Saturday 5 August 2017

Devi Bhagwat Puran Chapter 3, দেবী ভাগবত পুরাণ তৃতীয়োধ্যায়

দেবী ভাগবত পুরাণ
শ্রীমদ্দেবীভাগবত-মাহাত্য
তৃতীয়োধ্যায়
দেবীভাগবত মাহাত্য-প্রসঙ্গে রাজা সুদ্যুম্নের স্ত্রী হবার এবং শ্রীমদ্দেবীভাগবত-শ্রবণের ফলস্বরূপ চিরকালের জন্য পুরুষ হয়ে রাজ্যলাভ তথা পরমপদ প্রাপ্ত করিবার কথা
ঋষি সূত বললেন -
হে মুনিগণ! এবার দ্বিতীয় ইতিহাস শ্রবণ করুন, যেখানে দেবীভাগবতের মাহাত্য গান করা হয়েছে ।।১।।
একবার লোপামুদ্রাপতি মুনি কুম্ভযোনি (অগস্ত্য) কুমারের নিকট গমন করিলেন এবং তাঁর বন্দনা করে তাঁকে বিবিধ কথা জিজ্ঞাসা করিলেন ।।২।।
ভগবান স্কন্দ তাঁকে দান, তীর্থ, ব্রতের মাহাত্য সম্বন্ধে অনেক কথা শোনালেন ।।৩।।
তিনি বারাণসী, মণিকর্ণীকা, গঁঙ্গা আদি তীর্থের মাহাত্য অনেক বিস্তার করে বর্ণণা করিলেন ।।৪।।
এই সমস্ত কথা শ্রবণ করে মুনিবরের প্রীতি হল। লোকের হিতার্থে তিনি পরম তেজস্বী কুমারকে পুনঃ জিজ্ঞাসা করিলেন ।।৫।।
অগস্ত্য মুনি বললেন -
হে তারকাসুরের সংহারকারী ভগবান! হে প্রভু! এবার দেবীভাগবতের মাহাত্য এবং তাঁর শ্রবণ বিধি বলিবার কৃপা করুন ।।৬।।
যেখানে ত্রিলোকজননী শাশ্বতী দেবীর চরিত্র গায়ন করা হয়েছে। দেবীভাগবত নামক পুরাণ পরমোত্তম ।।৭।।
ভগবান স্কন্দ বললেন -
হে ব্রহ্মন্! শ্রীভাগবতের মাহাত্যকে বিস্তারে কে বলতে পারে? তবুও আমি এখন সংক্ষেপে বলছি, শ্রবণ করুন ।।৮।।
যিনি নিত্যা, সচ্চিদানন্দরূপিণী জগদম্বিকা, ভুক্তিমুক্তিপ্রদায়িনী তিনিই সেই ভাগবতে সাক্ষাত বিরাজমান ।।৯।।
অতএব মুনি! এই দেবীভাগবতকে দেবীর বাঙ্ময়ী মুর্তি বলা হয়। এর পঠন এবং শ্রবণ করিলে জগতের কিছুই দুর্লভ থাকে না ।।১০।।
শুনেছি বিবস্বানের পুত্র শ্রাদ্ধদেব ছিলেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। বশিষ্ঠমুনির সম্মতিতে রাজা পুত্রেষ্টি যজ্ঞ করিলেন ।।১১।।
মনুর দয়িতা শ্রদ্ধা হোতার নিকট প্রার্থনা করিলেন - "হে ব্রহ্মন্! আপনি যজ্ঞবিধিতে এমন কিছু উপায় করুন যাতে আমার কন্যা হয়।" ।।১২।।
তখন হোতা মনে 'কন্যা উদ্ভব হোক' এই চিন্তা করে যজ্ঞ করিলেন। এই ব্যভিচারের কারণে ইলা নামক কন্যা উৎপন্ন হল ।।১৩।।
অতএব রাজা সুতাকে দর্শন করে গুরুকে নিরাশ মনে জিজ্ঞাসা করিলেন - "হে প্রভু! আপনার সংকল্পে এমন বৈষম্য হল কেমন করে?" ।।১৪।।
