তাদের ধর্মজ্ঞান কেমন করে হবে - এই চিন্তা তার মনে জাগ্রত হল ।।১৫।।
তখন স্বয়ং মনে বিচার করে তিনি উক্ত প্রাণিগণের ধর্মজ্ঞানার্থে পুরাণ-সংহিতার সম্পাদন করলেন ।।১৬।।
অষ্টাদশ পুরাণের রচনা করে তিনি আমাকে পড়ালেন। মহাভারতের কথাও শোনালেন ।।১৭।।
সেই সময় ভুক্তি এবং মুক্তি প্রদানকারী দেবীভাগবত নামক পুরাণের রচনা করলেন। স্বয়ং তার বক্তা হলেন এবং রাজা জনমেজকে শ্রোতা হওয়ার সুঅবসর প্রদান করলেন ।।১৮।।
পুর্ব সময়ের কথা - মহারাজা পরীক্ষিতের পুত্র রাজা জনমেজকে তক্ষক সর্প দংশন করেছিল। তার দুর্গতি-নিবারণের জন্য রাজা জনমেজ দেবীভাগবত শ্রবণ করলেন ।।১৯।।
বেদব্যাসদেবের মুখারবিন্দ হতে নয় দিবসে এর শ্রবণ-বিধি সম্পূর্ণ করলেন। তিনি ত্রিলোক জননী ভগবতী আদ্যাশক্তির বিধিপূর্বক পূজনও করতেন ।।২০।।
নবাহ যজ্ঞ সমাপ্ত হওয়ার পর তত্ক্ষণ মহারাজ পরীক্ষিত ভগবতীর পরমধামকে প্রাপ্ত হল। দিব্য-রূপ ধারণ করে তিনি সেই স্থানে গমন করলেন ।।২১।।
পিতা পরমধাম প্রাপ্ত হয়েছে এই দর্শন করিয়া রাজা জনমেজের অপার হর্ষ হল। তিনি মুনিবর ব্যাসদেবের আচারমত যথাযথ পূজা করলেন ।।২২।।
অষ্টাদশ পুরাণের মধ্যে পরম এবং সর্বোত্তম এই দেবীভাগবতপুরাণ। এই পুরাণ ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ চতুর্পুরুষার্থের ফলদায়ী ।।২৩।।
যে মানব ভক্তিপূর্বক দেবীভাগবত কথা শ্রবণ করে, সিদ্ধি সদা তার সংনিকট খেলা করে। অতএব তার নিরন্তর এই পুরাণের শ্রবণ করা উচিত ।।২৪।।
যে নর অর্থ বুঝে ভক্তিভরে দিবসে অর্ধ শ্রবণ করে বা মুহূত্তক্ষণও শ্রবণ করে তার কদাচিৎও দুর্গতি হয়ে না ।।২৫।।
সর্বযজ্ঞের, সর্বতীর্থের, সর্বদানের যা ফল লাভ হয়, তাহা সর্ব মিলিত রূপে একবারেই এই পুরাণ শ্রবণ করলে লাভ হয় ।।২৬।।
সত্যযুগ, ত্রেতা এবং দ্বাপরে অনেক ধর্ম ছিল, কিন্তু কলিকালের জন্য এক পুরাণ-শ্রবণই ধর্ম। এর অতিরিক্ত মনুষ্যকে উদ্ধার করার আর দ্বিতীয় কোন ধর্ম নেই ।।২৭।।
কলিকালের মনুষ্যগণ ধর্ম তথা সদাচারহীন এবং অল্পায়ু। তাদের কল্যাণের জন্য ভগবান ব্যাসদেব পুরাণ-সঙ্গক এই অমৃতরসের নির্মাণ করেছেন ।।২৮।।
অমৃতপান করে কেবল একজন মনুষ্যই অজর-অমর হয় কিন্তু ভগবতী কথারূপী অমৃত সম্পূর্ণ কূলকে অজর-অমর করে দেয় ।।২৯।।
দেবীভাগবতের শ্রবণে মাস এবং দিবসের কোন বিশেষ নিয়ম নেই। মনুষ্যগণ সদাই এর শ্রবণ করতে পারে ।।৩০।।
আশ্বিন, চৈত্র, বৈশাখ আর জৈষ্ঠ মাসে তথা চার নবরাত্রে শ্রবণ করলে এই পুরাণ বিশেষ ফলদায়ী হয় ।।৩১।।
নবরাত্রে এর অনুষ্ঠান করলে মনুষ্যগণ সকল পুণ্যকর্মের থেকে অধির ফল প্রাপ্ত করে, অতএব একে "নবাহ-যজ্ঞ" বলা হয় ।।৩২।।
যারা কলুষিত বিচারযুক্ত, পাপী, মুর্খ, মিত্রদ্রোহী, বেদের নিন্দাকারী, হিংসায় সংলগ্ন আর নাস্তিক, সেই সমস্ত ব্যক্তিদেরও কলিযুগে এই নবাহ-যজ্ঞের দ্বারা নিস্তার হয় ।।৩৩।।
যেই অতিলোভী নরগণ অন্যের বস্তু হরণ করে নিজ দ্বারে আনে এমন পাপভারে কলুষিত নরগণ, গো দেবতা তথা ব্রাহ্মণের প্রতি ভক্তিহীনাও নবাহ যজ্ঞের দ্বারা শীঘ্রই পাপমুক্ত ও শুদ্ধ হয়ে যায় ।।৩৪।।
