Wednesday 27 December 2017

Chanti Path Chapter 3 শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী তৃতীয় অধ্যায়

শ্রী চণ্ডী মাহাত্য
।। শ্রীদুর্গাকে প্রণাম ।।
শ্রীশ্রীদুর্গাসপ্তশতী
তৃতীয় অধ্যায়
সেনাপতিগণসহ মহিষাসুরকে বধ
ধ্যান :-
দেবী জগদম্বার শ্রীঅঙ্গের কান্তি উদয়কালীন সহস্র সূর্যের মত। তাঁর পরণে রক্তবর্ণ কৌষেয় বস্ত্র। তিনি নরমুণ্ডমালিনী, তাঁর স্তনযুগল রক্তরঞ্জিত, চার কমলহস্তে অক্ষমালা, বিদ্যা ও অভয় তথা বরমুদ্রাধারিণী। তাঁর মুখমণ্ডল ত্রিনয়নে শোভিত ও কমলবৎ সুন্দর। তাঁর মাথায় চন্দ্রের সাথে রত্নময় মুকুট এবং তিনি কমলাসনে অবস্থিতা। সেই দেবীকে আমি ভক্তিপূর্বক প্রণাম করি ।।
মেধা ঋষি বললেন - ।।১।।
অসুরসেনাদের এই রকম তছনছ অবস্থা দেখে সেনাপতি চিক্ষুর ক্রোধে আরক্ত হয়ে অম্বিকা দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে এগিয়ে এল ।।২।।
মেঘ যেমন সুমেরু পর্বতের চুড়াকে বারিধারায় আচ্ছন্ন করে, সেই চিক্ষুরাসুরও সেই রকম ভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বাণ বৃষ্টি করতে লাগল ।।৩।।
অনন্তর দেবী স্বীয় বাণের দ্বারা চিক্ষুরের বাণসকল অনায়াসেই ছেদন করে তার রথের সারথি ও অশ্বগুলিকেও বধ করলেন ।।৪।।
সাথে সাথে তার ধনু এবং অতি উচ্চ রথধ্বজা কেটে দিলেন। পরে ধনুকহীন সেই অসুরের সর্বাঙ্গ বাণ দ্বারা বিদ্ধ করলেন ।।৫।।
ধনুক, রথ, অশ্ব ও সারথিবিহীন হয়ে সেই অসুর খড়্গ ও ঢাল নিয়ে দেবীর প্রতি ধাবিত হল ।।৬।।
তীক্ষ্নধার খড়্গ দিয়ে সিংহের মস্তকে আঘাত দিয়ে, দেবীরও বাম হাতে মহাবেগে খড়্গপ্রহার করল ।।৭।।
রাজন্! দেবীর বাহুতে লেগে সেই খড়্গ টুকরো টুকরো হয়ে গেল দেখে রক্তচক্ষু হয়ে সেই অসুর শূল গ্রহণ করল ।।৮।।
অনন্তর সেই মহাসুর ওই শূলটা ভগবতী ভদ্রকালীর দিকে নিক্ষেপ করল। সেই শূলটী আকাশে ওঠামাত্র সূর্যমণ্ডলের মত নিজের তেজে জ্বলে উঠল ।।৯।।
সেই শূলকে নিজের দিকে আসতে দেখে দেবীও তাঁর নিজের শূল নিক্ষেপ করলেন। দেবীর শূলে মহাসুরের শূল শতটুকরা হয়ে গেল এবং সেই সাথে মহাসুর চিক্ষুরও শতধা বিদীর্ণ হয়ে গেল ।।১০।।
মহিষাসুরের সেনাপতি মহাপরাক্রমশালী চিক্ষুর নিহত হলে দেবশত্রু চামর হাতীর পিঠে চড়ে যুদ্ধ করতে এল। সেও এসে দেবীর প্রতি শক্তি অস্ত্র প্রয়োগ করল কিন্তু জগদম্বা হুঙ্কারনাদে তাকে প্রতিহত এবং নিষ্প্রভ করে ভূতলে নিপাতিত করলেন ।।১১-১২।।
শক্তি অস্ত্রকে ভগ্ন এবং ভূপাতিত দেখে চামরাসুর খুবই ক্রুদ্ধ হল। সে তখন শূল নিক্ষেপ করল কিন্তু সেই শূলও দেবী বাণ দিয়ে কেটে দিলেন ।।১৩।।