এই শুনে মুনি(বশিষ্ঠ) ধ্যানস্ত হয়ে জ্ঞাত হলেন যে হোতা এই ব্যতিক্রমের কারণ। তখন ইলার জন্য পুরুষত্ব কামনা করে তিনি ঈশ্বরের শরণ গ্রহণ করিলেন ।।১৫।।
মুনির তপের প্রভাবে এবং পরেশানুগ্রহে সব লোকের মধ্যে ইলা দেখতে দেখতেই পুরুষরূপে পরিণত হল ।।১৬।।
সেই সময় গুরু সংস্কার করে তাঁর সুদ্যুম্ন নাম রাখিলেন। সেই মনুসুত এমন বিদ্যানিধি হল যেন সরিতা রূপি সাগর (অর্থাৎ তাঁর সাগরের সম বিদ্যা সরিতা রূপে প্রবাহিত হত) ।।১৭।।
কালক্রমে যখন সুদ্যুম্ন অরুণ(নবোদিত সূর্যের মত রূপ ও গুণ) হল, তখন সে মৃগার্থে (শিকার করিতে) তাঁর সৈন্ধ (অশ্বের এক প্রকার) অশ্বে আরূঢ় হয়ে বনে গমন করিলেন ।।১৮।।
সে তাঁর সাথীদের সহিত ভ্রমণ করিতে করিতে একের পর এক বহু বনে গমন করিল। দৈব ইচ্ছাতেই সেই কুমারেরা হিমাদ্রির নীচভাগে অবস্থিত এক বনে আসিল ।।১৯।।
কোন এক সময়ে এখানে ভার্যা অপর্ণা সহিত দেবাধিদেব ভগবান শঙ্কর আনন্দে রমণ করছিলেন ।।২০।।
তখন সেখানে শিবদর্শনলালসায় মুনিগণ আগমন করিলেন। তাঁদের দর্শন করে গিরিজা লজ্জিত হয়ে গেলেন ।।২১।।
গিরিশা সহিত তাঁহাকে রমন করিতে দেখে নিবৃত্ত সংশিতব্রতী মুনিগণ বৈকুণ্ঠে নিলয়ে গমন করিলেন ।।২২।।
প্রিয়ার প্রিয় মনের ইচ্ছা করে তিনি (মহাদেব) সেই অরণ্যকে অভিশাপ দিলেন - "এখন থেকে আরম্ভ করে যেই পুরুষ এখানে প্রবেশ করিবে সে স্ত্রীতে পরিণত হবে।" ।।২৩।।
তখন থেকে আরম্ভ করে সেই দেশে পুরুষেরা বর্জিত। সেখানে প্রবেশ করে সুদ্যুম্ন নারীশ্রেষ্ঠাতে পরিণত হল ।।২৪।।
তাঁর অনুগামীরা স্ত্রীতে তথা অশ্ব অশ্বীতে পরিণত হয়েছে দেখে সে (সুদ্যুম্ন) বিস্মিত হল। অতএব সেই সুন্দরী নারী বনে-বনে বিচরণ করিতে লাগিল ।।২৫।।
একবার তিনি বুধের আশ্রমের সান্নিধ্যে গমন করিলেন। ভগবান বুধ তাঁকে দর্শন করে, যিনি চারুসর্বাঙ্গী তথা যার পীনোন্নত পয়োধর, যিনি বিম্বোষ্ঠী, কুন্দদন্তী (কুন্দ পুষ্পের মত সুন্দর দাঁত), সুমুখী তথা উৎপলাক্ষী; অনঙ্গশর (কামদেবের বাণ) ভগবান বুধকে বিদ্ধাঙ্গ (মায়াশক্তির দ্বারা অঙ্গে আহত করে) করে তাঁর মনে কাম বাসনা উৎপন্ন করিল ।।২৬-২৭।।
তিনিও (ইলা) সেই সুভ্রূ কুমারকে, যিনি সোমনন্দন, কামনা করিলেন। তখন তিনি বুধের সহিত হাস্য (আনন্দ) করিয়া তাঁর আশ্রমে বাস করিতে লাগিলেন ।।২৮।।
অতএব কালক্রমে তিনি (বুধ) তাঁর থেকে, যিনি মিত্রাবরুণের কৃপায় জন্মেছিলেন (মনু পুত্রের জন্য মিত্রবরুণের যজ্ঞ করেছিল),পুরূরবা নামক এক পুত্র উৎপন্ন করিলেন ।।২৯।।