মহান তপ, ব্রত, তীর্থ, দান, নিয়ম, হবন তথা যজ্ঞ করেও মনুষ্যগণের কাছে যেই ফল দুর্লভ হয়ে থাকে, সেটাও নবাহ যজ্ঞের দ্বারা সুলভ হয়ে যায় ।।৩৫।।
গঙ্গা, গয়া, কাশী, নৈমিষারণ্য, মথুরা, পুষ্কর এবং বদরীবন আদি তীর্থের যাত্রা থেকেও সেই ফল প্রাপ্ত হয় না যা নবাহ্র পারায়ণ রূপী দেবী ভাগবত শ্রবণ যজ্ঞের দ্বারা প্রাপ্ত হয় ।।৩৬।।
অতএব সমস্ত পুরাণের মধ্যে দেবীভাগবত সর্বোত্তম পুরাণ। ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ প্রাপ্তি হেতু ইহাই সর্বোপরি সাধন ।।৩৭।।
সূর্য কন্যারাশিতে স্থিত হলে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথির দিবসে শ্রীমদ্দেবীভাগবতের পুস্তক স্বর্ণ সিংহাসনের উপর স্থাপিত করে ভক্তিপূর্বক যোগ্য ব্রাহ্মণকে দান করা উচিত। এমন করে সেই পুরুষ দেবীর প্রীতিভাজন হয়ে তার পরমপদের অধিকারী হয়ে যায় ।।৩৮-৩৯।।
যেই পুরুষ দেবীভাগবতের একটি শ্লোক অথবা অর্ধশ্লোকেরও ভক্তিভাবে নিত্য পাঠ করে, তার উপরে দেবী প্রসন্না হন ।।৪০।।
মহামারী ইত্যাদি ভয়ঙ্কর রোগও তথা ঘোর উপসর্গ আদি অনেক প্রকারের উৎপাতও দেবীভাগবতের শ্রবণমাত্রই শমন হয়ে যায় ।।৪১।।
পুতনা আদি বালগ্রহকৃত তথা ভয়ঙ্কর ভূত-প্রেত, এই দেবী ভাগবত শ্রবণ করিলে আসেপাসেও ভ্রমণ করতে পারে না, তারা দুরে-দুরেই থাকে ।।৪২।।
যেই মনুষ্য ভক্তিপূর্বক দেবীভাগবতের পাঠ এবং শ্রবণ করে সে ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষফলের অধিকারী হয়ে যায় ।।৪৩।।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন প্রসেনের সন্ধানে গিয়েছিলেন, এবং বহু কাল পরেও ফিরলেন না, তখন বসুদেব এই দেবীভাগবত পুরাণ শ্রবণ করলেন। এর প্রভাবে তিনি তার প্রিয় পুত্র শ্রীকৃষ্ণকে শীঘ্র প্রাপ্ত করে আনন্দলাভ করেছিলেন ।।৪৪।।
যেই পুরুষ দেবীভাগবতকথা ভক্তি সহকারে পাঠ করে এবং শ্রবণ করে, ভুক্তি আর মুক্তি তার করতলগত হয়ে থাকে ।।৪৫।।
এই কথা অমৃতস্বরূপা, এর শ্রবণে অপুত্র পুত্রবান, দরিদ্র ধনবান এবং রোগী আরোগ্যবান হয়ে যায় ।।৪৬।।
যেই স্ত্রী বন্ধ্যা, কাকবন্ধ্যা তথা মৃতবৎসা তারাও দেবীভাগবত কথা শ্রবণ করে দীর্ঘজীবী পুত্রের জননী হবার সৌভাগ্য প্রাপ্ত করে ।।৪৭।।
যেই ঘরে শ্রীদেবীভাগবতের পুস্তক নিত্য পূজিত হয়, সেই ঘর তীর্থস্বরূপ হয়ে যায়। সেইস্থানের স্থাই ব্যক্তিদের পাপ নাশ হয় ।।৪৮।।
যেই ব্যক্তি অষ্টমী, নবমী অথবা চতুর্দশীর দিবসে ভক্তিসহকারে এই কথা শ্রবণ বা পাঠ করে, সে পরমসিদ্ধি উপলব্ধ করে ।।৪৯।।
যে এর পাঠ করে সে যদি ব্রাহ্মণ হয় তবে প্রকাণ্ড বিদ্বান, ক্ষত্রিয় হলে মহান শূরবীর, বৈশ্য হলে প্রচুর ধনের অধিকারী এবং শূদ্র হলে নিজ কুলে সর্বোত্তম হয়ে যায় ।।৫০।।
ইতি শ্রীস্কন্দপুরাণের মানসখণ্ডে শ্রীমদ্দেবীভাগবতমাহাত্যে দেবীভাগবতশ্রবণমাহাত্যবর্ণন নামক প্রথমোধ্যায়

No comments:

Post a Comment