তখন দেবীবাহন সিংহ হাতীর মাথার উপরে চড়ে বসল এবং সেই অসুরের সঙ্গে প্রচণ্ড বাহুযুদ্ধ করতে লাগল ।।১৪।।
দুজনে যুদ্ধ করতে করতে মাটীতে নেমে এল এবং ভীষণ ক্রোধের সাথে পরস্পরকে অতি দারুণ আঘাত করে যুদ্ধ করতে লাগল ।।১৫।।
তারপর সিংহ ভীষণ বেগে আকাশের দিকে লাফিয়ে উঠলেন এবং সবেগে নীচে নামার সময় করাঘাতে চামরের মাথা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেন ।।১৬।।
এইভাবে শিলা ও বৃক্ষের আঘাতে রণভূমিতে দেবী উদগ্রাসুরকে বধ করলেন এবং দন্ত, মুষ্টি ও চপেটাঘাতে করালাসুর ধরাশায়ী হল ।।১৭।।
ক্রুদ্ধা হয়ে দেবী গদাঘাতে উদ্ধতাসুরকে, ভিন্দিপাল দিয়ে বাস্কলাসুরকে এবং বাণাঘাতে তাম্রাসুর ও অন্ধকাসুরকে চূর্ণবিচূর্ণ করলেন ।।১৮।।
ত্রিনয়না পরমেশ্বরী ত্রিশূল দিয়ে উগ্রাস্য, উগ্রবীর্য ও মহাহনু নামক অসুরদের বধ করলেন ।।১৯।।
তরোয়াল দিয়ে বিড়ালাসুরের শরীর থেকে মস্তক ছিন্ন করে ফেললেন। দুর্ধর ও দুর্মুখ - এই দুই অসুরকেও নিজের বাণ দ্বারা যমালয়ে পাঠিয়ে দিলেন ।।২০।।
এইভাবে নিজের সৈন্যদের বিনষ্ট হতে দেখে মহিষাসুর মহিষের রূপ ধারণ করে দেবীর সৈন্যদের ভীতি সঞ্চার করতে লাগল ।।২১।।
কাউকে নিজের মুখ দিয়ে আঘাত করে, কিছু সৈন্যকে খুরপ্রহারে, কাউকে কাউকে লেজের আঘাতে, কাউকে কাউকে আবার শিং এর আঘাতে বিদীর্ণ করে। কিছু সৈন্যদের দ্রুতগতির দ্বারা, কিছুদের গর্জন দ্বারা, কাউকে কাউকে আবার চক্রাকারে ছোটাছুটি করে আর অন্য অবশিষ্ট কিছুদের নিঃশ্বাস বায়ুর আকর্ষণে ভূতলশায়ী করে দিল ।।২২-২৩।।
দেবীর প্রমথ-সৈন্যদের এইভাবে নিপাতিত করে মহিষাসুর এইবার মহাদেবীর বাহন সিংহকে বধ করবার জন্য ছুটে গেল। এতে জগদম্বা দেবী ভয়ানক ক্রুদ্ধা হলেন ।।২৪।।
তাতে আবার মহাপরাক্রমশালী মহিষাসুরও অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে পায়ের খুর দিয়ে ভূমি বিদীর্ণ করে নিজের শিং দিয়ে উঁচু উঁচু পর্বতশৃঙ্গ দেবীর দিকে নিক্ষেপ করে গর্জন করতে লাগল ।।২৫।।
তার সবেগ দৌড় ঝাঁপে পৃথিবী ক্ষুব্ধা হয়ে কাতর হলেন। মহিষের লেজের তাড়নায় সমুদ্র উদ্বেলিত হয়ে সব ভাসিয়ে দিল ।।২৬।।
তার কম্পিত শিংয়ের আঘাতে বিদীর্ণ হয়ে মেঘেরা সব খণ্ড বিখণ্ড হয়ে গেল। তার নিঃশ্বাসবায়ুর বেগে শত শত পর্বত আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়ে মাটীতে আছড়ে পড়তে লাগল ।।২৭।।
মহাক্রুদ্ধ মহাসুরকে নিজের দিকে সবেগে আসতে দেখে দেবী চণ্ডিকা তাকে বধের জন্য ক্রুদ্ধা হলেন ।।২৮।।