অতএব বুধাশ্রমে বহু বর্ষ ব্যতীত হয়ে গেল। কদাচিৎ তাঁর পূর্ববৃত্তান্ত মনে পরে গেল, তিনি দুঃখিত হয়ে (আশ্রম হইতে) গমন করিলেন ।।৩০।।
গুরুর আশ্রমে অতএব গমন করে তিনি বশিষ্ঠকে প্রণাম করিলেন। তাঁর বৃত্তান্ত নিবেদন করে তাঁর নিকট পুরুষত্ব প্রাপ্ত করার অভিপ্রায় প্রকট করে তাঁর শরণাপন্ন হলেন ।।৩১।।
সমস্ত বৃত্তান্ত জ্ঞাত হওয়ার পর বশিষ্ঠ পূর্বের মতন (পূর্বে যেমন ভগবান শিবের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তেমন) কৈলাসে গমন করিলেন। (তিনি) পরম শম্ভুকে ভক্তিদ্বারা তুষ্ট করিবার জন্য পূজায় লীন হলেন ।।৩২।।
বশিষ্ঠ মুনি বললেন -
হে শিব, হে শঙ্কর, হে কপর্দিন আপনাকে প্রণাম। হে চন্দ্রমৌলী, আপনার অর্ধ অঙ্গে গিরিজা বিরাজ করে, আপনাকে প্রণাম ।।৩৩।।
হে মৃণ্ড, হে সুখদাতা, হে কৈলাসবাসী আপনাকে প্রণাম। হে নীলকণ্ঠ, আপনি ভক্তদের ভুক্তিমুক্তি প্রদান করেন, আপনাকে প্রণাম ।।৩৪।।
হে শিব, হে শিবরূপ, হে প্রপন্নভয়হারী আপনাকে প্রণাম। হে বৃষভবাহ, হে শরণ্য, হে পরাত্মা, আপনাকে প্রণাম ।।৩৫।।
আপনি সর্গ, স্থিতি ও লয়কালে ব্রহ্ম, বিষ্ণু এবং ঈশরূপ ধারণ করেন, আপনাকে প্রণাম। হে দেবাধিদেব, হে বরদ, হে পুরারি, আপনাকে প্রণাম ।।৩৬।।
হে যজ্ঞরূপ, আপনি যাচকের ফলদাতা, আপনাকে প্রণাম। হে গঙ্গাধর, সূর্য, ইন্দু তথা শিখা আপনার নেত্র, আপনাকে প্রণাম ।।৩৭।।
এই প্রকার স্তুতি করাতে জগৎপতি ভগবানের বৃষারূঢ়রূপে অম্বিকাসহ প্রাদুর্ভাব হল। তাঁর প্রভা কোটি সূর্য সম, তিনি রজতাচল সংকাশ (রজতাচল সদৃশ তাঁর স্বচ্ছ কান্তি), ত্রিলোচন, চন্দ্রশেখর। তিনি মুনিশ্রেষ্ঠর প্রণতিতে পরিতুষ্ট হয়ে বললেন ।।৩৮-৩৯।।
শ্রীভগবান বললেন -
হে বিপ্রর্ষি! আপনার মনে যা আছে সেই বর চান। ভগবানের এমন উক্তির পর বশিষ্ঠ মুনি তাঁকে প্রণাম করে অভ্যর্থনা করে ইলার পুরুষত্ব যাচনা করিলেন ।।৪০।।
অতএব ভগবান মুনিশ্রেষ্ঠকে প্রসন্ন হয়ে কহিলেন :- (ইলা) মাসে পুরুষ হবে তথা মাসে নারী হবে ।।৪১।।
এইভাবে শম্ভুর থেকে বর প্রাপ্ত করে হর্ষিত হয়ে (তিনি) বরদানোন্মুখী দেবী জগদম্বিকা মহেশ্বরীকে প্রণাম করিলেন ।।৪২।।
কোটি চন্দ্রকলা সম তাঁর কান্তি, তিনি সুস্মিতা। ইলার জন্য চিরপুরুষত্ব কামনা করে তিনি(বশিষ্ঠ) তাঁকে ভক্তিদ্বারা তুষ্ট করার জন্য পরিপূজন করিলেন ।।৪৩।।
জয় দেবী মহাদেবী ভক্তানুগ্রহকারিণি, জয় সর্বসুরারাধ্যা, জয় অনন্তগুণালয় ।।৪৪।।
নমো নমো দেবেশি, শরণাগতবৎসলা। জয় দুর্গে, দুঃখহন্ত্রি, দুষ্টদৈত্যসংহারিণী ।।৪৫।।
নমো ভক্তিগম্যে (যার নিকট ভক্তি দ্বারা গমন করা যায়), মহামায়ে, জগদম্বিকে। আপনার পদঅম্বুজ সংসার সাগর পার করার তরী ।।৪৬।।
ব্রহ্মা আদি জ্ঞানিও (আদি জ্ঞানি দেবগণও) আপনার পদঅম্বুজের সেবার দ্বারাই বিশ্বের সর্গস্থিতিলয়ের প্রভুত্ব লাভ করেন ।।৪৭।।
হে দেবেশি! আপনি চতুর্বর্গপ্রদায়িনি, আপনি প্রসন্না হওন। হে দেবী! আপনার স্তুতি করার ক্ষমতা কার আছে? আমি কেবল প্রণাম করছি ।।৪৮।।
এই স্তুতি করাতে ভগবতী দুর্গা যিনি পরা নারায়ণী, বশিষ্ঠ মুনির ভক্তিতে তৎক্ষণাৎ প্রসন্না হলেন ।।৪৯।।
তখন মহাদেবী, যিনি ভক্তের প্রতিকূল অবস্থাকে হরণ করেন, মুনিকে কহিলেন - সুদ্যুম্নের ভবনে গমন করে ভক্তিভরে আমার অর্চনা কর ।।৫০।।
হে দ্বিজোত্তম! তুমি সুদ্যুম্নকে প্রীতিপুর্বক নয় দিনে দেবী ভাগবত নামের আমার প্রিয় পুরাণ শুনাও ।।৫১।।
তাঁহা শ্রবণ করিলেই সতত সে পুরুষ হবে। এই উক্তি করে শিবেশ্বরী অন্তর্ধ্যান হয়ে গমন করিলেন ।।৫২।।
বশিষ্ঠ সেই দিশাকে নমন করে নিজ আশ্রমে সমাগম করিলেন। সুদ্যুম্নকে ডেকে দেবীর আরাধনা করার আদেশ দিলেন ।।৫৩।।
আশ্বিনের শুক্লপক্ষে নবরাত্র বিধিতে জগদম্বিকার পূজা করে ভূপতিকে (সুদ্যুম্নকে) (দেবী ভাগবত পুরাণ) শোনানো প্রারম্ভ করিলেন ।।৫৪।।
সুদ্যুম্নও ভক্তিভরে শ্রীমদ্ভাগবতামৃত শ্রবণ করিলেন। (তারপর) গুরুকে পূজা করে তথা প্রণাম করে চিরপুরুষত্ব লাভ করিলেন ।।৫৫।।
মহর্ষি বশিষ্ঠ (সুদ্যুম্নকে) রাজ্যাসনে অভিষিক্ত করিলেন। প্রজাকে প্রসন্ন করে তিনি ভুবনে ধর্ম দ্বারা শাসন করিলেন ।।৫৬।।
তিনি বিবিধ বরদক্ষিণাসম্পূর্ণ যজ্ঞ করিলেন। তারপর পুত্রগণের উপর রাজ্যের নির্দেশনা দিয়ে তিনি দেবীর লোককে প্রাপ্ত হলেন ।।৫৭।।
বিপ্রগণ, সেই ইতিহাসের কথা শেষ হল। মনুষ্য যদি ভক্তিসহ দেবীর প্রসাদ রূপী এই পরমামৃত পঠন বা শ্রবণ করে সে ইহলোকে সকল কামনা প্রাপ্ত হয় তথা অন্তে দেবীর লোকে গমন করে ।।৫৮।।
ইতি শ্রীস্কন্দপুরাণের মানসখণ্ডে শ্রীমদ্দেবীভাগবতমাহাত্যের তৃতীয়োধ্যায়

4 comments:

  1. Dada plz amai Bhagwat puran er pdf manage moka dita parben...?
    Plz plz plz.....

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. দয়া করে দেবীভাগবত পুরাণের pdf দিন। খুবই urgent প্রয়োজন আমার।

    ReplyDelete