তিনি পাশাস্ত্র নিক্ষেপ করে মহিষাসুরকে বেঁধে ফেললেন। সেই মহাযুদ্ধে পাশবদ্ধ হওয়াতে সেই মহাসুর মহিষাকৃতি পরিত্যাগ করল ।।২৯।।
তৎক্ষণাৎ সিংহের রূপ ধরে প্রকাশ হল, সেই অবস্থায় যেইমাত্র তার মস্তক কাটতে উদ্যত হয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে সে খড়্গধারী পুরুষরূপে প্রকাশ হল ।।৩০।।
দেবী তৎক্ষণাৎ বাণ বর্ষণ করে ঢাল ও খড়্গ সমেত সেই পুরুষকে ছেদন করলেন। তৎক্ষণাৎ সে এক বিশাল হাতীর রূপ ধারণ করল ।।৩১।।
সেই বিশাল হাতী নিজের শুড় দিয়ে দেবীবাহন সিংহকে আকর্ষণ করে গর্জন করতে লাগল। শুঁড় দিয়ে আকর্ষণের সময় দেবী খড়্গ দিয়ে তার শুঁড়টী কেটে ফেললেন ।।৩২।।
তাতে সেই মহাসুর আবার মহিষের শরীর ধারণ করল। আগের মতই মহিষরূপে চরাচর প্রাণী সমেত ত্রিভুবন বিক্ষুব্ধ করতে লাগল ।।৩৩।।
অনন্তর জগন্মাতা চণ্ডিকা ক্রুদ্ধা হয়ে পুনঃপুনঃ উত্তম মধু পান করতে লাগলেন এবং আরক্ত নয়নে হাসতে লাগলেন ।।৩৪।।
ওদিকে সেই মহাসুরও দৈহিক বল ও পরাক্রমে মত্ত হয়ে গর্জন করতে লাগল এবং নিজের শিং দিয়ে চণ্ডী দেবীর ওপর বড় বড় পাহাড় ছুঁড়তে লাগল ।।৩৫।।
দেবী তাঁর বাণ দিয়ে সেই সব নিক্ষিপ্ত পর্বতসমূহকে চূর্ণ করে মধুর মাদকতায় রক্তিম মুখে বিজড়িত স্বরে বললেন ।।৩৬।।
দেবী বললেন - ।।৩৭।।
রে মূঢ়! আমি যতক্ষণ মধু পান করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুই গর্জন কর্। এখানে আমার হাতে তোর মৃত্যু হলেই শীগগিরই দেবতারা আনন্দ কোলহল করবে ।।৩৮।।
মেধা ঋষি বললেন - ।।৩৯।।
এই কথা বলে দেবী লম্ফ দিলেন এবং মহিষাসুরের উপরে চড়ে বললেন। তারপর পা দিয়ে তাকে চেপে ধরে শূল দিয়ে কণ্ঠে আঘাত করলেন ।।৪০।।
দেবীর পায়ের তলায় পিষ্ট অবস্থায়ও মহিষাসুর নিজের মুখ থেকে (অন্য আর এক রূপে বের হতে চেষ্টা করল) অর্দ্ধেক শরীরেই সে বেরহতে পারল কারণ দেবী তাঁর নিজের তেজে তার বাকীটা আটকে দিলেন ।।৪১।।
অর্দ্ধেকমাত্র শরীর বাইরে আসা সত্ত্বেও ওই মহাসুর দেবীর সাথে যুদ্ধ করতে লাগল। তখন এক বিশাল খড়্গাঘাতে দেবী তার মাথা কেটে মাটীতে লুটিয়ে দিলেন ।।৪২।।
তখন দৈত্যের সৈন্যসকল হাহাকার করতে করতে পালিয়ে গেল এবং দেবতারা অত্যন্ত আনন্দিত হলেন ।।৪৩।।
দেবতারা স্বর্গীয় মহর্ষিদের সাথে একত্র হয়ে দুর্গাদেবীকে স্তুতি করলেন। গন্ধর্বপতিগণ গান করলেন আর অপ্সরাগণ নৃত্য করতে লাগলেন ।।৪৪।।
শ্রীমার্কণ্ডেয়পুরাণে সাবর্ণিক মন্বন্তরে দেবীমাহাত্ম্যপ্রসঙ্গে মহিষাসুরবধনামক তৃতীয় অধ্যায় সম্পুর্ণ হল ।।৩।।

No comments:

Post a Comment